'রিনাকে পুঁতে রেখে এসেছি মেঝেতে', স্ত্রী খুনের খবর দিল স্বামী
উদয়ন কাণ্ডের ছায়া দুর্গাপুরের উত্তরপল্লিতে। স্ত্রীর দেহ পুঁতে রাতারাতি মেঝেতে মার্বেল বসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে।
বাঁকুড়ার উদয়নের মতো বর্ধমানের হায়দর নিজের স্ত্রীকে খুন করে মেঝেতে পুঁতে দিল। তারপর সেই জায়গায় মার্বেলও বসিয়ে দেয় রাতারাতি। আর এই ঘটনার দু'দিন পর 'ফেরার' স্বামী হায়দর ফোন করে নিজেই জানাল চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের কথা।
পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের বেনাচিতি উত্তরপল্লিতে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে শুক্রবার সকালে। পুলিশ এসে মেঝে থেকে মার্বেল তুলে মৃতার দেহ উদ্ধার করে। এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয় বাঁকুড়ায় উদয়ন-কাণ্ডের কথা।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম রিনা বেগম (৩২)। তিনি স্বামীর সঙ্গে উত্তরপল্লির ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। গত দু'দিন ধরে স্বামী-স্ত্রীকে দেখতে না পেয়ে বাড়ির মালিক ও পড়শিরা ভেবেছিলেন হায়দার স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার হঠাৎ একটি ফোন সবকিছু ওলটপালট করে দেয়। বাড়ির মালিক তরুণ রায় সেই ফোন পেয়ে আঁতকে ওঠেন। অপর প্রান্ত থেকে হায়দর জানায়, সে তার স্ত্রী রিনাকে খুন করে বাড়ির মেঝেতে পুঁতে দিয়েছে।
রাতেই দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ জানান তরুণবাবু। শুক্রবার সকালে পুলিশ এসে বাড়ির মেঝে থেকে উদ্ধার করে রিনার দেহ। তাঁর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্ত্রীকে সন্দেহ করত হায়দার। অন্য কোনও পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে- এই সন্দেহের বশেই স্ত্রীকে খুন করে সে। তারপর দেহ লোপাট করতে নিজের বাড়ির মেঝে খুঁড়ে স্ত্রীর দেহ পুঁতে দেয়। এমনকী রাতারাতি মেঝেতে মার্বেলও বসিয়ে ফেলে সে। সব 'কাজ' গুছিয়ে চম্পট দেয় বাড়ি থেকে।
কারও কোনও সন্দেহই হয়নি। স্বামী-স্ত্রী বাড়িতে নেই, কোথাও গিয়েছেন এমনটাই মনে করেছিল পড়শিরা। বাড়ির মালিক জানান, প্রায় ১৩ বছর এই বাড়িতে ভাড়া রয়েছে হায়দার ও তার স্ত্রী রিনা। হায়দার বীরভূমের নানুরের বাসিন্দা। রাজমিস্ত্রির কাজ করে সে। কাজের জন্য প্রায়ই সে বাইরে বাইরে যেত।
পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। খুনের কারণও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিছকে সন্দেহের বশেই খুন নাকি, এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেনই বা সে খুন করে দেহ লোপাট করে পালিয়ে যাওয়ার পরও নিজেই ফোন করে অপরাধ স্বীকার করল? পুলিশ মনে করছে এর মধ্যেও কোনও গূঢ় রহস্য থাকতে পারে। নিছকই অনুশোচনা, নাকি অন্য কোনও কারণ লুকিয়ে রয়েছে এর মধ্যে? তদন্তকারীরা জানতে তৎপর হয়েছেন।