বরানগর ও খড়িয়পের আশ্রমে দুর্গারূপে পূজিতা হন মা সারদা
বরানগর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমে দুর্গারূপে পূজিতা হন মা সারদা। দশভূজা দুর্গা নন, এই আশ্রমে আরাধ্যা স্বামী বিবেকানন্দের 'জ্যান্ত দুর্গা'। ৭২ বছর ধরে মা সারদার প্রতিকৃতিকে দুর্গারূপে পুজোই রীতি এই আশ্রমে। চারদিন চার রূপে এখানে পুজো করা হয় মা সারদাকে। মা সারদাকে দুর্গারূপে পুজো শুরু হওয়ার পর বিসর্জন রীতি উঠে গিয়েছে এই আশ্রমে। শেষবার ১৯৪৪ সালে দুর্গা প্রতিমার নিরঞ্জন হয়েছিল।
শুধু বরানগরেই নয়, মা সারদা পূজিতা হন হাওড়ার আমতার খড়িয়পে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ প্রেমবিহারে। এখানে ১৮ বছর ধরে দশভূজা দুর্গার সঙ্গেই দ্বিভূজা মা সারদাও পূজিতা হন। এখানে দশভূজা দেবী প্রতিমার বিসর্জন হলেও মা সারদার শুধু 'ঘরবদল' হয়। দু'টি পুজোই বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে হয়ে থাকে। বরানগরে চারদিনে মায়ের চার বেশ অর্থাৎ মায়ের প্রতিকৃতির বেশ পরিবর্তন করাই রীতি। খড়িয়পে কিন্তু এক রূপে পূজিতা শ্রী শ্রী মা।
ষষ্ঠীতে যথারীতি বেলগাছতলায় দেবীর বোধন, অধিবাস, আমন্ত্রণ পর্ব সারা হয়। সপ্তমীতে বাঙালির ঘরে ঘরে দেবী দুর্গার যেমন আগমন ঘটে, এই আশ্রমেও মায়ের আগমনী একইভাবে। বরানগরে মহাসপ্তমীর দিন সারদা মায়ের রাজরাজেশ্বরী বেশ। মাথায় থাকে সোনার কিরীট, বেনারসী ও আভরণে সুসজ্জিতা মা। অষ্টমীতে যেগিনী বেশী সারদা মা যেন তপস্বিনী উমা। গৈরিকবসনা, শিবস্বরূপা জটাজুটসমাযুক্তা তাঁর রূপ।
নবমীর দিন তিনি কন্যাবেশী রূপে আবির্ভূতা। এইদিনই কুমারী রূপে তাঁর পুজো সাধন হয়। দশমীতে মায়ের ষোড়শী বেশ। মা যে এদিনই পাড়ি দেন কৈলাসে। এই আশ্রমে শুধু ঘট বিসর্জনই রীতি। প্রতিমার বিসর্জন হয় না। চারদিন বৈচিত্রের মধ্যে দিয়েই শেষ হয় এই অভিনব পুজো।
কিন্তু কেন বিসর্জন হয় না? কবে থেকে চলে আসছে এই রীতি? সন্ন্যাসী মহারাজদের ব্যাখ্যায়, আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী সত্যানন্দ দেবের মন ব্যাথিত হয়ে উঠেছিল মায়ের নিরঞ্জনে। তারপর সিদ্ধান্ত হয়েছিল মায়ের বিসর্জন হবে না এখানে। তখন অবশ্য দশভূজা দেবী দুর্গার পুজোই হত আশ্রমে। ১৯৪৫ সালে তিনিই মা সারদার পুজোর প্রচলন করেছিলেন এই আশ্রমে। স্বামী বিবেকানন্দ বর্ণিত মা সারদা তো জ্যান্ত দুর্গা। তিনি তো সাধারণ মা নন।
তিনিই দুর্গা, তিনিই সরস্বতী, তিনিই লক্ষ্মী। ১৯৫৮ সাল থেকে বরানগর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমে সারদা মূর্তিতে দুর্গাপুজো চলে আসছে। নিত্যপূজিতা সারদা মূর্তিটিই লক্ষ্মী ও সরস্বতী রূপেও পূজিতা হন। ওই বছরই সারদা মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তিটি ট্রেনে করে সিউড়ি থেকে বরানগরে এই কাচের মন্দিরে আনা হয়েছিল। মায়ের পিছন দিকে আটটি হাত লাগানো হয়েছিল। দ্বিভূজা মা সারদা হয়েছিল দশভূজা।
আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী সত্যানন্দদেব যে ভাব, ভক্তি ও প্রআণের অনুরাগ দিয়ে মা সারদার দুর্গারূপের পুজো করেছিলেন, সেই ভাবধারা আজও অব্যাহত। ভক্তি আর নিষ্ঠাই এই পুজোর একমাত্র মন্ত্র। সেই একই ভাবধারায় আমতার খড়িয়পে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ প্রেমবিহারে পূজিতা হয়ে আসছেন মা সারদা। এখানে বিসর্জনের পরিবর্তে ঘরবদল অনুষ্ঠান হয় লক্ষ্মীপুজোর পর।