বানভাসী বালুরঘাট, জটিল দক্ষিণ দিনাজপুরের বন্যা পরিস্থিতি
দক্ষিণ দিনাজপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি। এলাকার জল বের করতে বুধবার গভীর রাতে বালুরঘাট ব্লকের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঙারপাড়া এলাকায় জাতীয় সড়ক কেটে দেন এলাকাবাসীরা। দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সংকট
দক্ষিণ দিনাজপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এলাকার জল বের করতে বুধবার গভীর রাতে বালুরঘাট ব্লকের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঙারপাড়া এলাকায় জাতীয় সড়ক কেটে দেন এলাকাবাসীরা। বন্ধ হয়ে যায় বালুরঘাট-হিলি রুটে যান চলাচল। আটকে পড়ে বেশ কয়েকটি বাস। টিউবওয়েলগুলি জলের নিচে চলে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সংকট।
দক্ষিণ দিনাজপুরের আত্রেয়ী, পুনর্ভবা, টাঙন ও ইচ্ছামতি নদীর জল বিপদ সীমার ওপর দিয়ে বইছে। ফলে নদীর জল ঢুকে পড়ছে জনবসতি এলাকায়। আত্রেয়ী সহ অন্য নদীগুলির বাঁধে মোট ২২ জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।
বালুরঘাট শহরের ত্রিধারা, খিদিরপুর, চকভৃগু এলাকায় বাঁধ ভেঙে জলের তলায় বিভিন্ন ওয়ার্ড। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ চকভৃগু এলাকায়। বৃষ্টির তোরে ভেঙে বসে গেছে পাগলিগঞ্জ এলাকায় জাতীয় সড়ক।
জল ঢুকেছে বিভিন্ন সরকারি দফতরেও। প্রতিটি ব্লকে ২৪ ঘণ্টার জন্য খোলা হয়েছে কন্ট্রলরুম। প্রশাসনের তরফ থেকে বন্যা দুর্গতদের জন্য খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। প্লাবিত এলাকায় পাঠানো হচ্ছে ত্রাণ। বেশ কিছু জায়গায় ত্রাণ নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বন্যা দুর্গতরা।
ক্ষোভ রয়েছে পানীয় জল নিয়েও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ জলের পাউচ সরবরাহ করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় কম। স্বাভাবিকভাবেই দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। জেলা প্রশাসন ও পুরসভার পক্ষ থেকে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
বর্তমানে পিএইচই-র দু'টি মেশিন থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৬০ হাজার পাউচ জল উৎপাদন করা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দু'লাখ পাউচ জলের চাহিদা রয়েছে বলে প্রশাসনের সূত্রে খবর। ফলে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। পানীয় জলের ঘাটতি মেটাতে বাইরের জেলা থেকে মেশিন আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বালুরঘাট ঘুরে গিয়েছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ভেঙে যাওয়া বাঁধ সাময়িক ভাবে সংস্কারের চেষ্টা করছে জেলা প্রশাসন। কিছু কিছু জায়গায় স্থানীয়রাই উদ্যোগ নিয়ে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করেছেন।
বন্যার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কমপক্ষে ২ লক্ষ মানুষ। বেসরকারি মতে, গত কয়েক দিনে বন্যায় কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোট ২৮৪টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। বিলি করা হয়েছে ৬০ হাজার ত্রিপল।
প্রতিটি ব্লকে খোলা হয়েছে মেডিক্যাল ক্যাম্প। উদ্ধারকার্যে নেমেছে এনডিআরএফের দুটো টিম। রয়েছে ১২ টি স্পিড বোটও। সরকারের পাশাপাশি দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।