সারদা ইস্যুতে মুখ বন্ধ করতেই কি গারদে পোরা হল আসিফকে, উঠছে প্রশ্ন
তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন কম্যান্ড মুকুল রায়ের এক সময়ের ছায়াসঙ্গী হলেন এই আসিফ খান। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তাঁকে দেখা যেত মুকুল রায়ের পাশে। এর পরই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে আসিফের। চলতি বছরের মে মাসে সারদা-কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই। তার পর থেকে বহুবার তারা ডেকেছে মুকুলবাবুর প্রাক্তন ছায়াসঙ্গীকে। আসিফ খান এমন কিছু তথ্য সিবিআইকে দেন, যার জেরে চাপ বাড়ে শাসক দলের ওপর। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন তিনি। তাঁকে 'মিথ্যেবাদী' বলেও বর্ণনা করেন। বলেছিলেন, "সারদা গোষ্ঠীর ব্যাপারে সব কিছু জানতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৩ সালের এপ্রিলে তিনি এ সব জেনেছেন, এটা বাজে কথা। ওঁর চেয়ে বড় মিথ্যেবাদী আর কেউ নেই।"
আরও পড়ুন: সারদা-কাণ্ড: মুখ্যমন্ত্রীকে 'মিথ্যেবাদী' বললেন আসিফ খান
আসিফের অভিযোগ, এর পরই বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ তাঁকে ডেকে হুমকি দেওয়া শুরু করে। 'সিবিআইকে কী বলেছেন, না বললে ৩০০ মামলায় ফাঁসিয়ে দেব', এমন হুমকিও তাঁকে দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে আসিফের বিরুদ্ধে এই সময় দু'টি প্রতারণার মামলা রুজু করে বিধাননগর পুলিশ। একটি ২০ কোটি টাকার। অন্যটি আট কোটি টাকার। প্রথম মামলায় তিনি আগাম জামিন নেন। কিন্তু দ্বিতীয় মামলাটি নিয়ে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আসিফ খান।
এই প্রাক্তন তৃণমূল নেতার অভিযোগ, তিনি মেয়ের চিকিৎসার জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। অথচ পুলিশ রটিয়ে দেয়, আসিফ খান ফেরার হয়ে গিয়েছে। তিনদিন আগে কলকাতায় ফিরে সব কিছু জানতে পারেন। আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ বৃহস্পতিবার তিলজলা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, আসিফ খান সারদা ইস্যুতে সিবিআইয়ের কাছে মুখ খোলার পর মুকুলবাবুর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরত্ব বাড়ে। কিছুদিন হল আবার মুকুল-মমতা সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। তার পরই গ্রেফতার করা হল আসিফ খানকে।
এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, "মুকুল রায়কে নেত্রীর গাড়িতে উঠে ঘুরতে দেখা গেল আর আসিফ খান গ্রেফতার হলেন, এই দু'টি ঘটনা কি কাকতালীয়?" বিজেপির দাবি, সিবিআইকে যাতে উনি আর তথ্য দিতে না পারেন, তাই তাঁকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
আসিফ খান অভিযোগ তুলেছিলেন, তৃণমূলে প্রতিবাদের কোনও জায়গা নেই। প্রতিবাদ করলেই জেল হবে। যেমনটা হয়েছে কুণাল ঘোষের।
নাম না লেখার শর্তে বিধাননগর কমিশনারেটের এক অফিসার বলেন, "আসিফ খানকে ধরতে চাপ আসছিল ওপর মহল থেকে। বুধবার থেকে তাই তৎপরতা শুরু করি আমরা।"
এদিকে, গ্রেফতারের পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন আসিফ। তাঁকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।