হারিয়ে যেতে বসা বাংলার লোকশিল্পকে এবার তুলে ধরছে হালসিবাগান সর্বজনীন
বাংলার যে লোকশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে, সেগুলিকে ফিরিয়ে আনার জন্য সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি হালসিবাগান সর্বজনীনও নিজের মতো করে প্রচেষ্টা করছে।
বাংলার অন্যতম ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে লোকশিল্পের সঙ্গে। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তি, আধুনিকতা ও অর্থানুকুল্যের অভাবে ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার এই প্রাচীন শিল্প। বাংলার যে লোকশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে, সেগুলিকে ফিরিয়ে আনার জন্য সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি হালসিবাগান সর্বজনীনও নিজের মতো করে প্রচেষ্টা করছে।
লোক শিল্পীদের স্বার্থে রাজ্যে চালু হয়েছে 'লোক প্রসার প্রকল্প'ও। এই প্রকল্পের অধীনে লোকশিল্পীরা প্রতি মাসে এককালীন ভাতা পান। এছাড়াও প্রতিটি সরকারি অনুষ্ঠান পিছু টাকা পান শিল্পীরা। সরকারি অনুষ্ঠান ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারে অংশ হন এই লোক শিল্পীরা। তার জন্যও কিছু টাকা দেওয়া হয় তাদের।
এছাড়াও বাংলার সংস্কৃতির প্রচার বাড়াতে বানানো হয়েছে বিভিন্ন অ্যাকাডেমি। চালু করা হয়েছে বঙ্গভূষণ, বঙ্গবিভূষণের মতো পুরস্কার। কিন্তু এই সুযোগ পাচ্ছে সামান্য কিছু লোক শিল্প। বাকি শিল্প এই আওতায় পড়ছেই না। তাই বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকশিল্পগুলিকে এবারের পুজোয় তুলে ধরতে চাইছে হালসিবাগান সর্বজনীন।
শুধুমাত্র দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরাই নয় কীভাবে সেগুলিকে আবার পুনরুজ্জীবিত করে তাকে মানুষের সামনে তুলে ধরা যায় তাও রাখায় রয়েছে নিরোদ বিহারী মল্লিক রোড আর বদ্রী দাস টেম্পল স্ট্রিটের সংযোগস্থলের এই পুজো উদ্যোক্তাদের।
এবছর ৭৪ তম বর্ষে হালসিবাগান সর্বজনীনের এই হারিয়ে যাওয়া লোকশিল্পকে তুলে আনার প্রয়াসে যে শুধু নিজের রাজ্যের লোকশিল্প রয়েছে তা-ই নয়, বাংলা তথা গোটা দেশ তথা সমগ্র বিশ্বের বেশ কিছু বিলুপ্ত ও লুপ্ত প্রায় লোকশিল্পকে হালসিবাগান তুলে ধরবে। তার মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুরের লোকশিল্প, রয়েছে বিহারের মধুবনী-সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলের শিল্প, এমনকী রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার লোকশিল্পও।
জানা গিয়েছে এবছরের থিম ভাবনা আর রূপায়ণে রয়েছেন তুষারকান্তি প্রধান। আবার তিনি নিজের হাতে ঠাকুর গড়ারও দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন। তুষারবাবুর কথায়, 'উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে পোক শিল্প। অর্থাৎ বাঁশ কেটে তার ওপর খড় জড়িয়ে, তাতে মাটির প্রলেপ দিয়ে, তার ওপর ওপর রঙ চড়িয়ে তৈরি জিনিস। তা ছাড়া রয়েছে যে লোকশিল্পের জন্য ঠিক যে উপকরণ দরকার সেগুলিও।' এভাবেই লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার বার্তা দেওয়া হবে।
পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য অমিত চক্রবর্তী জানান, গত বছরে আমাদের পজোর থিম ছিল নারী শক্তি নিয়ে। নাম ছিল শ্রেয়সী। এবছর আমরা এই থিম এনেছি কারণ অনেক লোকশিল্প আজ হারিয়ে গিয়েছে বা হারিয়ে যাচ্ছে। সেই সব লোকশিল্প গুলি যা দেখা যায় না সেগুলিকেই আমরা তুলে ধরতে চাইছি। যেমন হাতে আঁকা পট শিল্প। রাজস্থানের কিছু শিল্প। যেগুলি এই প্রজন্ম দেখতে পায়নি বা পাবে না। তিনি আরও জানান, সাধারণত প্রতিমা সামনে থেকেই দর্শন করানো হয়। তবে এবছর আমাদের বিশেষ আকর্ষণ চারদিকে ঘুরে দুর্গা প্রতিমা দেখা যাবে।