কলকাতা যেন বিরল বৃক্ষের মৃত্যু উপত্যকা! বিশেষজ্ঞদের কাঠগড়ায় নগর পরিকল্পনা
কলকাতা যেন বিরল বৃক্ষের মৃত্যু উপত্যকা! বিশেষজ্ঞদের কাঠগড়ায় নগর পরিকল্পনা
রাস্তার মাঝে চিত হয়ে পড়ে দেড়শো বছরের পুরনো বটগাছ। দূরে কোনও গলির মুখে সমূলে উৎপাটিত পিপুল, কোথাও অশোক। সার সার দিয়ে পড়ে থাকা অগুনতি নিষ্প্রাণ কাষ্ঠল মৃতদেহ। তারই নিচে আটকে জড় ভরত হয়ে পড়া শহুরে জনজীবন, পরিস্থিতি থেকে বোরনোর পথ খুঁজে চলেছে অবিরাম। বিশেষজ্ঞরা এই ব্যর্থতার সিংহভাগ দায় নগর পরিকল্পনার ওপর চাপিয়েছে। বিরল বৃক্ষের বিপর্যয় নিয়ে মুখ খুলেছে কলকাতা পুরসভাও।
শিবপুরে বিপর্যয়
ফনী, বুলবুলের দাপট সামলে দিয়েছিল হাওড়ার শিবপুরের ২৭০ বছরের ঐতিহাসিক বিরল বটগাছটি। মাটি আঁকড়ে পড়েছিল ঐতিহ্য মণ্ডিত বোটানিক্যাল গার্ডেনের এক কোণে। লড়ে চলেছিল অবিরাম। কিন্তু সে লড়াই শেষ হয় গত ২০ মে। ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া হাওয়ার ঝাপটায় নিজেকে আর সামলাতে পারেনি। পপাত ধরণীতলে শেষ আশ্রয় নিয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই বটবৃক্ষ। যা শুনে এবং দেখে হাহাকার শুরু করেছে বাঙালি। বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রাক্তন এক কর্তার কথায়, আগে থেকে সজাগ গলে পরিস্থিতি সামলানো যেত। বোটানিক্যাল গার্ডেনে অবিলম্বে অবৈধ বৃক্ষছেদন বন্ধ করার বার্তাও দিয়েছেন ওই প্রাক্তন কর্তা।
কলকাতায় বৃক্ষের মৃত্যু উপত্যকা
ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডব সহ্য করতে পারেনি কলকাতার পার্ক স্ট্রিট, বেডন স্ট্রিট, সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ এবং সার্দার্ন অ্যাভেনিউ-এর ধারে এক সময় সার সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষেরও বেশি প্রাচীন সহস্র বট, পিপুল ও অশোক গাছ। কলকাতা পুরসভার প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী শহরজুড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি গাছ ভেঙে পড়েছে। কোথায় বাড়ি সমেত ভেঙে পড়েছে আস্ত গাছ। কোথায় বৃক্ষের চাপে চ্যাপ্টা হয়েছে যানবাহন।
পুরনো অবস্থায় ফিরতে কত সময়
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জেরে যেভাবে কলকাতা জুড়ে গাছ নষ্ট হয়েছে, তাতে আশঙ্কিত হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ তাঁদের হিসেব অনুযায়ী শহরকে আগের মতো সবুজের ছায়া দিয়ে মুড়তে দশ থেকে পনেরো বছর লেগে যাবে। যদিও কলকাতা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৫ লক্ষ গাছ। সে নিরিখে ভেঙে পড়া বৃক্ষের সংখ্যা নূন্যতম হলেও, সেগুলি প্রাচীন হওয়ায় কষ্ট বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কার ওপর দায়
কলকাতায় এভাবে প্রাচীন বৃক্ষ ভেঙে পড়ার জন্য অদূরদর্শী নগর পরিকল্পনাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, শহর জুড়ে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎবাহী তার, কেবল লাইন, গ্যাস লাইন এবং দলের লাইন টানা হয়েছে ব্যাপক হারে। কোথাও সেই সব তারের জঙ্গলের ওপর করা হয়েছে বৃক্ষরোপন কিংবা কোথাও যন্ত্র সভ্যতা গাছের শিকর ভেদ করেই চলে গিয়েছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। শক্ত মাটির ভিত না পাওয়ার কারণেই এই বিপর্যয় বলে দাবি করা হয়েছে। তাই পরবর্তীকালে বৃক্ষরোপনের ক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরও বেশি সজাগ ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত।
তৃণমূল না বিজেপি- কোন দিকে ঢলে শোভন! আম্ফানের তাণ্ডবে স্পষ্ট অনেক কিছুই