প্রণববাবু ‘ফিরলেন’ তাঁর প্রথম কর্মস্থল আমতার স্কুলে, ফিরল ২২ বছর আগের স্মৃতি
গাড়ি থেকে মুখ বের কের গুরুগম্ভীর মানুষটা বলে উঠলেন, ‘আরে করছো কী! এটা আমার বাড়ি। আমি এই বাড়ির বড়ছেলে।
সেদিন প্রণববাবুর গাড়ি আটকে দিয়েছিলেন বাড়ির বউয়েরা। পুলিশ যখন সেই 'অবরোধ' সরাতে লাঠি উঁচিয়েছেন, গাড়ি থেকে মুখ বের কের গুরুগম্ভীর মানুষটা বলে উঠলেন, 'আরে করছো কী! এটা আমার বাড়ি। আমি এই বাড়ির বড়ছেলে।' দেশের বিদেশমন্ত্রী তথা যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের মুখে এই কথা শুনে হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন হাওড়ার আমতার তাজপুরের চক্রবর্তী পরিবারের সমস্ত সদস্য থেকে নিরাপত্তারক্ষীরাও।
তারপরই সটান গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিলেন প্রণববাবু। সঙ্গে সঙ্গেই প্রণামের ঘটা পড়ে গেল রাস্তাতেই। বাড়িতে আসার কথা বলতেই বলে উঠলেন, 'দাঁড়া আগে অনুষ্ঠান থেকে ঘুরে আসি।' তাঁর প্রথম ছাত্র ওই বাড়িরই সদস্য চিত্তরঞ্জন চক্রবর্তী মাস্টারমশাইকে প্রণাম করে বললেন, 'আপনি একেবারেই বদলাননি, মাস্টারমশাই।'
২২ বছর আগের সেদিন
সেদিনটা ছিল ১৯৯৫ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর। তাজপুর মহেন্দ্রনাথ রায় ইনস্টিটিউশনের শতবর্ষপূর্তি উৎসব। প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান। ২২ বছর পর আবার তিনি সেই স্কুলে আসছেন। শতবর্ষের গেট উদ্বোধন হবে, সেইসঙ্গে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র রায়ের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন হবে। সেই কারণেই তাঁর প্রথম কর্মস্থল আমতার তাজপুরে মম এন রায় স্কুলে ফের পা রাখছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এর মধ্যে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। এই স্কুলেরই শিক্ষক ভারতের প্রথম নাগরিক হয়েছেন। বর্তমানে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। যাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল এই স্কুল থেকেই। মাত্র ১০৫ টাকা বেতন পেতেন। তাও ৭২ টাকা নিজের জন্য রেখে বাকিটা দিতেন স্কুলের উন্নয়নে।
[আরও পড়ুন:'বোন' মমতার ওপর আজও কেন 'ক্ষুব্ধ' দাদা প্রণব, আত্মজীবনীতে চাঞ্চল্যকর তথ্য]
কেমন ছিলেন ‘মাস্টারমশাই’?
ছাত্র চিত্তরঞ্জনবাবু আজও স্মৃতিমেদুর হয়ে যান মাস্টারমশায় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথা উঠলেই। স্মৃতিতে ডুবে তিনি বলে চলেন, এই কথা ভেবে মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে যে, আমার মাস্টারমশাই দেশের রাষ্ট্রপতি। দেশের সর্বোচ্চ আসেন অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। মনে পড়ে, মাস্টারমশাইয়ের হাত ধরে দামোদরের ধারে ঘুরতে যাওয়া। মউচাক ভেঙে মধু খাওয়া। আর গোল হয়ে রেডিও শোনা।
[আরও পড়ুন:সনিয়া গান্ধীর কথা শুনলে তিনি রাষ্ট্রপতি হতেন না, আত্মজীবনীতে বিস্ফোরক প্রণব]
স্কুল ছিল তাঁর প্রাণ
১৯৫৭ সাল। নভেম্বরের বিকেল। স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে তাজপুরে পা রাখলেন প্রণববাবু। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র চিত্তরঞ্জনই তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিচালন সমিতির সম্পাদকের বাড়ি। তারপর মাস্টারমশাইয়ের পাকাপাকি থাকার জায়গা হল তাঁদেরই বাড়িতে। চিত্তরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘কবিতা পড়তে ভালবাসতেন প্রণববাবু। আর তাঁর প্রিয় ছিল মায়ের হাতের রান্না। ডাল, পোস্ত আর মূলোশাক।'' তিনি ভোলেননি চক্রবর্তী বাড়ির কথা। ভোলেননি স্কুলকে। আর ভোলেননি তাঁর প্রিয় ছাত্রদের। তাইতো স্কুলের শতবর্ষপূর্তি উৎসবে এসেছিলেন প্রিয় ছাত্রের একটা চিরকুট পেয়েই। এসেই খোঁজ নিয়েছিলেন চক্রবর্তী বাড়ির ছোট্ট গোলকের। সেদিনের এক বছরের গোলককে কোলে নিয়ে কত ঘুরেছেন তিনি।
তাজপুরে ছিল তাঁর আত্মিক যোগ
তাঁর যে আত্মিক যোগ ছিল তাজপুরের সঙ্গে। তাই প্রোটোকল ভেঙে ছুটে গিয়েছিলেন চক্রবর্তী পরিবারের আহ্বানে। আব্দার করে বলেছেন, ‘খুব খিদে পেয়েছে। মায়ের হাতের চচ্চড়ি ভাত খাব।' সেদিন চিত্তরঞ্জনবাবুর মা রাধারানিদেবীর হাতের চচ্চড়ি ভাত খাওয়া হয়নি প্রণববাবুর। সময় অভাবে ডাবেব জল আর সন্দেশ খেয়েই চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে।
স্কুলের স্মৃতিতে ডুব প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির
এদিন
প্রাক্তন
রাষ্ট্রপতি
প্রণব
মুখোপাধ্যায়
আসছেন।
সেজে
উঠেছে
তাজপুর
এমএন
রায়
ইনস্টিটিউশন।
তাজপুরের
স্কুলে
শুরু
হয়েছে
উৎসব।
রঙিন
কাগজ
আর
ফুল
দিয়ে
সাজানো
হয়েছে
স্কুল।
লাগানো
হয়েছে
প্রাক্তন
রাষ্ট্রপতি
প্রণব
মুখোপাধ্যায়ের
‘কাট-আউট'।
আনন্দে
মেতেছেন
প্রাক্তন,
বর্তমান
ছাত্রছাত্রী
সকালে।
শিক্ষকরাও
নিজেদের
ধন্য
মনে
করছেন
প্রণববাবুর
এই
স্কুলে
চাকরি
করে।
এদিন
স্কুলের
অনুষ্ঠান
সেরে
তিনি
যেতে
পারেন
চক্রবর্তী
বাড়িতে।
স্কুলের
তরফে
নিরাপত্তারক্ষীদের
জানানো
হয়েছে
সে
কথা।
ফলে
রাষ্ট্রপতি
ফের
আমতায়
‘নিজের
বাড়িতে'
যেতে
পারেন,
কাটাতে
পারেন
বেশ
খানিক
সময়।