রাজনাথের টোটকায় অসুখ সারছে পাহাড়ে, মোর্চার অনশন প্রত্যাহারে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত
রবিবার মোর্চার সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং অনশন তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন মোর্চা নেতৃত্বকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন আলোচনায় বসার।
মোর্চার জেদে অবশেষে ফাটল ধরল। ঠেলায় পড়ে অনশন আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করল মোর্চা নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের আবেদন মেনে অনশন তুলে নেওয়ার কথা বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিল যুব মোর্চা। মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংও সেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে যুব মোর্চার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন।
[আরও পড়ুন:রাজনাথের সঙ্গে বৈঠকের পরও গোর্খাল্যান্ডের দাবি! কী অবস্থান গুরুংদের]
সেইসঙ্গে অনশন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মোর্চার তরফে নমনীয় হওয়ার বার্তা দেওয়া হল রাজ্যকে। রবিবার মোর্চার সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং অনশন তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন মোর্চা নেতৃত্বকে। সেইসঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন আলোচনায় বসার। এবার মোর্চা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আর্জির মর্যাদা রক্ষা করে রাজ্যকে বার্তা দিল- পাহাড় আলোচনার জন্য তাঁরা প্রস্তুত।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, মোর্চার এই অনশন প্রত্যাহার পাহাড়ের পক্ষে শুভ লক্ষণ। মোর্চার এই অনশন আন্দোলন থেকে সরে আসাকে পাহাড়ে অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রাথমিক পদক্ষেপ বলেই ব্যাখ্যা করছে অনেকে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিমল গুরুংরা বুঝে গিয়েছেন, তাঁদের পরিসর ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে, তাই এবার গুটিয়ে নিতে হবে নিজেদের। প্রবল চাপের মধ্যে পড়েই মোর্চা পিছু হটল বলে মনে করছেন তাঁরা।
পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে বিগত দু-মাসভর পাহাড়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে মোর্চা। পাহাড়ের হাসিমুখের চেহারাটা এই দু-মাসেই আমূল বদলে গিয়েছে। থমথমে, শুনশান। পরক্ষণেই অগ্নিগর্ভ। পর্যটকশূন্য পাহাড়ে কান পাতলেই শুধু ভারী বুটের আওয়াজ। আগুন জ্বলছে। হিংসা ছড়াচ্ছে। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যাও। তার উপর পাহাড়ের মানুষের রসদ ফুরিয়েছে। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত পাহাড়।
মোর্চার আন্দোলন প্রতিহত করতে রাজ্য যখন কড়া মনোভাব নিয়েছে, তখন গোপনে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে মোর্চা নেতৃত্ব। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। কৌশলী রাজনাথ নিজেকে তৃণমূল ও মোর্চা- দুই দলের কাছে থেকেই সমদূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন। আর সঠিক সময়ে এসে বৈঠক ডেকে মোক্ষম ধাক্কা দিয়েছেন মোর্চাকে। ফলে দু-মাসের আন্দোলনে শেষের ঘণ্টা প্রায় বাজিয়ে ছেড়েছেন তিনি।
রবিবার রাজনাথের কাছে থেকে অনশন তোলার বার্তা আসার পরই চাকা ঘুরে যায়। উপায় না দেখে অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েই দেন বিমল গুরুং। গোর্খাল্যান্ড মুভমেন্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটির তরফে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। মোর্চা নেতৃত্ব অবশ্য জানাচ্ছে, চাপে পড়ে অনশন প্রত্যাহার করছেন না তাঁরা। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আর্জিকে সম্মান জানাতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে যে কারণেই বিমল গুরুংরা এই সিদ্ধান্ত নিন না কেন, অনশন প্রত্যাহারের ফলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত মিলল পাহাড়ে।