৩৫৪ বছরের পুরনো শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়িতে কাত্যায়নী ব্রত ঘিরে কোন ইতিহাস ফিসফিস করে আজও
শরতের মৃদুমন্ত বাতাস এখানে খেলে যায় কাশের বনে। কলকাতা থেকে শান্তিপুরের রাস্তা ধরলেই পুজোর গন্ধ যেন আরও জোরালোভাবে বুক জোড়া নিঃশ্বাসে মিশে যেতে শুরু করে।
শরতের মৃদুমন্ত বাতাস এখানে খেলে যায় কাশফুলের বনে। কলকাতা থেকে শান্তিপুরের রাস্তা ধরলেই পুজোর গন্ধ যেন আরও জোরালোভাবে বুক জোড়া নিঃশ্বাসে মিশে যেতে শুরু করে। আর সেই শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ির সামনে আসতেই , সময় যেন থমকে যায়। চোখের সামনে বনেদিয়ানার খিলান, দুর্গা দালান আজ থেকে বহু বছর পুরনো এক বাড়ির গল্প যেন অকপটে বলে যায়। যে বাড়িতে এককালে কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে পুজো হত বংশের বিগ্রহ রাধারমণের। কিন্তু বৈষ্ণব বংশে যেখানে রাধারমণের পুজো হত সেই বংশে কীভাবে দুর্গাপুজোর প্রচলন শুরু হল? উত্তর জানতে চলে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়।
৩৫৪ বছরের ইতিহাস বুকে নিয়ে চলেছে বড় গোস্বামী বাড়ির পুজো
শান্তিপুরের এই বাড়ির পুজো পার করেছে ৩৫৪ বছর। এবাড়ির পুজোয় সাড়ম্বরে পূজিতা হন দেবী কাত্যায়নী। উমা নয়, কাত্যায়নী আরাধনাতেই এই বাড়ির দুর্গাপুজোয় এককালে বর্ণাঢ্য আয়োজন হত। বাড়ির নিজস্ব পারিবারিক পুঁথি মেনে এই পুজোর আয়োজন হয়। পুজোয় দর্শনার্থীরা আসতে পারলেও, পুজোর আচারে হাত ছোঁয়াানোর অধিকার নেই বংশের বাইরের কারোর। এমনভাবই গত ৩০০ বছর পার করে ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে এই বাড়ি।
মান সিংহের বাংলা আক্রমণের ঘটনা
কথিত রয়েছে বৈষ্ণব বংশে কখনওই চণ্ডী আরাধনা হয় না। তবে বাংলার বনেদি বাড়ির পুজো-ইতিহাস ঘাঁটলে হয়তো এই চিরাচরিত নিয়মের উল্টো স্রোতও ধরা পড়তে পারে। তেমনই এক ইতিহাস বলে যায় শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ির পুজো। যেখানে পুজোর ইতিহাসে রয়েছে বাংলার মান সিংহের আক্রমণের ঘটনা। যার জেরে বাড়ির শ্রীরাধারমণের মূর্তিটি তৎকালীন বসন্ত রায়ের পরিবার তা তুলে দেয় তাঁদের বংশের গুরুদেব শ্রীঅদ্বৈতের পৌত্র মথুরেশের হাতে। মথুরেশ গোস্বামী এরপর থেকে শুরু করেন এই পুজো।
মূর্তি উধাও এবং কাত্যায়নী ব্রত
গোস্বামী পরিবারের মথুরেশের মৃত্যুর কয়েকদিন পরে দেখা যায় , সেবাড়িতে উধাও হয়ে যায় রাধারমণের মূর্তি। ঘটনা অশুভ ভেবে বাড়ি জুড়ে কান্নাকাটি পড়ে যায়। এমন সময় বাড়ির মহিলরা শুরু করেন কাত্যায়নী ব্রত। বলা হয়, কাত্যায়নী ব্রততে হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর মেলে বিগ্রহ। আর সেই ঘটনায় আশ্চর্য হয়েই বাড়িতে শুরু হয় কাত্যায়নী পুজো।
বৈষ্ণব বাড়িতে মা আসেন অশ্বে
গোস্বামী বাড়ি যেহেতু বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী, সেই জন্য এই বাড়িতে কাত্যায়নী আসেন অশ্বে। সিংহ এবাড়ির মায়ের বাহন নয়। ' মা' এখানে পূজিতা হন আটটি ছোট হাতের মূর্তিতে। আর বাকি দুটি হাত থাকে আকারে বড়।
৩৬ পদের রান্নায় তৈরি ভোগ
শান্তিপুরের গোস্বামী বাড়ির পুজোতে ৩৬ রকমের পদ রান্না হয়। ভাত, তিন রকমের ডাল, নানা ধরনের শাক, ওল, থোড়, মোচা, কচুশাক, ডালনা, ইত্যাদি নিরামিষ পদের রান্না হয় এখানে। কেবলমাত্র বাড়ির যে স্ত্রী রা দীক্ষিত তাঁরাই এই রান্না করার অধিকার রাখেন। আর প্রতিবারই প্রায় ৫০০ মানুষের পাত পড়ে এবাড়ির পুজোয়।
[ ২০১৯ দুর্গাপুজো: দুর্ভোগ কাটাতে তৃতীয়াতে দুর্গা কী রূপে পূজিতা হন! নেপথ্যে রয়েছে কোন পৌরাণিক কথা ]