
ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে ঘর ছাড়াদের ফেরানো নিশ্চিত করবে সরকার, পদক্ষেপ করবে পুলিশও! নির্দেশ হাইকোর্টের
ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে পদক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট। সন্ত্রাস আতঙ্কে ভোটের পর থেকেই ঘর ছাড়া বহু বিজেপি কর্মী-সমর্থক। এমনকি ভিন রাজ্যে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে অনেককে। এই অবস্থায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় বিজেপি।

অভিযোগ, এই বিষয়ে রাজ্য সরকার কিংবা পুলিশ প্রশাসন কিছুই করছে না। আর তা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ হাইকোর্টের। তদন্তের শুনানিতে ঘর ছাড়াতে ঘরে ফেরাতে পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত জানায়, এই মুহূর্তে ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোই প্রাথমিক লক্ষ্য।
তাঁদের ঘরে ফেরা আগে নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেও। ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় শুক্রবার এমনটাই জানাল কলকাতা হাই কোর্ট। এমনকি সেই লক্ষ্যে ঘরছাড়াদের ঘরে ফিরতে লিগ্যাল সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে ইমেলের মাধ্যমেও অভিযোগ জানাতে বলেছে আদালত।
ভোট পরবর্তীর মামলার শুনানি হয় স্পেশাল বেঞ্চে। হাই কোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ গঠন হয়। প্রাথমিক ভাবে বিচারপতিরা মনে করেন, স্বাধীন ভাবে সবার বাঁচার অধিকার রয়েছে। সন্ত্রাসের কারণে কারোর নিজের ঘরে ঢুকতে না পারার ঘটনা কাম্য নয়।
তাই ওই ঘরছাড়াদের আগে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে। শুক্রবার বেঞ্চের নির্দেশ, হিংসার কারণে যাঁরা ঘরে ফিরতে পারেননি, রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। ইমেলের মাধ্যমেও ওই অভিযোগ জানানো যাবে।
কত সংখ্যক অভিযোগ জমা পড়ল, সেই তালিকা আদালতকে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তার পরই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে আদালত। এই মামলা পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী শুক্রবার। ফলে ওই দিনের মধ্যেই নিজেদের অভিযোগ জানাতে হবে ঘরছাড়াদের।
এদিন দীর্ঘক্ষণ মামলার শুনানি হয়। শুনানিতে একাধিক বিষয় সামনে আসে। এদিন আদালত আবেদনকারীদের কাছে ঠিক এই মুহূর্তে কতজন মানুষ ঘর ছাড়া অবস্থায় রয়েছেন সেই সংক্রান্ত তথ্য চায় হাইকোর্ট। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও তথ্য দিতে পারেননি তাঁরা। ফলে আদালতের কাছে বেশ কয়েকটি দিন আবেদনকারী আইনজীবীরা চেয়ে নেন।
তবে এদিণ পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে লার্জার বেঞ্চের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। অভিযোগ জানানো স্বত্বেও পুলিশ কোণও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ। তাঁর এই অভিযোগ অস্বীকার করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। আনন্দবাজার পত্রিকাতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তিনি বলেন, আমিও উল্লেখ করতে চাই, ঘরছাড়ারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
কিশোরের এই যুক্তির পরই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল একটি রিপোর্ট উল্লেখ করেন। সেখানে বলা হয়েছে, ভোট-পরবর্তী হিংসার কারণে অনেকে ঘর ছেড়ে অসমে আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি, তাঁরা গুয়াহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থও হয়েছেন।
কিশোর পাল্টা বলেন, এ নিয়ে আমরা কিছু জানা নেই। অভিযোগকারী পক্ষের আরেক আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পুলিশের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তিনি আদালতকে জানান, ঘরে ফিরতে না পেরে অনেকে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
এই কারণে তাঁদেরকে হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। কার্যত যা শুনে আদালত একটু স্তম্ভিত হয়। তবে দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শেষে আদালত রাজ্য থেকে পুলিশ প্রশাসণকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে।
উল্লেখ্য, একটি মামলায় এর আগে ভোট পরিবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। যেভাবে সন্ত্রাস সামলাতে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাক্য প্রশাসন, তা দেখে খুশিই হয় হাইকোর্ট।