কুড়চি ফুলের মালা পরিয়ে সন্ধিপুজোই রীতি পালবাড়িতে, প্রকৃতি পুজোর অনুষঙ্গে দুর্গা-বন্দনা
শারদীয়া দুর্গোৎসবে সন্ধিপুজোর মাহাত্ম্যই আলাদা। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট আর নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট- মোট ৪৮ মিনিটের এই পুজোর আঙ্গিক তাই একেবারেই ভিন্ন।
শারদীয়া দুর্গোৎসবে সন্ধিপুজোর মাহাত্ম্যই আলাদা। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট আর নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট- মোট ৪৮ মিনিটের এই পুজোর আঙ্গিক তাই একেবারেই ভিন্ন। রক্তচন্দন থেকে রক্তবস্ত্রে শোভিত পুজোয় অপরাজিতা ফুলের ব্যবহার সর্বজনবিদিত। কিন্তু হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের সন্ধিপুজো এ ব্যাপারে একেবারেই ব্যতিক্রম। এ বাড়িতে সন্ধিপুজো হয় মাকে কুড়চি ফুলের মালা পরিয়ে। বলিদানের সময় দেবীর গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় রঙ্গন ফুলের মালা।
প্রচলিত রয়েছে, তিন শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো। মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও এই রীতি আজও চলে আসছে। কুড়চি ফুলের গাঁথা মালা না পরালে সন্ধিপুজোই সিদ্ধ নয়, এই বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে পালবাড়িতে। সেই ধারা অব্যাহত উদয়নারায়পুরের কুড়চি গ্রামের পালবাড়িতে। কুড়চি ও রঙ্গন ফুলের গাঁথা মালা এ বাড়িতে প্রকৃতি পুজোর অনুষঙ্গ হিসেবেই ব্যবহার হয়।
বাড়ির বর্তমান সদস্যরা জানান, বিগত ৯০ বছর ধরে টানা চলছে এই পুজো। ৯০ বছর আগে অপেরা পাল এই পুজো নতুন করে প্রচলন করেন। এই দুর্গাপুজো উপলক্ষে পালবাড়ির ৩০টিরও বেশি পরিবার মিলিত হন গ্রামের বাড়িতে। এদের বেশিরভাগই এখন শহরবাসী। কিন্তু দুর্গাপুজো গ্রামের বাড়িতে আসা চাই-ই।
বিরাট দুর্গা দালান প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে চলেছেন। এ গ্রামে গেলেই প্রাচীনত্বের ছোঁয়া পরতে পরতে উপলব্ধি হবে। দুর্গাদালান, নাটমন্দির, শিবমন্দির, আর সীতারামের মন্দির নিয়ে পালবাড়ির দেবালয়ের ঐতিহ্য স্মারক হয়ে রয়েছে কুড়চি গ্রামে। পালবাড়ির দেবালয়ে সবদেবজেবীই নিত্যপূজিত হন। তারপর দুর্গাপুজো কদিনও সব মন্দিরেই অতি-উপাচারে পুজো হয়।
পালবাড়ির দেবালয়ের দুর্গাদালান মহালয়ার পর থেকে উৎসবমুখর। এ বাড়ির দুর্গাপুজোয় দর্শনার্থী হিসেবে ভিড় জমান উদয়নারায়ণপুরের হরিহরপুর, বিনোদবাটি, সীতাপুর, প্রতাপচকের বাসিন্দারা। দূর-দূরান্ত থেকেও ঐতিহ্যের টানে ভিড় জমান অনেকে। এ বাড়ির পুজোয় বলিদান হয় না। বলিদানের সময় রঙ্গন ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়া হয়।