শেষ দফার আগে তপ্ত রাজ্য, কাশীপুরে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকে নিগ্রহ তৃণমূল কংগ্রেসের
শুরু হয়েছিল গতকালই। বেলঘরিয়ায় শাসক দলের গুন্ডারা সিপিএম নেতা সায়নদীপ মিত্রের ওপর হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার সকালে রথতলা মোড়ে অবরোধ করে সিপিএম। অবরোধ চলার সময় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা লাঠি, রড, হকি স্টিক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ থাকলেও তারা ছিল দর্শক। মূলত শাসক দলের কর্মীরাই মারধর করে অবরোধ তুলে দেয়। এদিকে, সায়নদীপবাবুর ওপর যারা হামলা চালিয়েছিল, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করলেও সকলেই জামিন পেয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, পুলিশ লঘু ধারায় মামলা রুজু করার ফলেই জামিন পেয়েছে এরা।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে সকাল দশটা নাগাদ কাশীপুরে। সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক কল্যাণ সমাজদার তাঁর অসুস্থ ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিলেন। তখন জনা দশেক যুবক মোটরবাইকে তাঁর পিছু নেয়। সবার মুখ হেলমেটে ঢাকা ছিল। ভয় পেয়ে কল্যাণবাবু দলের জোনাল কমিটির অফিসে ঢুকে পড়েন। কিন্তু ওই যুবকরা তাতেও ক্ষান্ত দেয়নি। তারাও ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং টেনেহেঁচড়ে কল্যাণবাবুকে রাস্তায় বের করে আনে। তার পর মাটিতে ফেলে লোহার রড দিয়ে পেটায়। তাঁর পায়ের হাড় ভেঙে যায়। কল্যাণবাবুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রহৃত হন আরও দুই সিপিএম কর্মী। পরে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনার খবর চাউর হতেই গোটা কাশীপুর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বিরাট পুলিশবাহিনী নিয়ে হাজির হন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জিয়াউর রহমান। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস অফিসে তিনি যান অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে। কিন্তু অন্তত ৬০-৭০ জন তাঁকে ঘিরে ধরে। প্রথমে চলে কুৎসিত গালিগালাজ। তার পর ধাক্কা মেরে ওই পুলিশকর্তাকে দলীয় অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। অভিযোগ, এই সময় সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় থাকেন কাশীপুর থানার ওসি শেখ মহম্মদ কলিমুদ্দিন। অপমানিত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ক্ষোভে-হতাশায় এলাকা ছেড়ে যান। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও অস্বীকার করেন। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, "কল্যাণবাবুকে খুন করতেই হামলা চালানো হয়েছিল। আসলে তৃণমূল কংগ্রেস বুঝতে পেরেছে, মানুষ ওদের পাশে নেই। তাই ভয় দেখিয়ে ভোট বানচাল করতে এ সব করছে ওরা।"
এদিনই আবার মুর্শিদাবাদ জেলার শক্তিপুরের মানিক্যহার এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকরা কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর গাড়ি আটকায়। তিনি এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াচ্ছেন, এই অভিযোগ করা হয়। পরে সংবাদমাধ্যমকে অধীরবাবু বলেন, "কী আশ্চর্য! ওরা তো আমাকে গাড়ি থেকে নামতেই দিল না। আমি চুপ করে ভিতরে বসে রইলাম। তার পরও কী করে আমি সন্ত্রাস ছড়ালাম, সেটাই বুঝলাম না।" তাঁর আশঙ্কা, সোমবারে শেষ দফার ভোট শান্তিপূর্ণ হবে না।
অন্যদিকে, ডায়মন্ড হারবারে এক বিজেপি কর্মীকে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে মারধর করে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা। পুলিশে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে অভিযোগ। উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরেও কয়েকজন সিপিএম নেতার বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। অভিযোগ সেই শাসক দলের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, নদীয়ার চাকদহে কংগ্রেস নেতা সমর সিংহ রায়কে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে এলাকায় কংগ্রেস কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। এই খবর শুনে রবিবার সকালে সদলবলে সেখানে গিয়েছিলেন সমরবাবু। তখনই তাঁর ওপর হামলা চলে।
সব ঘটনায় দায় অস্বীকার করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে।