বাড়ির পুজোয় সমান সক্রিয় প্রণব, নবপত্রিকা স্নান থেকে চণ্ডীপাঠ- উজ্জ্বল উপস্থিতি তাঁর
নবপত্রিকা স্নান থেকে শুরু করে ঘটস্থাপনের মাধ্যমে পুজোর সূচনা করেছেন নিজের হাতে। তারপর শুদ্ধচিত্তে করেছেন চণ্ডীপাঠ। পুরোপুরি অন্য মেজাজে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।
এতটুকু বদলাননি তিনি। যেদিন রাজনীতিতে ছিলেন না, সেদিন যেমন বাড়ির দুর্গাপুজোয় মেতেছেন, ভারতের 'ফার্স্ট পার্সন' হয়েও একইরকম অংশগ্রহণ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আর আজ সেই প্রোটোকলও নেই। নেই ব্যস্ততা। তিনি এখন প্রাক্তন। তাই সদ্য প্রাক্তন হওয়ার পর প্রণব মুখোপাধ্যায় এবার বাড়ির পুজোয় পুরোপুরি 'ঘরের ছেলে' হয়ে উঠেছেন।
ষষ্ঠীর বিকেলেই তিনি পৌঁছে গিয়েছেন তাঁর মিরিটির বাড়িতে। সপ্তমীর সকালে তাঁর হাত ধরেই গৃহপ্রবেশ ঘটেছে মা দুর্গার। নবপত্রিকা স্নান থেকে শুরু করে ঘটস্থাপনের মাধ্যমে পুজোর সূচনা করেছেন নিজের হাতে। তারপর শুদ্ধচিত্তে করেছেন চণ্ডীপাঠ।
প্রতিবছরের
এই
দিনটা
পুরোপুরি
অন্য
মেজাজে
দেখা
গিয়েছে
প্রাক্তন
রাষ্ট্রপতিকে।
এবারও
তার
অন্যথা
হল
না
ফি
বছর
দুর্গাপুজো
এলেই
তিনি
ছুটে
আসেন
গ্রামের
বাড়িতে।
বিদেশমন্ত্রক,
অর্থমন্ত্রক,
শেষমেশ
রাষ্ট্রপতি
হয়ে
দেশের
সাংবিধানিক
প্রধান
হওয়াও
তাঁর
সেই
অমোঘ
টানে
প্রতিবন্ধক
হতে
পারেনি।
রাষ্ট্রপতি
হওয়ার
পরও
তিনি
প্রতিটি
বছরই
উপস্থিত
থেকেছেন।
এবার
সদ্য
প্রাক্তন
হয়ে
তিনি
ষষ্ঠীর
দিনই
হাজির
হয়ে
গেলেন
মিরিটিতে
নিজের
বাড়ির
দুর্গাদালানে।
মঙ্গলবার বিকেলে সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে কীর্ণাহার স্কুল মাঠে নামেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তারপর যথারীতি দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘুরে মিরিটিতে নিজের বাড়িতে পৌঁছন তিনি। প্রথমে গিয়েই তিনি মায়ের মন্দিরের প্রতিমা দর্শন করেন। সপ্তমীর সকালে কুয়ে নদীতে যান নবপত্রিকা স্নান করাতে। তারপর দুর্গাদালানে ঘটস্থাপন করা হয়। যথারীতি চণ্ডীপাঠ করেন প্রণববাবু।
পরণে সাদা ধুতি, গায়ে উত্তরীয়। ধোপদুরস্ত পৌরহিত্যের পোশাকে ভারতের প্রাক্তন ফার্স্ট পার্সন। নিজেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন বাড়ির পুজোয়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির আগমনে জমজমাট মিরিট গ্রাম। জমজমাট মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো। এবার আর আগের মতো নিরাপত্তার কড়াকড়ি নেই। তবু প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলে কথা, যেটুকু নিরাপত্তা না থাকলে নয়, শুধু সেটুকুই। ফের যেন প্রণব মুখোপাধ্যায় গ্রামের পল্টু হয়েই হাজির বাড়ির দুর্গাপুজোয়।
১৮৯৬ সালে শুরু হয়েছিল এই দুর্গাপুজোর। প্রণববাবুর দাদু জঙ্গলেশ্বর মুখোপাধ্যায় সন্তান লাভের আশায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু করেন দুর্গা আরাধনা। তারপরই জন্মগ্রহণ করেন প্রণবাবুর বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়। সেই থেকেই এই পুজো চলে আসছে। সমস্ত ব্যস্ততা সরিয়ে রেখে প্রণববাবু বরাবর বাড়ির পুজোয় উপস্থিত থেকেছেন।
মাঝে শুধু এক বছর পুজো বন্ধ ছিল। ১৯৭২ সালে বন্যার কারণে বন্ধ ছিল মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো। আর ১৯৫৬ সালে দুর্গাপ্রতিমা ভেঙে যাওয়া পুজো হয়েছিল ঘটে। তিনবার প্রণববাবু অংশ নিতে পারেননি। একবার ভারতের হয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘে প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছিলেন। সেটা ছিল ১৯৯৫ সাল। প্রণববাবু তখন বিদেশমন্ত্রী।
আর দু-বার নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন উত্তরপ্রদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে। বাকি সমস্ত বছরেই তাঁর উপস্থিতি ছিল বাড়ির পুজোয়। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও তিনি সমানে হাজির থেকেছেন পুজোয়। যথারীতি চণ্ডীপাঠ করেছেন দুর্গাদালানে। আজও সেই ধারা বজায় রেখে চলেছেন প্রণববাবু।