বঙ্গভঙ্গের টেবিলকে ঐতিহ্যবাহী মর্যাদায় গর্জে উঠল বাঙালি, টুইট মুছলেন রাজ্যপাল
লর্ড কার্জন রাজভবনের যে টেবিলে বসে বঙ্গভঙ্গের প্রথম পিটিশনে সই করেছিলেন, সেই টেবিলকেও ঐতিহ্যবাহী বলে বর্ণনা করেছিলেন বাংলার রাজ্যপাল।
লর্ড কার্জন রাজভবনের যে টেবিলে বসে বঙ্গভঙ্গের প্রথম পিটিশনে সই করেছিলেন, সেই টেবিলকেও ঐতিহ্যবাহী বলে বর্ণনা করেছিলেন বাংলার রাজ্যপাল। বাঙালি আবেগে খোঁচা দিয়ে ট্রোলড হতেই টুইটার থেকে সেই পোস্ট মুছে ফেললেন তিনি। বছরের শেষ দিনে বিড়ম্বনায় পড়ে ড্যামেড কন্ট্রোল করতে তাঁকে পোস্ট মুছে ফেলতে হল।
রাজ্যপালের টুইটের পরই বিশেষজ্ঞমহল প্রশ্ন তুলেছিল, তাহলে কি বঙ্গভঙ্গের মতো ঐতিহাসিক ভুলকে ঠিক বলে মনে করছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়? মঙ্গলবার রাজ্যপালের টুইটের পরই সমালোচনার বন্যা বইতে শুরু করে। সোশাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। তারপরই তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন তিনি।
মঙ্গলবার বর্ষশেষের দুপুরে টুইট করেন, পশ্চিমবঙ্গে মানুষের জন্য নতুন বছরের বার্তা রেকর্ড করছি। রাজভবনের ঐতিহাসিক গ্রন্থাগারে বসে আছি সেই ঐতিহ্যবাহী টেবিলের সামনে, যেখানে বসে ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের পিটিশনে সই করেছিলেন। তিনি ওই টেবিলকে ঐতিহ্যবাহী বলতেই ট্রোলড হতে শুরু করেন।
অধ্যাপক, শিক্ষক থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী, কৃতীরা গর্জে ওঠেন রাজ্যপালের ওই ব্যাখ্যায়। ছাত্রসমাজও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরব হয়। লেখা হয় তিনি বাংলার মননে আঘাত করেছেন। শুধু টুইটারে নয়, রাজ্যপালের ওই টুইটের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপেও।
Responding to the reaction of friends and well wishers and respect I have for Bengali pride I have deleted the tweet. I get pride in Rabindranath & the spirit of unity. As Governor I appreciate sensitivity of the people and am sure all will appreciate my bona fide response.
— Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) December 31, 2019
শেষপর্যন্ত বিতর্কিত টুইটটি মুছে ফেলেন রাজ্যপাল। ফের টুইট করে জানান, তিনি বাঙালিকে সম্মান করেন। সম্মান করেন রবীন্দ্রনাথকে। তিনি লেখেন আমি টুইটটি মুছে দিয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই আমার এই ভূমিকাকে স্বাগত জানাবেন। বাঙালির ভাবাবেগ আঘাত লাগায় তিনি মর্মাহত বলেও জানান।
রাজ্যপালের এই টুইটে ঐতিহ্যবাহী টেবিল কথায় আপত্তি তুলেছেন বিশেষজ্ঞমহল। প্রশ্ন তুলেছেন, বঙ্গভঙ্গের সেই সিদ্ধান্তের ফল আজও ভোগ করছেন বাংলার মানুষ। আর বাংলার রাজ্যপাল হয়ে তিনি কী করে ওই টেবিলকে ঐতিহ্যবাহী বলে ব্যাখ্যা করলেন?
১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলাকে ধর্মের ভিত্তিতে দুইভাগে ভাগ করে দেওয়া মেনতে পারেনি বাঙালি। গর্জে উঠেছিলেন ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকীরা। রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত রাস্তা নেমে রাখীবন্ধন উৎসব করেছিলেন। এই বঙ্গভঙ্গকে ব্যাখ্যা করেছিলেন বঙ্গবাসীর বুকে ছুরি চালানোর সমান বলে। শেষমেশ বাঙালির আবেগকে সম্মান দিয়ে টুইট মোছেন রাজ্যপাল।