অভিষেকের পাশেই বাঁধ তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্তরা! তদন্ত চেয়ে বিস্ফোরক শিশির অধিকারী
তাজপুরে ইয়াসের তাণ্ডবে ভেঙে যাওয়া বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে সাংসদ তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তদন্তের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। বলেছিলেন, বাঁধের এই বিপর্যয় নিয়ে তদন্ত শুরুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের তরফে অনুরোধ করা হবে। অভিষেকের নিশানায় ছিলেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী ও প্রাক্তন সেচমন্ত্রী তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শিশির অধিকারী ওয়ানইন্ডিয়া বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে সেই তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে আনলেন বিস্ফোরক অভিযোগ।
অভিষেকের পাশে কারা?
শিশির অধিকারী বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই পাশে আজ যাঁদের ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁরাই ছিলেন বাঁধ তৈরির মূল দায়িত্বে। আমাদের দায়িত্ব ছিল তাঁদের উপরে। নীচুতলায় যাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁদের পাশে নিয়েই অভিষেক ঘুরছেন। যাঁরা বাঁধ তৈরির বরাত দিয়েছিলেন, যে কনট্রাক্টররা কাজ করছেন সকলকেই ওঁর পাশে দেখতে পেলাম। তাঁদের নিয়েই উনি ঘুরছেন। কিছু কথা বলতে হয়। তাই যা খুশি বলছেন।
তদন্ত হোক
বাঁধ ভাঙার তদন্ত হলে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন ডিএসডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই শিশিরবাবুকে ওই পদ থেকে সরানো হয়। তারপরও কয়েকবার বদলানো হয়েছে চেয়ারম্যানের পদ। দিঘায় দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকাগুলিকে ফের পুরানো রূপে ফেরাতে ডিএসডিএ-র কাজ দেখবেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও আলাপনবাবু তারপরই বিতর্কের পর মুখ্য সচিবের পদ থেকে অবসর নেওয়ায় ওই কাজ দেখার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে নতুন মুখ্য সচিবের হাতেই। এই অবস্থায় অভিষেক যে বাঁধ ভাঙার তদন্তের পক্ষে সওয়াল করেছেন সে প্রসঙ্গে শিশির অধিকারী বলেন, হোক না তদন্ত। সব কিছুই দেখা যাবে।
Recommended Video
কাজ শেষের আগেই
যেখানে বাঁধ ভেঙেছে সেই জায়গাটি নিয়ে শিশির অধিকারী জানান, সবে কাজ শুরু হয়েছিল। যে অংশ ভেঙেছে সেটা সরকারের অধিগ্রহণ করা জায়গা নয়। লোকের কাছে জায়গা চেয়েচিন্তে করা। পুরো টাকাও খরচ হয়নি। ওখানে আমফানে সামন্য কিছু ক্ষতি ছাড়া বড় কিছু হয়নি। ইয়াসের ধ্বংসলীলা বেশি থাকায় অসম্পূর্ণ কাজের জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। দিঘাতে তো বাঁধের কিছু হয়নি, দুর্নীতি হয়ে থাকলে দিঘা কীভাবে রক্ষা পেল? দিঘার মতোই তো তাজপুরে কাজ হচ্ছে। ওখানে কাজ শেষ হওয়ার কথা সামনের শীতে। তাও আমফানে ঠেকিয়েছে। ভাঙেনি। ইয়াসে গতি বেশি ছিল।
নিশানায় অখিল
রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি, তিনি এখন মৎস্যমন্ত্রীও। শিশির অধিকারী চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনিই ডিএসডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। অখিল গিরির বিধানসভা এলাকাতেই বাঁধের এই বিপর্যয়! শিশির অধিকারী বলেন, বিধায়ক তথা ভাইস চেয়ারম্যান কনট্রাক্টর ঠিক করেছিলেন। তাঁদের সকলকে আজ অভিষেকের পাশে দেখছি। আর চুরির কথা! ডিএসডিএ-তে তো জেলাশাসক, পুলিশ সুপার সকলেই রয়েছেন। সবাইকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে আমরা সব লুঠ করে নিয়ে চলে গেলাম! ভাইস চেয়ারম্যান ওখানে ২৪ ঘণ্টা বসে থাকতেন কেন, সেটাও দেখা হোক। একশোবার তদন্ত হতেই পারে। কিন্তু আবার বলব, ২০৫ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে ৭০ কোটি টাকা দিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল, যা শীতে শেষের কথা ছিল। ব্যাপক ক্ষতি যে জায়গাগুলোতে হয়েছিল সব লোকের কাছে চেয়েচিন্তে নেওয়া।
নাবালককে কটাক্ষ
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করে বলেন, সাবালকের ব্যর্থতা দেখতে নাবালককে আসতে হয়েছে। অধিকারী পরিবারের কারণেই যে মানুষের যে আজকের দুর্দশা, তা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন অভিষেক। এ প্রসঙ্গে শিশির অধিকারী বলেন, নাবালক এসেছে তো ভালো। দুর্নীতি ধরুন না, কে বারণ করেছে? আমি বহু পদ ছেড়েছি। দরকার হলে সাংসদ পদও ছেড়ে দেব। তবে আমারও কিছু বলার রয়েছে। আর আমরা মানুষকে বিপদে ফেলেছি কিনা বা আমাদের কী অবদান তা জেলার মানুষ নন্দীগ্রামে হারিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। চাইলে পরে আরও বুঝিয়ে দেব।