গঙ্গাসাগরের ডায়েরি,মেলা ভাঙার কাহিনি উঠে এল নীল মিত্রের কলমে
গতকাল ঠিক রাত বারোটায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার অতিরিক্ত জেলা শাসক তথা গঙ্গাসাগরের মেলা অফিসার শ্রী শ্যামল কুমার মন্ডল গঙ্গাসাগর সাগর সৈকতের টাওয়ার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলার পরিসমাপ্তি ঘোষণা করলেন।
গতকাল ঠিক রাত বারোটায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার অতিরিক্ত জেলা শাসক তথা গঙ্গাসাগরের মেলা অফিসার শ্রী শ্যামল কুমার মন্ডল গঙ্গাসাগর সাগর সৈকতের টাওয়ার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলার পরিসমাপ্তি ঘোষণা করলেন। কলকাতার বইমেলায় কাঠের ঘন্টা বাজিয়ে যেমন পুস্তকপ্রেমী মানুষদের রঙিন এক উৎসবের ইতি টানা হয় অনেকটা ঠিক তেমন ভাবে সরকারী বিধিবদ্ধ ঘোষণায় এক অমোঘ আবহ ও ভাবাবেগ সঞ্চারিত হয় মেলার সঙ্গে সম্পর্কিত আপামরমানুষজনের,আধিকারিক কিংবা সাধারণজন, সবার।
গঙ্গাসাগরে পৌষ সংক্রান্তির এই যে মেলা তা মাত্র তিন দিনের হলেও আয়োজন চলে ঢের আগে থেকে । উৎসব প্রিয় গড় বাঙালি এই আনন্দ চেটেপুটে উপভোগ করার জন্যে ইদানীং যে কোন উৎসবকে প্রলম্বিত করার ন্যুনতম সুযোগ ছাড়তে চাননা । কিন্তু সুদুর দ্বীপ ও ব্লক সাগরমেলায় সেই সুযোগ অনেকই কম। যদিও এই ব্লক কয়েক দিনের জন্য মিনি ভারতবর্ষ হয়ে ওঠে । মহামিলনের মিলনক্ষেত্র এই মেলায় ন্যুনতম খরচে বা সুবিধায় অংশ নিতে রেলপথ ও সড়কপথে আসতে চাইলেও নৌপথ অবিসম্ভাবী , বাধ্যতামূলক । অবশ্য অস্থায়ী হেলিপ্যাড আছে সবিশেষ জনদের জন্যে । এই দ্বীপের আড়াই লক্ষ বাসিন্দারা অবশ্য এইসব হ্যাপার মধ্যে নেই। অবশ্য সেই সব করতে হয়না। প্রায় স্বাধীনভাবে তাদের চলাচল । তীর্থযাত্রীদের জন্যে কাকদ্বীপের লট এইট জেটি থেকে সাগরদ্বীপের কচুবেরিয়া জেটিতে পারাপারের বিশেষ ব্যবস্থা সীমিত সময়ের । এটা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণাধীন এই রুটই সাগরমেলার মুল লাইফলাইন। প্রবেশ ও প্রস্থানভূমি । এছাড়া নৌপথে ছোট ছোট লঞ্চে নামখানা হয়ে বেনুবন ও চেমাগুড়ির পথে তীর্থযাত্রীরা আসা যাওয়া করেন। জেটি থেকে ম্যাজিক,ট্রেকার এবং মিনিবাসে যাত্রীরা আসেন সাগর পয়েন্টে। অন্যদিকে কাকদ্বীপ কচুবেড়িয়া থেকে বাস,প্রিপেড ট্যাক্সি ও নানারকম ছোটগাড়ি চলাচল করে সাগর পয়েন্টের 'কে ওয়ান', 'কে টু' বাসস্ট্যান্ড ও প্রিপেড ট্যাক্সি স্ট্যান্ডগুলির মধ্যে। জেলার মূলভূখন্ড থেকে আনা হয় অসংখ্য গাড়ি বাস, মিনিবাস, ম্যাক্সিট্যাক্সি,এস ইউ ভি ইত্যাদি ইত্যাদি। জেলা সদর আলিপুরের নেজারথ ডেপুটি কালেক্টর এবং আর টি ও রিক্যূইজিশন করেন যাত্রী চলাচলের এই সব গাড়ি । সেই সবের সব লট বহর ফিরছে সেই কচুবেড়িয়া পয়েন্ট হয়ে। তার তদারক করছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক নিখিলেশ মন্ডল। আরেক অতিরিক্ত জেলাশাসক সাগর বন্দোপ্যাধ্যায় সামলাচ্ছেন বেনুবন ও চেমাগুড়ি পয়েন্ট। সহযোগিতায় বারুইপুরের মহকুমা শাসিকা এবং তাঁর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যান্য কর্মীদল। নামখানা ও লট এইটে আছেন আরো দুজন অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং মহকুমা শাসকবর্গ । বিপুল এই আয়োজন । কিন্তু এ দিল মাঙ্গে মোর । প্রভু , আরো দাও প্রভু আরো দাও । এ আমাদের অন্তরবাসনা ।
অতএব সাগরবাসীদের জন্য মেলা চলবে আরো কিছুদিন। গৃহস্থালীর সাধারণ প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের বিকিকিনি চলবে আরো কয়েকদিন। স্থানীয় মানুষেরা বলে ভাঙা মেলা । ভাঙা হোক বা গোটা মেলা মেলাই । মিলন স্থল। এ এমনই মিলনস্থল যে পবিত্র নদী মিশছে সাগরে । সাগরের ঢেউ ,জনতার ঢেউ মিলে মিশে উর্মিমূখর হয়ে ওঠে , আবার কখনো স্তিমিত হয়ে যায়। আমরা যারা কয়েক দিনের জন্যে এসেছিলাম তাদের কাছে এর অভিঘাত প্রভাব থেকে যায় ।
আজ মন্দিরের প্রধান মোহন্ত নিজে দাঁড়িয়ে আমাদের পূজা ও অর্ঘ দিলেন। উপহার দিলেন বাসন্তী রঙের উত্তরীয় । বিকেলে জেলাশাসকের উদ্যোগ ও তত্বাবধানে মন্দির চত্ত্বরে বিশেষ সাফাই অভিযান । তারপর মেলায় নিয়োজিত আধিকারিকদের জরুরী পর্যালোচনা ও নৈশভোজ এবং শেষমেষ বিদায় । বিদায় সাগর । তবে সাগরের নতুন বিডিও সাহেব সাগর সৈকতসহ ব্লকটিকে সারা বছরের পর্যটন উপযোগী করে তুলতে চান । অনেক পরিকল্পনা আছে ওনার আস্তিনে। তার এই পরিকল্পনা সার্থকভাবে রুপায়িত হোক। আশীর্বাদ থাকুক কপিলমুনি ও মা গঙ্গার । পশ্চিম বঙ্গ পাবে চিরকালীন ও সম্বৎসরের নয়া গন্তব্য ।