ভাঙড়ে বোমাবাজি ও গুলি, ভাঙচুর আন্দোলনকারীদের কার্যালয়, প্রতিরোধে ধরা পড়ল ২ দুষ্কৃতী
মঙ্গলবার বিকেল থেকেই শ্যামনগর মোড়ে জমায়েত শুরু করে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। দশ থেকে বারোটি স্করপিও গাড়িতে চেপে এরা সেখানে হাজির হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।
গণ সমাবেশের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই যেন সশস্ত্র হামলার ঘটনা বাড়ছে ভাঙড়ে। বছরের শেষ লগ্নেই ভূমি-জীবিকা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটির মিছিলেই বোমাবাজি ও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম এবং কাউজার-বাহিনীর দিকেই আঙুল ওঠে। সেই ঘটনার রেশ মেলাতে না মেলাতেই মঙ্গলবার ফের সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটল ভাঙড়ে।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল থেকেই শ্যামনগর মোড়ে জমায়েত শুরু করে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। দশ থেকে বারোটি স্করপিও গাড়িতে চেপে এরা সেখানে হাজির হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এমনকী, স্করপিও বাহিনীর সঙ্গেই সেখানে হাজির ছিল অন্তত চল্লিশটি মোটরবাইকে সওয়ারি দুষ্কৃতীদের দল। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগে, এই জমায়েতের সামনেই পড়ে গিয়েছিলেন মাছিভাঙা গ্রামের প্রৌঢ় কোমরাদ্দিন মোল্লা। তিনি মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দিতে শ্যামনগরে গিয়েছিলেন। ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের সমর্থটক কোমরাদ্দিন মোল্লাকে দুষ্কৃতীবাহিনী বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। পরে, হুমকি দিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এরপর সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের বাহিনী স্করপিও গাড়িতে চেপে এবং মোটটর বাইক নিয়ে মিছিল শুরু করে। কামারবাড়ি, পদ্মপুকুর এবং খামারআইট গ্রামে ঢুকে দলটি ব্যাপক বোমাবাজি করে হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ। এমনকী, সশস্ত্র মিছিল থেকে আকাশে গুলিও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের হোতা ভূমি-জীবিকা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটির নতুনহাট কার্যালয়েও ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর ভূমি-জীবিকা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটিরর শক্ত ঘাঁটি মির্ধাপাড়া ও ওড়িয়াপাড়াতে ঢুকে ব্যাপক বোমাবাজি করে দুষ্কৃতীরা। বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর করে বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। মির্ধাপাড়ায় ভূমি-জীবিকা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটির লোকজন পরে দুষ্কৃতীদের পাল্টা প্রতিরোধ করতে শুরু করে। দুষ্কৃতী দলটি পালিয়ে গেলেও তাদের দুই জন ভূমি-জীবিকা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটির লোকেদের হাতে ধরা পড়ে যায়। জানা গিয়েছে, একজনের নাম সুজিত মণ্ডল। অন্যজনের পদবী প্রমাণিক। দু'জনেই ভগবানপুর অঞ্চলের লাঙলমাটি এলাকার বাসিন্দা। ত্রিশ থেটকে পঁয়ত্রিশ বছরের এই দুই ব্যক্তি একাধিক দুষ্কর্মে়র সঙ্গে জড়িত বলেই জানা গিয়েছে। যদিও, দু'জনের পরিবারের লোকেদের গ্রামে ডেকে তাদের হাতে সুজিত ও প্রামাণিককে সঁপে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভূমি-জীবিকা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটি।
ভূমি-জীবিকা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটির অভিযোগ, গণ সমাবেশের আগে যে কোনও মূল্যে ভাঙড়ে রক্ত ঝরাতে মরিয়া শাসক দলের নেতারা। তাই ক্রমাগত তাঁদের উপরে সশস্ত্র হামলার তীব্রতা বাড়ছে বলে অভিযোগ। পুলিশে খবর দিয়েও লাভ হচ্ছে না। ভূমি-জীবিকা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটির অভিযোগ, খোদ পুলিশের লোকেদের উপস্থিতিতেই ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপরে হামলা চলছে। মঙ্গলবারের হামলার পিছনে তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ ভূমি-জীবিকা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটির। তবে, ৪ জানুয়ারির গণ সমাবেশ সফল করতে মরিয়া ভূমি-জীবিকা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটি পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ইতিমধ্যেই ভাঙড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে অবরোধ আন্দোলন শুরু করেছে তারা। মূল সড়কের উপরে গাছের গুড়ি, ইঁট ফেলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।