বছরের শুরু থেকে শেষ, ভাঙড় আন্দোলনে ফায়দা তুলল কে
বছরের শুরু থেকেই উত্তপ্ত ছিল ভাঙড়। বছরের শুরুতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার আগুন এখনও জ্বলছে। এখনও অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে পাওয়ার গ্রিডের কাজ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নজরেও এসেছে বিষয়টি।
বছরের শুরু থেকেই উত্তপ্ত ছিল ভাঙড়। বছরের শুরুতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার আগুন এখনও জ্বলছে। এখনও অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে পাওয়ার গ্রিডের কাজ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নজরেও এসেছে বিষয়টি। সারা বছর ধরে চলা এই আন্দোলনকেই ফিরে দেখা আরও একবার।
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রথমে এলাকায় অধীর
বছরের শুরুতেই উত্তপ্ত ছিল ভাঙড়। পাওয়ার গ্রিড প্রকল্প আর বিদ্যুৎবাহী তার নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করে জমি দখলের অভিযোগ ঘিরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়। প্রকল্প বন্ধের দাবিতে কয়েকদিন অবরূদ্ধ হয়ে পড়েছিল ভাঙড়। পুলিশকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দুই গ্রামবাসীর। আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। যদিও পুলিশ সেই কথা অস্বীকার করে। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রথম এলাকায় যান অধীর চৌধুরী। আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার বার্তা দেন।
শিল্প সম্মেলন চলাকালীন বিক্ষোভ সিপিএম-এর
ভাঙড় কাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভে সামিল হয় সিপিএম। মিলন মেলা চত্বরে শিল্প সম্মেলন চলাকালীন হঠাৎই বিক্ষোভে সামিল হন সুজন চক্রবর্তী, নেপালদেব ভট্টাচার্যরা। পুলিশ এই ঘটনায় গ্রেফতার করে বাম নেতৃত্বকে। পরের দিনই আদালত তেকে নিঃশর্ত জামিন পান নেতারা।
নন্দীগ্রামের কায়দায় বিক্ষোভ ভাঙড়ে
আটদিন দরে অবরোধ চলার পর পুলিশ গিয়ে ভাঙড়কে অবরোধ মুক্ত করে। কিন্তু ফের আন্দোলনে নামেন স্থানীয়দের একাংশ। মাছিভাঙা গ্রামে নন্দীগ্রামের কায়দায় রাস্তা কেটে পুলিশ ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।
ভাঙড় থেকে গ্রেফতার সিপিআইএমএল নেত্রী
পাওয়ার গ্রিড বিতর্কে গ্রামবাসীদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে মাছিভাঙা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় সিপিআইএমএল রেডস্টার নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরীকে। তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায়ও মামলা দায়ের করে পুলিশ। এই গ্রেফতারের পরেই আবারও নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়।
ভাঙড়ের মানুষকে ভুল বোঝানোর অভিযোগ বিদ্যুৎমন্ত্রীর
ভাঙড়ের মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আর ভাঙড়বাসী সেই ভুলটাই বুঝছেন। বিরোধীদের নিশানা করে এমনটাই অভিযোগ করেছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এলাকা জুড়ে অবৈজ্ঞানিক কথা বলার অভিযোগও করেন তিনি।
আলোচনায় সমস্যা সমাধানে জোর দেন রাজ্যপাল
সবাইকে একসহ্গে বসে শান্তির পথ বের করতে হবে। ভাঙড়কাণ্ডে মুখ কুলে এমনটাই বলেছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। স্থানীয় মানুষ এবং নেতাদের একসঙ্গে বসে সমস্যা মেটানোর পক্ষে মত দেন তিনি।
কলকাতায় সংহতি মিছিল
ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পের প্রতিবাদে শহরে মিছিল করা হয় ভাঙড় সংহতি মঞ্চের ব্যানারে। এই মিছিলে পা মেলান নকশাল থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা, গ্রামবাসীরা তো ছিলেনই, এমনকী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও এদিন ভাঙড়কাণ্ডের প্রতিবাদে মিছিলে হাঁটেন। মহামিছিলে আসার কথা ছিল সিপিএম নেতৃত্বেরও। তবে শেষপর্যন্ত তাঁরা কেউ মিছিলে আসেননি।
তদন্তে সিআইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন হাইকোর্টের
ভাঙড়ে গুলি চালাল কে? কার গুলিতে দু'জন নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু হল? তদন্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিচারপতি। পুলিশ বা সিআইডি-র তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি জানান, ভাঙড়কাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। তাই কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে এবার তদন্ত প্রক্রিয়া এগোবে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি সরাসরি ভাঙড়কাণ্ডে গুলি চালনার ঘটনায় সিআইডি-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ভাঙড়বাসীর উদ্দেশে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
বছরের মাঝামাঝি সময়েই থামেনি আন্দোলন। বিক্ষোভ, অবরোধ, বোমাবাজি কিছুই বাদ যায়নি। আর মাঝে মধ্যেই আন্দোলন দমন করতে কোনও আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করতেই ফের উত্তপ্ত হয়েছে ভাঙড়। বিষয়টি নিয়ে হুঁশিয়ারি ও দেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও ভাঙড় চলেছে ভাঙড়ের পথেই। এরপর মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেন, ভাঙড়বাসী চাইলেই পাওয়ার গ্রিড হবে। ভাঙড়ে গিয়ে তিনি বলেন, যদি আলোয় থাকতে চান, তাহলে হাত তুলুন।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নজরে ভাঙড় প্রকল্প
বছরের শুরু থেকে শেষেও ভাঙড় আন্দোলন দমনে তৃণমূল নেতা ও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে আন্দোলনকারীরা। দেশের বিভিন্ন অংশে মানুষের মতামত না নিয়েই সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রকল্প শুরু করার চেষ্টা ভুড়িভুড়ি। আর পরে তা আটকে যাওয়ার সংখ্যাও কম নয়। তাই সাধারণ মানুষের মতামত নিয়েই প্রকল্প শুরু করতে এবং আটকে যাওয়া প্রকল্প নিয়ে সমাধান সূত্র খুঁজছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রোজেক্ট মনিটরিং গোষ্ঠী। সম্প্রতি এই গোষ্ঠীর নজরে আনা হয়েছে ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পকেও।
নতুন বছরের শুরুতেও আন্দোলনের ডাক
জমি-জীবিকা-বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির নামে আন্দোলনকারীরা নতুন করে তাদের কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছে। বারুইপুরে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো কোনও চিঠির জবাব তাঁরা পাননি বলেই অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এমন কী স্থানীয় তৃণমূল নেতা এবং থানার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ভয় দেখানোর অভিযোগও ফের তোলা হয়েছে। আন্দোলনে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ প্রত্যাহার-সহ একাধিক দাবি তোলা হয়েছে সংগঠনের তরফ থেকে। বিষয়টি নিয়ে ৪ জানুয়ারি গণ জমায়েতের ডাকও দেওয়া হয়েছে।