'নিষিদ্ধ শাস্তি', বুক কাঁপল না প্রধানশিক্ষকের, আঙুল মুচড়ে দিলেন ক্ষুদে পড়ুয়াদের, দেখুন ভিডিও
কী ভাবে সরকারি নিয়মকে অবজ্ঞা করেই ক্ষুদে পড়ুয়াদের 'কর্পোরাল পানিশমেন্ট' দেওয়া হচ্ছে তা এই ভিডিও-তে বন্দি হয়েছে।
সালটা ২০১৫। এক সমীক্ষায় উঠে এসেছিল বাংলার স্কুলগুলিতে চলা 'বুলিং' এবং 'কর্পোরাল পানিশমেন্ট'-এর এক ভয়ানক ছবি। সেই সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছিল বাংলার অন্তত ৬০টি স্কুলে 'বুলিং' এবং 'কর্পোরাল পানিশমেন্ট' রয়ে গিয়েছে। এই সব স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত শিক্ষকদের ভর্ৎসনার শিকার হতে হয়। শারীরিকভাবে নিগ্রহ হতে হয় পড়ুয়াদের। অথচ, বহু বছর আগেই সরকারি নির্দেশনামা প্রকাশ করে স্কুল 'বুলিং' ও 'কর্পোরাল পানিশমেন্ট' বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। সমীক্ষায় বলা হয়েছিল এই ৬০টি স্কুল কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং আলিপুরদুয়ার-এ ছড়িয়ে রয়েছে।
২০১৫-এর পর এটা ২০১৮। কিন্তু, ২০১৫ সালের সেই সমীক্ষা প্রকাশের পরও স্কুলে 'বুলিং' ও 'কর্পোরাল পানিশমেন্ট'-এর ছবিটার কোনও বদল হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতেও স্কুলে ছাত্রদের উপর শিক্ষকদের 'বুলিং' ও 'কর্পোরাল পানিশমেন্ট'-এর ঘটনা সামনে এসেছে। এবার সামনে এল এক ভিডিও। বরাহনগর শরৎচন্দ্র ধর বিদ্যামন্দিরের সেই ভিডিও এখন ভাইরাল হয়ে উঠেছে। কী ভাবে সরকারি নিয়মকে অবজ্ঞা করেই ক্ষুদে পড়ুয়াদের 'কর্পোরাল পানিশমেন্ট' দেওয়া হচ্ছে তা এই ভিডিও-তে বন্দি হয়েছে।
একটা সময় স্কুলে পড়ুয়াদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর ছিল দুই আঙুলের মধ্যে পেন বা চক অথবা রুল জাতীয় জিনিস ঢুকিয়ে দিয়ে তা মুচড়ে দেওয়া। এই শাস্তি কম বেদনাদায়ক নয়। বহু সময় এই ভাবে আঙুল মুচড়ে দিতে গিয়ে অঘটনও ঘটেছে। কিন্তু, পড়ুয়াদের নিয়ন্ত্রণে রাখার এককালে শিক্ষকদের এই প্যায়তাড়া এখন নিষিদ্ধ। সরকার 'কর্পোরাল পানিশমেন্ট' নিয়ে যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তাতে কোনওভাবেই পড়ুয়াদের শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা যায় না। কিন্তু বরাহনগর শরৎচন্দ্র ধর বিদ্যামন্দির-এর প্রধানশিক্ষক মণীশকুমার নেজ যে এই সব নিয়ম নীতির ধার ধারেন না তা স্পষ্ট। নিজের টেবিলে বসেই তিনি ক্ষুদে পড়ুয়াদের এক এক করে ডেকে আঙুলের ফাঁকে পেন ঢুকিয়ে চাপ দেওয়ার শাস্তি দিয়ে চলেন। ছাত্ররা তো বটেই ছাত্রীদেরও তিনি রেয়াত করেন না।
ছাত্রজীবনে শাস্তি কতটা জরুরি এই নিয়ে বিতর্কে অন্ত নেই। কিন্তু, মনোবিদদের দেওয়া পরামর্শ থেকে শুরু করে বহু সমীক্ষাতেই প্রমাণিত হয়েছে শাস্তি নয় সময় যত এগোচ্ছে ততই পডুয়াদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্পর্ককে সুগম করাটা অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছেলে-মেয়েদের মানসিক ভারসাম্যের গঠনও অনেক বদলে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের বড় করে তুলতে অযথা গার্জেনগিরির থেকেও বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে অভিভাবক ও অভিভাবকস্থানীয়দের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণকে। পরিষ্কার করে বলেই দেওয়া হয়েছে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে। বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গণে পড়ুয়াদের প্রতি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আরও বেশি করে নমনীয় ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সব