যার হাত ধরে উঠেছিলেন তাঁকেই প্রত্যাখ্যান! জয়নগরের ঘটনায় সামনে আসছে তৃণমূলের গুরু-শিষ্যের দ্বন্দ্ব
রাজনৈতিক দলাদলি-তে ফের রক্তাক্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এবারের ঘটনা জয়নগরের বহরু-তে। আর যে দল-কে ঘিরে এই রক্ত ঝরেছে তার নাম তৃণমূল কংগ্রেস।
রাজনৈতিক দলাদলি-তে ফের রক্তাক্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এবারের ঘটনা জয়নগরের বহরু-তে। আর যে দল-কে ঘিরে এই রক্ত ঝরেছে তার নাম তৃণমূল কংগ্রেস। মাস দুয়েক আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বদল হয়েছে। নতুন সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী রীতিমতো গ্যারান্টি দিয়ে বলেছিলেন জেলার মধ্যে তৃণমূলের মধ্যে আর কোনও রক্ত ঝড়বে না। কিন্তু, তৃণমূল জেলা সভাপতি-র সেই কথা-য় যে কাজ কিছুই হয়নি তা প্রমাণ করে দিল জয়নগরের শ্যুট আউট-এর ঘটনা। এক জন বিধায়কের উপরে গ্যাং-ওয়ারের মতো হামলা হতে পারে তা এই প্রথম হয়তো দেখল পশ্চিমবঙ্গ।
এই বছরেই ক্যানিং-এও এমন গ্যাং ওয়ার-এর মতো হামলা হয়েছে। যেখানে তণমূলের নিজেদের মধ্যে লড়াই হয়। এই ঘটনায় প্রাণ হারায় ক্লাস এইট-এর এক ছাত্র-সহ দু'জন। জয়নগরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফিল্মি কায়দায় যেভাবে বিধায়কের গাড়িতে দুষ্কৃতী হামলা হয়েছে তাতে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য সামনে এসেছে। তৃণমূলের জয়নগর সূত্রেরই দাবি, বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস ও স্থানীয় দৌর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা গৌর সরকারের মধ্যে বিবাদেই এই ঘটনা। গৌর সরকার জয়নগর এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা। তাঁর সম্মতি ছাড়া দলীয় স্তরে কোনও কাজই হয় না। এহেন গৌর সরকারের হাত ধরেই নাকি উত্থান হয়েছিল বিশ্বনাথ দাসের। তাঁর চাকরির বন্দোবস্ত করা থেকে শুরু করে বিধায়ক হিসাবে নির্বাচন- সবই নাকি এই গৌর সরকারের অঙুলি হেলনেই হয়েছিল। কিন্তু, তৃণমূল কংগ্রেসের এই সূত্রের দাবি, বিধায়কের ক্ষমতায় বলিয়ান বিশ্বনাথ একপ্রকার বিদ্রোহ করেছেন গৌর সরকারের বিরুদ্ধে ।গৌর সরকারের আধিপত্য মানতে রাজি নন বিশ্বনাথ। এই নিয়ে প্রিয় শিষ্যের সঙ্গে মতবিরোধের সঙ্গে সঙ্গে দূরত্বও বাড়ছিল। এলাকা এলাকায় গৌর সরকারের অনুগামীদের সঙ্গে প্রায়শই বিবাদ লেগে রয়েছে বিশ্বনাথ দাসের অনুগামীদের। সম্প্রতি জয়নগরের বুকেও এমন গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনায় বিশ্বনাথ দাসের অনুগামীদের বিরুদ্ধে আঙুল ওঠে। আক্রান্তরা ছিলেন গৌর সরকারের অনুগামী।
[আরও পড়ুন: বিধায়ককে হত্যা করতে মাত্র ১০ মিনিটের অপারেশন, আর তাতেই জয়নগরে ৩ জনের মৃত্যু ]
জয়নগরের তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরের একটা মহলের দাবি, এই মতানৈক্য এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চড়া মূল্য চোকাতে হবে তা একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। বিশ্বনাথ দাস অবশ্য এই হামলার পিছনে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি। আর জয়নগরের শ্যুট আউটের ঘটনার পর গৌর সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও, জেলা তণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী ঘটনায় তণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, এসইউসি এবং সিপিএম-এর দিকে। শুভাশিস চক্রবর্তীর অভিযোগ, কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা সকলেই জানেন। তৃণমূল বিধায়ক তথা এলাকার ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতি সওকত মোল্লাও সিপিএম ও এসএউসিআই-এর দিকে আঙুল তুলেছেন। এককালে সিপিএম-এর বিধায়ক থাকা সওকত অভিযোগ করেন, এভাবে খুনোখুনি করাটা সিপিএম-এর অভ্যাস। তারাই লোক খুনের রাজনীতি করে বলে অভিযোগ করেছেন সওকত মোল্লা।
[আরও পড়ুন: 'আমি এই হামলার টার্গেট ছিলাম', আর কী বললেন জয়নগরের বিধায়ক ]
তৃণমূলের এই অভিয়োগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী। তিনি অভিযোগ, করেন রাজ্যে সাধারণ মানুষের কোনও নিরাপত্তাই নেই। খুন, অপরাধ, নারীদের উপরে হওয়া অত্য়াচারে রাজ্য দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান পাওয়ার দিকেও এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শুভাশিস চক্রবর্তী আনা অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে সুজন পাল্টা বলেন, যদি দলের মধ্যে বিভাজন না থাকে তাহলে কিছুদিন আগে জেলার সমস্ত নেতা ও বিধায়কদের নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি বৈঠক করলেও সেখানে বিশ্বনাথ দাস-কে কেন ডাকা হয়নি? শুভাশিস পাল্টা বলেন, কাকে দলের কোন মিটিং-এ ডাকা হবে তা কি সুজনরা ঠিক করে দেবেন। তবে সুজন চক্রবর্তী এই ঘটনার তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তঃকলহ-কে বারবার কাঠগড়ায় তুলেছেন।
[আরও পড়ুন: ফিল্মি কায়দায় ভরসন্ধ্যায় বিধায়কের গাড়িতে শ্যুট-আউট, নিহত ৩ ]