
এনআরসি, মূল্যবৃদ্ধি থেকে বেকারত্ব ইস্যু - কেন্দ্রকে আয়না দেখালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তিনি বাংলায় এনআরসি হওয়া আটকাবেন। এদিন ফের একবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বিতর্কে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনআরসি বাংলায় করতে দেব না। বাংলায় কোনওভাবে কার্যকর হবে না নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এই বলেই কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে এনআরসি আতঙ্কে গোটা বাংলা ভুগছে। এর মধ্যে ৩০ জন এনআরসির আতঙ্কে বাংলায় মারা গিয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

বিভেদমূলক এনআরসি নয়
মমতার কথায়, সব ধর্মের নাগরিকদের নিয়ে যদি এনআরসি করা হয় বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হয় তাহলে তাকে অবশ্যই সমর্থন জানাবে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে কোনও একটি জাতিকে বাদ দিয়ে বা কোন একটি বিশেষ জাতির জন্য কোন বিল আনার চেষ্টা হলে তৃণমূল কংগ্রেস তা মেনে নেবে না। সর্বশক্তি দিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলবে।

বিচার ইস্যু
এদিন মুখ্যমন্ত্রী একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্র সরকারকে তোপ দেগেছেন। হায়দরাবাদের গণধর্ষণের ঘটনায় বলতে গিয়ে বলেছেন, বাংলায় এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনেক বেশি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত চালু হয়েছে। তবে অনেক সময় কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্যের জন্য কোথাও কোথাও খামতি থেকে যাচ্ছে।

অর্থনীতি নিয়ে তোপ
ব্যাঙ্কে টাকা রাখা থেকে শুরু করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা - সবকিছু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ দেগেছেন কেন্দ্রকে। তিনি বলেছেন, ঘরে টাকা রাখলে নোটবন্দি করে তা নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। আর ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে তা ফেরত পাওয়া যাচ্ছেনা। ১ লক্ষ টাকার বেশি তোলা যাবে না বলেও একটি ব্যাঙ্কে জানানো হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে কেন্দ্র মানুষের রোজগারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলেই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন।

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তোপ
মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। পেঁয়াজের দাম ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে। তা নিয়ে কেন্দ্র সরকারের জবাবদিহি চেয়েছেন তিনি। মানুষের হয়ে তিনি কেন্দ্রের জবাবদিহি চেয়েছেন। এবং কেন্দ্রের ব্যর্থতার কারণে যে রাজ্যের তথা দেশের এই অবস্থা সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

বেকারত্ব ইস্যু
সারা দেশে বেকারত্ব সমস্যা এখন অনেক বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মসংস্থানের অভাব, বেকারত্ব - এই বিষয়গুলি নিয়েই কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সারাদেশে যখন বেকারত্ব ৪০ শতাংশ বেড়েছে। তখন পশ্চিমবঙ্গে ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে বেকারত্ব। এর পিছনে সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

দারিদ্র দূরীকরণে বাংলা প্রথম
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, দারিদ্র দূরীকরণে বাংলা দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে। রাজ্য সরকার অনেক প্রকল্প করেছে। সাধারণ মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করবে সেগুলি। দলীয় কর্মীদের কাছে তাঁর বার্তা, এই ধরনের প্রকল্পগুলিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। এক্ষেত্রে তিনি দুই টাকা কিলো চাল, স্বাস্থ্যসাথী, স্কলারশিপ প্রোগ্রাম এবং অন্যান্য নানা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন।

এজেন্সি নিয়ে তোপ
কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিয়ে ফের একবার কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন মমতা। সিবিআই, ইডিরর মতো বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে বারবার মমতা সরব হয়েছেন। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে বারবার এই সংস্থাগুলিকে কাজে লাগাচ্ছে বলেও অভিযোগ ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। এদিন তিনি বলেছেন, পানের দোকান, চায়ের দোকানে আয়কর হানা চলছে। মানুষ ভয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এই অবস্থা সৃষ্টি করে মানুষের মনে ভয় দেখাতে চেয়েছে কেন্দ্র তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী।