মমতার নিরাপত্তার এমন হাল! হেমতাবাদের ঘটনা দেখিয়ে দিল কতটা অসুরক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী
রাবেয়া ও রাকেয়া মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার একদম ডি জোনে ঢুকে পড়েছিলেন। ডি জোন সভা-সমিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার একদম কোর-সার্কেল।
প্রশ্নের মুখে পড়ল মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ২২ ফেব্রুয়ারি উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে যা হল তাত বেআব্রু হয়ে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে বেস্টন করে থাকা নিরাপত্তা বলয়ের ফস্কা-গেরো। এদিন যেভাবে রাবেয়া ও রাকেয়া নামে দুই বোন মঞ্চের কাছে পৌঁছে গেলেন তাতে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
[আরও পড়ুন: দৌড়ে মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পা-য়ে আছাড় যুবতীর, হেমতাবাদের ঘটনায় চাঞ্চল্য, দেখুন ভিডিও ]
রাবেয়া ও রাকেয়া মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার একদম ডি জোনে ঢুকে পড়েছিলেন। ডি জোন সভা-সমিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার একদম কোর-সার্কেল। সাধারণত মুখ্যমন্ত্রীর যে কোনও সভা সমিতিতেই মঞ্চের সামনে দুটো করে ব্যারিকেড থাকে। দর্শকদের জন্য একটি ব্যারিকেড দেওয়া হয়। এরপর খানিকটা ফাঁকা জায়গা ছেড়ে ফের একটি ব্যারিকেড দেওয়া হয়। এই ফাঁকা স্থানে সাধারণত সংবাদমাধ্যমকে দাঁড়াতে বা বসতে দেওয়া হয়। সুতরাং, রাবেয়া ও রাকেয়াকে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে পৌঁছতে দুটো ব্যারিকেড টপকাতে হয়েছে। রাবেয়া ও রাকেয়ারা যে স্থানে বসে ছিলেন সেখান থেকে মঞ্চের দূর্তত্ব কয়েক শ'গজ। সুতরাং, নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনিতে কারোর পক্ষে দু'দুটো ব্য়ারিকেড টপকে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে পৌঁছানো সহজ নয়।
মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে সারাক্ষণই ১২ থেকে ১৫ জনের একটি নিরাপত্তা রক্ষীদের বলয় থাকে। এরমধ্যে যেমন পুরুষরা নিরাপত্তা রক্ষীরা থাকেন তেমনি মহিলারাও থাকেন। এঁরা সকলেই সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। এমনকী, এঁদের সকলের কাছেই থাকে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। এছাড়াও থাকে মেটাল ডিটেক্টর। মুখ্যমন্ত্রীর এই কোর নিরাপত্তা বলয়ের রক্ষীদের পরণে থাকে একই রকমের পোশাক।
জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রীর সভা থাকলে তার প্রাথমিক নিরাপত্তার ভার থাকে জেলা পুলিশের উপরে। সভাস্থলের কোথায় গাড়ি দাঁড়াবে, কোন দিকে ভিআইপি-দের গাড়ি থাকবে, সভাস্থলের আশপাশে ট্রাফিক ব্যবস্থা কেমন হবে থেকে শুরু করে দর্শকরা কীভাবে সভাস্থলে আসবে এবং সভাস্থল থেকে বের হবে-এই বিষয়গুলি দেখাশোনার ভার থাকে জেলা পুলিশের উপরে। এমনকী সভাস্থলে শান্তি বজায় রাখা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভারও থাকে তাঁদের কাঁধে। সভাস্থলের যেখানে প্রথম ব্যারিকেড থাকে তার সামনে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে স্পেশাল নিরাপত্তারক্ষীদের দল। এঁদের মধ্যে জেলা গোয়েন্দা বিভাগের লোকজনও থাকেন।
মঞ্চ এবং তাঁর ৫০ গজের রেডিয়াসকে ডি-জোন বলে চিহ্নিত করা হয়। এই ডি-জোনের নিরাপত্তা মারাত্মকরকমের কঠোর থাকে। এই ডি-জোনে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীদের কাছে অত্য়াধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র এবং মেটাল ডিটেক্টর। সভার আগের দিন তিন দফায় এই ডি-জোনকে মেটাল ডিটেক্টর থেকে শুরু করে মাইন ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। কোনও ধরনের বিস্ফোরক এই ডি-জোনে আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে আনা হয় স্নিফার ডগও।
সভার দিন এই ডি-জোনেই কম করে ৪০ জনের একটি নিরাপত্তা বাহিনী থাকে। এরমধ্যে একদম মঞ্চে ও মঞ্চের গা-ঘেঁষে থাকেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশেষ প্রশিক্ষিত ১২ থেকে ১৫ জনের একটি দল। এই ১২ থেকে ১৫ জনের দলের মধ্যে ২ জন আবার মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই থাকেন। এঁদের কাজ হল কেউ যদি মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও উপহার দেন তাহলে তা পরীক্ষা করা এবং মুখ্যমন্ত্রীর কিছু দরকার হলে তা হাতের কাছে এগিয়ে দেওয়া।
এহেন ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তাকে ভেদ করেই ২২ তারিখে হেমতাবাদে সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে উঠে পড়েছিলেন রাবেয়া। সভায় যোগ দেওয়া বহু তৃণমূল নেতা-কর্মী এভাবে দুই বোনের মঞ্চে উঠে পড়ার তীব্র সমালোচনা করেন। দুই নিরীহ বোনের জায়গায় কোনও আততায়ী মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চলে গেলে কী হত তা ভেবেই এঁরা আতঙ্কিত।