কাজে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে উৎসাহ পান তার জন্য় 'শিক্ষারত্ন'-এর মতো সম্মানও দেওয়ার ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গ স্কুল শিক্ষা দফতর। এই 'শিক্ষারত্ন' দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যই হল যাতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের বদলে যাওয়া মানসিক অবস্থার সঙ্গে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারেন এবং তাদের উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা নিতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা বরাহনগর-এর শরৎচন্দ্র ধর বিদ্যামন্দির-এর প্রধানশিক্ষক মণীশকুমার নেজ নিজেই 'শিক্ষারত্ন' পেয়েছেন। তাহলে বুঝতেই হবে বর্তমান সময়ে সরকার যেভাবে পড়ুয়াদের সঙ্গে মেশার কথা বলছে তাতে যথেষ্টই দক্ষ মণীশকুমার নেজ। কিন্তু, পড়ুয়াদের প্রতি তাঁর ভয়ানক আচরণের ভিডিও দেখে বোধ হয় না তিনি 'শিক্ষারত্ন'-এর মতো এক মহান সম্মান-এর প্রাপক।
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির হাতে এই ভয়ানক ভিডিও আসার পর কথা বলা হয়েছিল অভিযুক্ত প্রধানশিক্ষক মণীশকুমার নেজ-এর সঙ্গে। কিন্তু, তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর সাফ জবাব ছিল তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের মারধর করা তো দূরস্ত, গায়েই হাত দেন না। তাহলে এই ভিডিও দেখে কী বলবেন মণীশকুমা্রর নেজ? ভিডিও-তে প্রধানশিক্ষকের চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিটি কে?
কথা বলা হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার ডিআই অফ স্কুল সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁরও সাফ জবাব প্রোপার চ্যানেলে আসুন তবে অভিযোগ শোনা যাবে। আজ 'কর্পোরাল পানিশমেন্ট' দিতে গিয়ে যদি কোনও অঘটন ঘটে যায় তাহলেও কি সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের মতো স্কুল আধিকারিকরা তখনও প্রোপার চ্যানেলের দোহাই দিয়ে দায় এড়াবেন?
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের হাতেও ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির পক্ষ থেকে বিস্তারিত প্রমাণও তুলে দেওয়া হয়েছে। স্কুলে যে পড়ুয়াদের মারধর করার নিয়ম নেই তা তিনিও স্বীকার করেছেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন:নিয়মকে বুড়ো আঙুল, স্কুলের মধ্যেই বই বিক্রি প্রধানশিক্ষকের, দেখুন ভিডিও]
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির কাছে এমন অভিযোগও এসেছে যাতে দাবি করা হয়েছে মণীশকুমার নেজ যে পদ্ধতিতে 'শিক্ষারত্ন' পেয়েছেন তাতেও প্রশ্ন আছে। 'শিক্ষারত্ন' পেতে গেলে একজন শিক্ষককে যে শর্তগুলো পূরণ করতে হয় তা কোনওভাবেই মণীশকুমার নেজের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাহলে 'শিক্ষারত্ন'- পাওয়ার ক্ষেত্রে কি মণীশকুমার নেজ কোনও প্রভাব খাটিয়েছিলেন? ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির অন্তর্তদন্ত এখনও চলছে। কারণ শিক্ষার নামে এক বিশাল দুর্নীতির চক্র জাল বিস্তার করে রয়েছে। মণীশকুমার নেজ-এর মতো ব্যক্তিরা এই দুর্নীতির একটা ছোট মোহরা মাত্র। এর কেস্টবিষ্টুদের দল বসে রয়েছে অন্যত্র। শিক্ষা সমাজ গড়ে। কিন্তু কিছু দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তির জন্য শিক্ষাঙ্গণ ক্রমাগত কলুষিত হচ্ছে। ওয়ানইন্ডিয়ার অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে বহু তথ্য। যা আমরা এক এক করে আপনাদের সামনে তুবে ধরার শপথ নিয়েছি।