পঞ্চায়েতেই কি রাজ্যে আরও এক পরিবর্তন! কি বলছে আইবি-র রিপোর্ট
বামেরা ৩৪ বছরের শাসন ক্ষমতা থেকে চ্য়ুত হওয়ার লগ্নে দেখেছিল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ও নেতাই। বলতে গেলে নেতাই ছিল বামেদের শাসন অবসানের সিলমোহর। খালি জনতা জনার্দনের রায়ের অপেক্ষা ছিল।
বামেরা ৩৪ বছরের শাসন ক্ষমতা থেকে চ্য়ুত হওয়ার লগ্নে দেখেছিল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ও নেতাই। বলতে গেলে নেতাই ছিল বামেদের শাসন অবসানের সিলমোহর। খালি জনতা জনার্দনের রায়ের অপেক্ষা ছিল। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেই রায় দিয়ে দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গবাসী। ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকার। প্রায় ৮ বছর রাজ্যের শাসযন্ত্রে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকার। গত বিধানসভা নির্বাচনেও বিপুল আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু, এবার কি আরও এক পরিবর্তনের সময় এসেছে? পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নে হিংসা এবং ভোট নিয়ে জটিলতায় এমনই প্রশ্ন উঠে আসছে। এর মধ্যে নবান্নে জমা পড়েছে আইবি-র রিপোর্ট। আর তাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
[আরও পড়ুন: মমতা 'সুর্পণখা'! অশালীন মন্তব্যে ফের শিরোনামে বিজেপি নেতা, মোদীকেও বুড়ো আঙুল]
ফি ভোটেই রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ নিজেদের মতো করে একটি সমীক্ষা করে। আর সেই রিপোর্ট জমা পড়ে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্থানে থাকা মানুষটির কাছে। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ইতিমধ্যে নবান্নে আইবি-র দফতরে জমা পড়েছে একাধিক রিপোর্ট। আর এই রিপোর্টে যে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে তা চিন্তায় ফেলার মতো।
আইবি-র এই গোপন রিপোর্টগুলিতে বলা হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেনজির সন্ত্রাস সাধারণ জনমানসে প্রবলভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তারমধ্যে পুলিশ প্রতিটি ঘটনায় যে ভাবে নিস্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে তাও চাক্ষুষ করছে রাজ্যের মানুষ। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যে পুলিশের শান্তি বজায় রাখা দরকার ছিল বাহিনী সেই কাজ করে দেখাতে পারেনি। এতে পুলিশের উপরে আস্থা কমেছে মানুষের।
[আরও পড়ুন:কংগ্রেস-সিপিএম মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে চায়! দু-দলের প্রস্তাবে জোর জল্পনা ]
রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পছন্দ করে। কিন্তু, তাঁকে ঘিরে থাকা নেতা-কর্মীদের উপরে আর বিশ্বাস রাখতে পারেছে না মানুষ। কারণ, সিপিএম আমলে যেমন দলের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে গায়ে-গঞ্জের নেতারা দুর্নীতির শিরোমণি হয়ে বসেছিলেন তৃণমূল নেতা-নেত্রী ও কর্মীদের মধ্যেও সেই লক্ষণ দেখা দিয়েছে। অকারণে সাধারণ মানুষকে নিপীড়নের প্রায়শই ঘটনা ঘটছে গ্রামে-গঞ্জে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙর ১ নম্বর ব্লকের শাঁকসহর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান স্বপ্না নস্কর একাধিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত থেকেও জেলা পরিষদের সদস্য হিসাবে ভোটে দাঁড়ানোর টিকিট পেয়ে যান। স্বপ্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ এতটাই গুরুতর ছিল যে খোদ প্রশাসনিক তদন্ত রিপোর্টেও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের অভিযোগে স্বপ্নার গ্রেফতার হওয়াটা উচিত ছিল। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে তা ঘটেনি। সুতরাং ভাঙর ১ নম্বর ব্লকের সাধারণ মানুষের মনে তৃণমূলের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজ্য়ের সর্বত্রই এমনই ছবির প্রতিফলন।
আইবি-র গোপন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যে ভাবে শাসক দল বিরোধী শূন্য করার নীতি নিয়ে পঞ্চায়েতের মনোনয়নে নিয়ন্ত্রহীণ সন্ত্রাসের ছবি তুলে ধরেছে তাতে সমাজের একটা অংশে বিজেপি-র প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়েছে। কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, নদিয়া, হুগলি, হাওড়ার একটা অংশ, বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম-এর সমাজের একটা অংশ প্রবলভাবে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে শাসক দলের নিয়ন্ত্রণহীন রাজনৈতিক সন্ত্রাসকে যদি প্রতিরোধ না করা যায় এবং পুলিশকে তাঁর কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়া হয় তাহলে বিজেপি আরও বেশি করে ভোটব্যাঙ্কের দখল নিয়ে নিতে পারে। কংগ্রেস ও সিপিএম-এর প্রতি মানুষের যে আস্তা নেই তাও এই রিপোর্টগুলিতে উল্লেখ করা হয়েছে।