মোর্চার বনধে ফের উত্তপ্ত পাহাড়, আটক বিধায়ক-যুব মোর্চা সভাপতি সহ ২০০
কালিম্পং, ২৮ সেপ্টেম্বর : মোর্চার ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধ ঘিরে লড়াই হল শেয়ানে-শেয়ানে। মোর্চা বনাম তৃণমূল লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠল পাহাড়ের পরিস্থিতি। মিছিল-পাল্টা মিছিল, আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে প্রশাসনের প্রতিরোধ, রেস্তোরাঁ, গাড়িতে ভাঙচুর, বনধ সমর্থনকারীদের আটক- সব মিলিয়ে একেবারে যুদ্ধের মেজাজ শরতের পাহাড়ে। এরই মধ্যে উঠে পড়ল গোর্খাল্যান্ডের দাবি। বনধ সফল বলে দাবি করে মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং বললেন, 'পাহাড়ের মানুষ গোর্খাল্যান্ড চান।' তাঁর আরও অভিযোগ পাহাড়ে বিভেদ সৃষ্টি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই প্রথমবার পাহাড়ের বনধে প্রতিরোধের ছবি স্পষ্ট হল। রাস্তায় নেমে মানুষ বনধ প্রতিরোধ করলেন। আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে পাহাড়ের তিন মহকুমায় তিন শতাধিক বনধ সমর্থকারীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এই তালিকায় রয়েছেন কালিম্পংয়ের বিধায়ক সরিতা রাই, যুব মোর্চার সভাপতি বিনয় ঘিসিং-সহ নেতৃস্থানীয় অনেকেই। মোর্চা নেতা বিনয় তামাং দাবি করছেন, মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছেন, বনধ সফল। উল্টোদিকে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের দাবি, সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে বনধ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। এবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক গুরুংয়ের।
ভরা পর্যটন মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে। শরতের পাহাড়ে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে পর্যটকদের। এই সময়ে পাহাড় বনধ প্রভাব ফেলবে পর্যটন শিল্পে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবু সরকার ও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোর্চা ১২ ঘণ্টার পাহাড় বনধ পালন করল বুধবার। সেই বনধ রুখতে গিয়েই উত্তপ্ত পাহাড়। থমথমে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং। পাহাড়ের এই বনধে এদিন মিশ্র সাড়া পাওয়া গিয়েছে। কোথাও রাস্তা শুনশান, দোকানপাট বন্ধ। যেমন মিরিট বাজার, সুকনা, গরুবাথানের দোকানপাট এদিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এই তিন মহকুমার সিংহভাগ চা-বাগানও বন্ধ ছিল। অন্যদিকে বহু জায়াগায় দোকানপাট, যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
সিআরপিএফ, কমব্যাট ফোর্সের টহল দেওয়ার ছবিও ধরা পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। অন্যদিনের তুলনায় বেশি সরকারি বাসও নামানো হয়েছে। তবে যাত্রীর সংখ্যা ছিল নগণ্য। সরকারি অফিসগুলিতে হাজিরা ৯৫ শতাংশ, যা অন্য দিনের তুলনায় বেশি। ডম্বুরচকে দু'দলই মিছিল করেছে। পেডংয়ে তৃণমূলের পতাকা লাগানো দু'টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। কালিম্পংয়ে মোর্চার মিছিল আটকায় পুলিশ। আটক করা হয় মোর্চা সমর্থকদের। তৃণমূলের বিরুদ্ধে রেস্তোরাঁ ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। জোর করে রেস্তোরাঁ খোলার চেষ্টা করা হয় শাসকদেলর পক্ষে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থেকে বন্ধ পেট্রোল পাম্প খুলতে বাধ্য করেন।
একদিকে বনধের সমর্থনে মিছিল করছে মোর্চা। রিলে অনশন করছে। অন্যদিকে বনধ ব্যর্থ করতে পাল্টা মিছিলে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও জন আন্দোলন পার্টি। মিছিল-পাল্টা মিছিলে সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়ের পরিস্থিতি। পাহাড় বনধ সফল না ব্যর্থ সেই বিচারে না গিয়ে বলা যায় পাহাড়ে প্রভাব কমেছে মোর্চার। একটা কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে এদিনের বনধ- আগে পাহাড় মানেই ছিল গুরুং। গুরুং বনধ ডাকা মানেই শুনশান পাহাড়। এদিন কিন্তু অনেক মানুষকে রাস্তায় বের হতে দেখা গিয়েছে। সরকারের অভয়বাণীতেই তা সম্ভব হয়েছে। তাই এটাও স্পষ্ট যে পাহাড়েও শক্তিশালী হচ্ছে তৃণমূল।
মোর্চা নেতা বিমল গুরুং জানিয়েছেন, মানুষের সাড়া মিলেছে। পাহাড় বনধ সফল। পাহাড়ে ৩ মন্ত্রী পাঠিয়ে বনধ ব্যর্থ করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন তা পারেনি। মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছেন। তাঁর অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। মুখ্যমন্ত্রী এটা ঠিক করছেন না। এদিন আবার গোর্খাল্যান্ডের দাবিও তুলে দেন তিনি। বলেন, পাহাড়ের মানুষ গোর্খাল্যান্ড চান। তাঁর চ্যালেঞ্জ, যেদিন খুশি নির্বাচন করুন , আমরাই জিতব।
পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, এখন ভরা পর্যটন মরশুম। এই সময় বনধ ডেকে পাহাড় উত্তপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। এতে পর্যটন শিল্প মার খাবে। প্রভূত ক্ষতির সামনে পড়বে পর্যটন-ব্যবসায়ীরা। তিনি আবেদন জানিয়েছেন, সবাই শান্ত থাকুন। মোর্চার প্ররোচনায় পা দেবেন না। এই বনধকে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে বর্ণনা করে মন্ত্রী বলেন, এই হঠাকারী বনধের সিদ্ধান্তের জন্য সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। তা হতে দেওয়া যায় না। সেই কারণেই দিদির নির্দেশে তৃণমূলের তরফ থেকে প্রতিরোধ করা হচ্ছে বনধ। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, বনধ মানেই উন্নয়নের গতি স্তব্ধ। পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের গতিরুদ্ধ করবেন না। মোর্চা পাহাড়ের ভালো চায় না বলে জানান তিনি।