পান্তাভাত আর কচু শাক খেয়ে কৈলাস রওনা উমার! সিঁদুর খেলায় মাতলেন টাকির জমিদার বাড়ির সদস্যরা
পান্তাভাত আর কচু শাক খেয়ে কৈলাস রওনা উমার! সিঁদুর খেলায় মাতলেন টাকির জমিদার বাড়ির সদস্যরা
বাড়ির লক্ষ্মীর ঝাঁপিটা শেষ বারের মতো মায়ের পায়ে ছুঁইয়ে, আজও পান্তাভাত আর কচু শাক খেয়ে উমা কৈলাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন টাকি পূবেরবাড়ি থেকে। আজও প্রথা মেনে এই রীতি চলে আসছে উত্তর ২৪ পরগনার টাকি জমিদার বাড়িতে। প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও পুবের বাড়ির ঠাকুরদালানে সিঁদুর খেলায় মাতলেন মহিলারা।
মাস্ক পড়ে কি সিঁদুর খেলা সম্ভব ? তাই কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণকারীরা। তবে এ বছর করোণা অতিমারির কারণে মাস্ক পড়ে সিঁদুর খেলতে হয়েছে তাদের। এবছর কিছুটা জৌলুস হারিয়েছে পুবের বাড়ির পুজোয়। রাখা হয়েছে মাস্ক, স্যানিটাইজার, সামাজিক দূরত্ব। বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি ঠাকুরদালানে দূর থেকেই সিঁদুর খেলা দেখতে হয়েছে তাদের।
নবমীর নিশি'র কাছে আর্জি ছিল তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে না যাওয়ার.. তবে প্রতিবারের মতোই সেই রাত পোহাতেই বিসর্জনের বোল বাংলার সর্বত্র। এদিন, সকাল থেকেই প্রথা মেনে উমার বিদায়ের প্রস্তুতিতে মাতে টাকির জমিদারবাড়ি। প্রাচীন রীতি মেনে আজও সাবেকিয়ানায় যেমন পুজো হয় ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী উত্তর ২৪ পরগনার ছোট্ট শহর টাকির জমিদার বাড়িতে। তেমনই এখানে উমার বিদায় দেওয়াও হয় প্রাচীন রীতি মেনে। সিঁদুর খেলা, উলুধ্বনি, মিষ্টিমুখে রাজকীয় আড়ম্বরে ঘরের মেয়ে উমাকে এদিন বিদায় জানিয়েছেন টাকি রাজবাড়ির সদস্যরা। এখান থেকেই উত্তর ২৪ পরগনা তথা বসিরহাটে শুরু হয় মায়ের বিদায় পর্ব।
স্থানীয়রা বলছেন, 'কথিত আছে টাকির জমিদারদের লাঠি, আর গোবরডাঙার জমিদারদের হাতি...' আজ সে সবই ইতিহাস। কালের নিয়মে এখন জমিদারি আর নেই। তবু পলেস্তরা খসা দুর্গাদালানেই নিয়ম করে পুজো করে আসছেন বংশের বর্তমান প্রজন্ম। বর্তমানে এই জমিদার বাড়ির কোন সদস্য এখন আর এখানে থাকেন না। তবে পুজো ক'টাদিন সদলবলে সকলেই হাজির হন এখানে।
টাকির পুবের বাড়ি নামে পরিচিত, এই বাড়িতেই প্রায় তিনশো বছরেরও আগে থেকে ধারাবাহিক ভাবে হয়ে মায়ের বিসর্জন আসছে সূর্য সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মেনে। ইছামতী নদীর ধারে টাকির এই পোড়ো জমিদার বাড়ি আজও ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে আসছে। জমিদারদের ঘাটে আজও হয় মায়ের বিসর্জন।
আনুমানিক ৩৫১ বছর আগে এই বাড়িতে পুজো শুরু করেন জমিদার হরিনারায়ণ ঘোষ। অবিভক্ত বাংলার খুলনা জেলায় জমিদারি ছিল ঘোষদের। ঘোষেদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে জানা যায়, 'পূর্বপুরুষের রীতি-নীতি মেনে এখনও পুজো হয়। একটা সময়ে এখানের মহিষ বলি ছিল বিখ্যাত। তবে এখন আর পুজোয় মহিষ বলি হয় না।
আখ ও চালকুমড়ো বলি দেওয়ার রীতি চলছে।' বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও পুজোর ক'টা দিন সকলেই জড়ো হন টাকির বাড়িতে। এখনও দশমীর দিনে ধুমধাম করে বাড়ির মেয়েরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। দশমীতে নিয়ম নির্ঘণ্ট মেনে ২৪ জন বেয়ারাদের কাঁধে চেপে ঠাকুরকে ইছামতীর তীরে নিয়ে যাওয়া হয়। নৌকায় ইছামতী বক্ষে ঠাকুর ঘোরানো হয়। এর পর জমিদার বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন হয় ঘোষ বাবুর ঘাটে।
কলকাতা থেকে জেলা - বাংলার দুর্গাপুজোর নানা মুহূর্তের ছবি দেখুন একনজরে