সেন্ট্রাল হলে কুশল বিনিময়, নৈশভোজে আমন্ত্রণ, মমতা-মুকুল দূরত্ব তবে 'সাজানো ঘটনা' ছিল না তো? জল্পনা
নয়াদিল্লি, ১০ ডিসেম্বর : প্রায় ১০-১১ মাস পর সংসদের সেন্ট্রাল হলে একদাপ্রিয় মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। 'দিদি কেমন আছেন? শরীর ঠিক তো?' মুকুলের বিনয় ভরা প্রশ্নের উত্তরে এক গাল হেসে মমতা জানালেন তিনি ঠিক আছেন। পাল্টা মুকুলেরও কুশল জানতে চাইলেন দিদিমণি। এই 'হঠাৎ' সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়কে দুপক্ষই সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে ব্যখ্যা করলেও মমতা-মুকুল মমতার এই সমীকরণে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা শুরু।
সারদা কেলেঙ্কারিতে ডাক পাওয়ার পর থেকে প্রায় ১ বছর মুকুলকে কার্যত একঘরে করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলে থাকলেও তৃণমূলের একসময়ের দ্বিতীয় ব্যক্তি মুকুলের গুরুত্ব ছাঁটার ক্ষেত্রে ছিঁটে ফোটা দেরি করেননি মমতা। দীর্ঘ দশ-এগারে মাস মমতা-মুকুলের সম্পর্কে বরফ জমেছিল। বৃহস্পতিবার সংসদে সে বরফ গলারই ঈঙ্গিত মিমল।
শুধু সেন্ট্রাল হল নয়, এদিন রাতে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে আয়োজন করা মমতার নৈশভোজেও আমন্ত্রণ গিয়েছিল মুকুল রায়ের কাছে। দিদির আমন্ত্রণ পেয়ে তড়িঘড়ি ছুটে আসেন মুকুলও। অতিথিরা চলে যাওয়ার পর ডেরেক ও অভিষেককে সঙ্গে নিয়ে মুকুলের সঙ্গে খোস মেজাজে গল্পও করেন মমতা। ["যে চুরি করবে সেই চোর, দল নয়", সারদা কাণ্ডে মদনকে সাইডলাইন করে মন্তব্য মমতার!]
সেন্ট্রাল হলের 'আচমকা সাক্ষাৎ' পূর্বপরিকল্পিত?
তৃণমূলের একাংশের দাবি, সেন্ট্রাল হলে মমতা-মুকুল সাক্ষাৎ মোটেই আচমকা নয়। এটা পূর্বপরিকল্পিতই ছিল। মুকুল ও মমতার মধ্যে দুরত্ব ঘোচানোর কাজ অনেকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিনের মমতা-মুকুলের দ্বৈত সাক্ষাৎ সেই জল্পনাকেই মান্যতা দিল।
কিন্তু প্রশ্ন হল, ১১ মাসে ডানা ছাঁটা মুকুলকে ফের কাছে টানার চেষ্টা কেন করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের একাংশের মতে সংগঠনের কাজে মুকুল রায়ের অভাব বুঝতে পারছে তৃণমূল। মুকুল যেভাবে গোটা রাজ্যে উঁচু থেকে নিচুতলার কর্মীদের সংগঠিত করে রাখতে পারতেন সেই কাজ দলের অন্য কেউ করতে পারছে না। সামনেই বিধানসভার বড় লড়াই। কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না মমতা। তাই মুকুলের সঙ্গে ফের ঘণিষ্ঠতা।
মমতা-মুকুল দুরত্ব তবে কি সাজানো ঘটনা?
অবশ্য রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, পুরোটাই 'গট আপ' বিষয়। সবাই জানে মদন ও মুকুল মমতার দুই হাত। সারদার কেলেঙ্কারিতে মদনের নাম জড়ানোর সময়ই মমতা জানতেন প্রকাশ্যে মদনের বিরুদ্ধে এত প্রমাণ আছে যে তাঁকে কোনওমতেই বাঁচানো যাবে না। মদনকে জেলে যেতেই হবে।
সারদা তদন্তে মুকুলের দিক থেকে নজর ঘোরাতেই কি মমতার এই পাওয়ার প্লে?
এরপর মুকুলকেও যদি জেলে ঢোকানো হয় তৃণমূল বিশাল বড় একটা ধাক্কা খাবে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে থেকে পরিকল্পনা করে মুকুলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার অভিনয় করেছিলেন। কারণ বিজেপির টার্গেট ছিল মমতা। মমতা-মুকুল দুরত্ব তৈরি হলে মুকুলকে সেভাবে গুরুত্ব দেবে না বিজেপি তা জানতেন মমতা। তাই এই ডানা ছাঁটা, দুরত্ব এসব অভিনয়।
গত ১০ মাসে সারদা কেলেঙ্কারিতে আর সেভাবে মুকুলের নাম ওঠেনি। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন এবার ধীরে ধীরে বরফ গলার গল্প সাজিয়ে আবার সব আগের মতো করতে চাইছেন মমতা। আর কয়েকদিনের মধ্যেই দলের মধ্যে ফের স্বমহিমায় দেখা যাবে মুকুলকে। আসল কথা হল, মমতা-মুকুলের সম্পর্কে কোনওদিনও চিড়ই ধরেনি। পুরোটাই ছিল রাজনীতিবিদ মমতার পাওয়ার প্লে।
মুকুলও প্রথম থেকে পুরোটাই জানতেন, আর সেই কারণেই দলের ভিতর কোণঠাসা হয়ে গিয়েও দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেননি। বিজেপি, কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করাটাও এই মাস্টার প্ল্যানেরই একটি অংশ।
অস্বস্তিতে মুকুল অনুগামীরা
এদিকে মুকুলপন্থী নেতাদের একাংশ মমতা-মুকুলের এই ঘণিষ্ঠতা বাড়ায় মর্মাহত। তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে মুকুল নতুন দল গড়ার কথা ভাবছেন বলে যে জল্পনা উড়েছিল তা নিয়ে মুকুল রায় নিজে পরিস্কার করে কিছু না বললেও মুকুল অনুগামীরা জানিয়েছিলেন নতুন দল তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। দল নথিভুক্ত ও প্রতীক চিহ্নের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদনও করা হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু মমতা-মুকুলের নতুন করে ঘনিষ্ঠতায় নতুন দল তৈরি সেগুড়ে বালি সে কথা ভালভাবেই বুঝতে পারছেন তারা। কিছুদিন আগেই মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু প্রকাশ্য সভায় বলেছিলেন, "যারা ভাবছেন তৃণমূল থেকে বেরিয়ে গিয়ে মুকুল রায় আলাদা দল গড়বেন, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।" কিন্তু তখন সে কথাকে সেভাবে তখন গুরুত্ব দেননি তারা। তবে এদিনের মমতা-মুকুল সমীকরণ তাদের কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে।
এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়ুন
(ছবি) ২১ জুলাই সমাবেশ, অভিষেকের 'সাধ্য' প্রমানের জন্য মঞ্চ তৈরি মমতার
মোক্ষম 'সৌরভ' চাল দিয়ে বাজিমাত মমতার!
'ছবি তোলার জন্য জামা খুললে নিজেই ছবি হয়ে যাবেন', অধীরকে কটাক্ষ মমতার
মমতার 'বাচ্চা মেয়ে' আর মুলায়মের 'ছোট ছেলেরা' ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ভারতের জন্য!