প্রতারিত মনে হচ্ছে নিজেদের, আক্ষেপ কুমারটুলির মৃৎশিল্পীদের
কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতির মুখপাত্র বাবু পালের কথায়, "ভোট এলেই রাজনৈতিক দলের নেতারা ঘন ঘন কুমোর পাড়ায় যাতায়াত শুরু করেন। কুমোরটুলির জায়গা সম্প্রসারণ হবে, প্রত্যেকের ভাগের মূর্তি তৈরির ঘর সারাই করে ঝাঁ চকচকে করে দেওয়া হবে, এই একচিলতে জায়গায় কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে বলে, একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। ব্যস ওইটুকুই। নির্বাচন শেষ হলে নেতা দাদাদের টিকিটিও দেখা যায় না। নিজেদের প্রতারিত মনে হচ্ছে।"
প্রত্যেক মৃৎশিল্পীর ভাগের জায়গা আলাদা করা। কিন্তু স্যাদা গলির ভিতর একচিলতে জায়গার মধ্যেই চলে মূর্তি গড়ার কাজ। বৃষ্টি হলে জলে থৈ থৈ করে কাজের জায়গা। অন্ধকার ঘুপচি ঘরে মশা-পোকামাকড়ের কোনও কমতি নেই। দূর্গাপুজোর সময় জায়গার অভাবে একসঙ্গে বেশি বায়নাও করতে পারেন না মৃৎশিল্পীরা। আর এ সমস্যা নতুন কিছু না। বাম আমল থেকেই এই দুর্দশার মধ্যেই পেটের দায়ে কাজ চালাচ্ছেন শিল্পীরা।
'ভোট এলেই প্রতিশ্রুতির বন্যা নেতাদের, ভোট শেষ হলেই কুমোরটুলি থেকে বেপাত্তা তারা'
মৃৎশিল্পীদের একটাই দাবি, মূর্তি তৈরির জন্য যোগ্য পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া হোক। সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রের খবর অনুযায়ী, বাবু পাল জানিয়েছেন, যদি মূর্তি গড়ার ঘরগুলির উচ্চতা বাড়িয়ে ১৮ ফুট করে দেওয়া হয়, তাহলেই অনেকটা সুরাহা হয়। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ উচ্চতাবিশিষ্ট মূর্তি গড়তে পারবেন মৃৎশিল্পীরা। মূর্তি গড়ার পর শুকোনের সময় নানা দুর্ঘটনাও প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
মৃতশিল্পীদের একাংশের দাবি, কুমোরটুলির মৃতশিল্পীরা কখনওই রাজনৈতিক নেতাদের ভোটব্যাঙ্ক বলে বিবেচিত হয় না। সেই কারণেই কোনও রাজনৈতিক দলই তাদের পরোয়া করেননা। বাবু পাল জানিয়েছেন, বর্তমানে কুমোরটুলিতে প্রায় ৬০০ জন শিল্পী রয়েছেন। বাম আমলের বিদায়ী বছরে তাও এই কুমোরটুলির এই পুরনো ঘরগুলিকে সারাইয়ের বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। বাগবাজারের কাছেই একটি অস্থায়ী ঠিকানাও দেওয়া হয়েছিল শিল্পীদের।
সারাইয়ের কাজ কিছুদিনের ব্যাপার ভেবে অনেকে ওই অস্থায়ী ঠিকানায় গিয়েওছিলেন। কিন্তু সারাইয়ের কাজ এত ধীর গতিতে হতে থাকল যে তা বলার নয়। নতুন ঠিকানা সাধারণ মানুষের অজানা হওয়ায় বায়নাদার হাতছাড়া হতে লাগল। এদিকে ততদিনে সারাইয়ের জন্য মূর্তি গড়ার ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে ফেরারও সুযোগ ছিল না তাদের। এনিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে একাঝিকবার চিঠি লেখা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী দফতর থেকে কোনও জবাব আসেনি বলে অভিযোগ বাবু পালের।