সচেতনতাই একমাত্র পথ, করোনা সংক্রমণ রুখতে কী পদক্ষেপ করছে রাজ্য
সচেতনতাই একমাত্র পথ, করোনা সংক্রমণ রুখতে কী পদক্ষেপ করছে রাজ্য
সব ঠিক ছিল। হঠাৎ করে ২৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে সরকারের। দেশ জুড়ে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সেই সূত্র ধরেও সতর্ক হয়েছে রাজ্যও। সর্বস্তরে সাবধানতা নেওয়া হচ্ছে। বাড়তি সতর্ক কলকাতা বিমানবন্দর। রাস্তাঘাটে মানুষকে সচেতন করতে পড়েছে পোস্টার হোর্ডিং। রাজ্যের হাসপাতালগুলিতেও তৈরি করা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড।
হাসপাতালে বাড়তি ব্যবস্থা
রাজ্যে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় তৎপর স্বাস্থ্য দফতর। প্রথম থেকেই রাজ্যের হাসপাতাল গুলিতে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। বাঙ্গুর, পিজি সহ রাজ্যের রাজ্যের ১৮টি হাসপাতালে মোট ৯২টি আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। বিমান বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর সন্দেহ হলেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বাঙ্গুর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। প্রায় ৩১ জন ভর্তি রয়েছেন আইসোলেশন ওয়ার্ডে। বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ১৩৬। রাজ্যবাসীকে সাহায্যের জন্য খোলা হয়েছে হেল্পলাইন। ০৩৩-২৩৪১২৬০০ এবং ১৮০০৩১৩৪৪৪২২২ এই দুটি নম্বরে ফোন করলে করোনাভাইরাস সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হচ্ছে একই সঙ্গে সচেতনতা মূলক পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। বেলেঘাটা আইডি, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন, এসএসকেএম এবং উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঁচ জন প্রতিনিধিকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। সব হাসপাতালের সুপারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দর ও সীমান্তে বাড়তি নজর
রাজ্যের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নেতাজী সুভাষ বিমানবন্দরে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সেখানে আসা সব আন্তর্জাতিক বিমানের যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। পেট্রাপোল, বেনাপোল সীমান্ত, উত্তরবঙ্গে নেপাল, ভুটান সীমান্তেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির খোলা হয়েছে। মিরিখ, জয়গাঁকে বাড়তি চেকিং চলছে। বিএসএফ এবং এসএসবি জওয়ানদেরও বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। নেপাল এবং ভুটান সীমান্তের গ্রামের পঞ্চায়েতগুলিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নেপাল বাংলাদেশ থেকে আসা প্রায় ৯০ হাজার যাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে সীমান্তে। কলকাতা ও বাগডোগরা বিমানবন্দরে ৮৩ হাজার যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। যদিও রাজ্যে এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি।
কলকাতায় চায়না টাউনে বিশেষ প্রচার
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই কলকাতার চায়না টাউনে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দাদের করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতন করা হয়েছে। সেখানকার কোনও বাসিন্দার পরিজন বিদেশ থেকে এলে সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাঁচি-কাশি-সর্দি হলে মুখে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্কুল কলেজে প্রচার
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে স্কুল কলেজেও সচেতন করা হচ্ছে। স্কুল শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা জাির করে স্কুলে স্কুলে সচেতনতা কর্মসূচি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনৈ ভাইরাস সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিনা ভবনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। সেখানে ইউনান থেকে প্রতিনিধিদের আসার কথা ছিল।
বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা
কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দরেও নজরদারি চালানো হচ্ছে। পণ্য পরিবহণের কারণে কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দরে একাধিক দেশের জাহাজ আসে। তাঁদের কারোর শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থাকতে পারে। সেকারণে বন্দরের শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত শারীরিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। এবং তাঁদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যদিও চিন থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও জাহাজ কলকাতা বা হলদিয়া বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয়নি।
কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয়
দিল্লিতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পড়েই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে রাজধানীতে। দিল্লির সব প্রাইমারি স্কুল ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।