খুব ঘন ঘন হচ্ছে ঝড়! এ কীসের ইঙ্গিত, জানেন কি বলছে খড়গপুর আইআইটি
গবেষণা লাগে না, সাদা চোখেই ধরা পড়ছে এবছর ঝড়টা যেন একটু বেশিই হচ্ছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য এবছর মার্চ থেকে এখনও অবধি ২৯টি বড় মাপের ঝড় কলকাতা ও তার পড়শি জেলাগুলোতে আছড়ে পড়েছে। এই ঘন ঘন ঝড় হওয়া বিজ্ঞানীদের চিন্তা বাড়িয়েছে। ভাবতে বাধ্য করছে, তবে কী এটা কোনও বড়সড় জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত?

এজন্য কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের গত ১০০ বছরের জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করবেন খড়গপুর আইআইটির গবেষকরা। আইআইটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর তাদের ভূবিজ্ঞানের শাখা সেন্টার ফর ওশান, রিভার, অ্যাটমোস্ফিয়ার অ্যান্ড ল্যান্ড সাইন্স (কোরাল)-কে গবেষণার দায়িত্ব দিয়েছে। ঘন ঘন ঝড় হওয়ার কারণ খুঁজতে তারা গত ১০০ বছরের বাংলার জলবায়ুর পরিবর্তন নিরীক্ষা করবেন।
কোরালের প্রধান এএনভি সত্যনারায়ণ বলেন, 'এটা সত্যিই উদ্বেগজনক। ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে কালবৈশাখী-ঝড়-বৃষ্টির পরিমাণটা লক্ষ্যণীয় ভাবে হ্রাস পেয়েছিল। বাংলায় হাতে গোনা কয়েকটি বড় মাপের ঝড় হয়েছিল। তার পর থেকেই সংখ্যাটা বেড়েছে। তবে এই বছরটি ঝড়ের সংখ্যা চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
কিন্তু এর কারণ কী? সত্যনারায়ণ বাবু জানান, 'কালবৈশাখী সৃষ্টি হয় আবহাওয়ার দুটি 'ম্যাট্রিক্স'-এর কারণে - পরিচলন উপলভ্য সম্ভাব্য শক্তি (সিএপিই) এবং পরিচলন প্রতিবন্ধক শক্তি (সিআইএন)। যখন সিএপিই বেশি থাকে আর সিআইএন-এর পরিমাণ কম হয়, তখনই ঝড় হয়। বাংলায় এই মুহূর্তে সিএপিই-র পরিমাণ অত্যন্ত বেশি, পাশাপাশি সিআইএন-এর পরিমাণ খুব কম। তাইই এত ঘন ঘন কালবৈশাখী হচ্ছে।' আর এই সিএপিই ও সিআইএন-এর তারতম্যটা বাড়ছে দূষণ ও গ্রীণহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য। তাঁর মতে এর ফলে অসমভাবে তাপ পকেটে তৈরি হচ্ছে। তাঁরা মূলত এই সিএপিই ও সিআইএন-এর তথ্যই খতিয়ে দেখবেন।
কোরালের গবেষকরা জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আকাশে পরিচলন মেঘ তৈরি হওয়াটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু অস্বাভাবিক যেটা, তা হল এবছর কোনও কোনও দিন দেখা গেছে এই পরিচলন মেঘের উচ্চতা ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি! এরজন্যই এবছর ঝড়ের প্রভাব একটা বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে পড়ছে।
আবহাওয়ার গ্লোবাল মডেলগুলির থেকেও তাঁরা তথ্য সংগ্রহ করবেন। সব মিলিয়ে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সম্ভাব্য আবহাওয়ার একটি মডেল তাঁরা তৈরি করবেন। ২০১৮ ফুরনোর আগেই তা তৈরি হয়ে যাবে বলে কোরালের আশা। সত্যনারায়ণ বাবুর দাবি তাঁদের গবেষণা শুধু যে ঝড়ের হাল হদিস দেবে তাই না, এরফলে পশ্চিমবঙ্গে দিন দিন শীতকাল কীভাবে ছোট হচ্ছে, পাশাপাশি বাড়ছে গরমের দিন, সেটাও জানা যাবে।