বিচ্ছিন্ন হতে পারে হরিশ্চন্দ্রপুর! তিনদিকের জলরাশিতে বন্যার অবনতি মালদহে
জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের জল নামছে, ঢুকছে বিহারের জল। আবার গঙ্গা ভাঙনেও বিপর্যস্ত মালদহের পরিস্থিতি। একে একে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে একের পর এক ব্লক।
বন্যা পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি হল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে। হরিশ্চন্দ্রপুরের দু-টি ব্লকের অন্তত ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুরের মধ্যে। এই দুই ব্লকের মধ্যে বাঙরুয়া ব্রিজ ভেঙে পড়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে।
বুধবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বন্যা পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হতে শুরু করে। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার থেকে জল নামছে। ফুলহার, মহানন্দা-সহ অন্যান্য নদী দিয়ে সেই জল ঢুকেই বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিচ্ছে মালদহ জেলায়। মালদহে আবার ঢুকছে বিহারের জল। অন্যদিকে গঙ্গা ভাঙনেরও শিকার এই জেলা।
ফলে মালদহের বন্যা কবলিত হরিশ্চন্দ্রপুরের উত্তর ও দক্ষিণ অংশ কার্যত জলের তলায় চলে গিয়েছে এদিন। বিদ্যুৎ যোগাযোগ একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকায়। রাস্তার ধারে উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। হরিশ্চন্দ্রপুর-গাজলে রাস্তার উপর দিয়ে বইছে জল। সেই জলের তোড়ে জায়গায় জায়গায় ভেঙে গিয়েছে রাস্তা।
হরিশ্চন্দ্রপুরের মালিওয়াড় বাঁধেও ফাটল দেখা দেয়। এরপরই সেই ফাঁটলের অংশে বাঁধ কেটে দেয় স্থানীয়রা। এর জেরে হরিশ্চন্দ্রপুরের বারদুয়ারি, হলদিবাড়ি বলতে গেলে জলের তলায় চলে গিয়েছে। এই দুই গ্রামে প্রবেশ করতে সাঁতারে যাওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই। হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশনগামী ব্রিজেরও বিপজ্জনক অবস্থা। যে কোনও মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে ওই ব্রিজ।
ত্রাণ নিয়েও ক্ষোভ দানা বেঁধেছে এলাকায়। ত্রাণ বণ্টনে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বন্যাকবলিত মানুষজন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশাসন সদর্থক ভূমিকা পালন করছে না। বহু এলাকায় ত্রাণ লুঠ হয়ে যাচ্ছে। হরিশ্চন্দ্রপুরেই ত্রাণ বিলি করতে এলে একদল ত্রিপল লুঠ করে নিয়ে পালায় বলে অভিযোগ। আর এই সুযোগ নিয়ে কালোবাজারির রমরমা শুরু হয়েছে এলাকায়।
বিশেষ করে আলু ও রান্নার গ্যাস নিয়ে কালোবাজারি চলছে। সুযোগ বুঝে কালোবাজারিরা তিন-চারগুণ দাম হাঁকাচ্ছে আলু ও গ্যাসের। মানুষ বাধ্য হচ্ছেন অনেক বেশি টাকা দিয়ে তা সংগ্রহ করতে। প্রশাসন সব জেনেও এই কালোবাজারির বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। বুধবার হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালের চিকিৎসকদের উদ্যোগে থানার সামনে একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পও খোলা হয়। বন্যা দুর্গতদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে জলবাহিত রোগের মোকাবিলা এবং জ্বরের ওষুধও সরবরাহ করা হয় এই ক্যাম্প থেকে।
এদিকে যে হারে মালদহের জল বেড়ে চলেছে তা শুধু হরিশ্চন্দ্রপুর নয়, রতুয়া, মানিকচক, সাহাপুর, কালিয়াচকের বন্যা পরিস্থিতিও জটিল আকার নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে, সন্দেহ নেই বিহার সীমান্ত লাগোয়া হরিশ্চন্দ্রপুরের বন্যা পরিস্থিতি এই মুহূর্তে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একদিকে বিহারের বন্যার জল, অন্যদিকে রায়গঞ্জ থেকে আসা বন্যার জল এবং ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ডের বৃষ্টির জলও গঙ্গার মাধ্যমে হরিশ্চন্দ্রপুরকে গ্রাস করছে। যেভাবে জলের ত্রিমুখী গ্রাসে পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর তাতে খুব শিগগিরি মালদহ শহরের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। যদিও, প্রশাসনের তরফে দাবি, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার সত্ত্বেও ত্রাণ বিলির সমস্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্গত মানুষের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়ার প্রাণপন চেষ্টা করা হচ্ছে।