শেওড়াফুলি রাজবাড়ির পুজো লৌকিক-অলৌকিক কাহিনি নিয়ে বনেদিয়ানায় আজও উজ্জ্বল
শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে ইতিমধ্যেই প্রাণের উৎসবের সূর্য মধ্যগগনে। মহালয়ার এক সপ্তাহ আগে সেখানে শুরু হয়ে যায় মঙ্গল ঘটের বোধন।
শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে ইতিমধ্যেই প্রাণের উৎসবের সূর্য মধ্যগগনে। মহালয়ার এক সপ্তাহ আগে সেখানে শুরু হয়ে যায় মঙ্গল ঘটের বোধন। আর তারপর থেকেই হুগলির এই বাড়ি জুড়ে ধ্বনিত হয় কাঁসর, শাঁখ , উলুধ্বনির আওয়াজ। আসেন 'মা'। তবে এবারর ঘরের উমা আসেন একাই। ২৮৬ বছর ধরে শেওড়াফুলি রাজবাড়ি এমনই ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
পুকুর খননের সময় উদ্ধার মায়ের মূর্তি
প্রসাদোপম শেওড়াফুলির রাজবাড়িতে 'মা' এর আগমন এক স্বপ্নাদেশের হাত ধরে। স্বপ্নানুযায়ী পুকুর খননের সময় মায়ের অষ্টধাতুর মূর্তি উদ্ধার হয়েছিল। সেই থেকেই শাস্ত্রগতভাবে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠার পর দেবী সর্বমঙ্গলা রূপে পুজিত হন। এই স্বপ্নাদেশ পান রাজা মনোহর রায়। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে স্বপ্নাদেশ মিলিয়ে এলাকার আঁটিসাড়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় মূর্তি। যে ঘটনাকে অলৌকিক বলে অনেকেই মনে করে থাকেন এলাকায়।
মা পূজিতা হন সর্বমঙ্গলা রূপে
সেইমতো রাজাও গ্রামে উপস্থিত হন এবং পুকুর খনন করে মায়ের অষ্টধাতুর সেই মূর্তি উদ্ধার করে শাস্ত্রগতভাবে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই সর্ব্বমঙ্গলা মায়ের মন্দির সংলগ্ন এই এলাকাটি সর্ব্বমঙ্গলাপল্লী নামেই পরিচিত।
পুজোর ইতিহাস
রাজা মনোহর দত্ত রায়ের হাতে শুরু হওয়া এই পুজো পালা করে পরিবারের দুই ভিন্ন বংশধর আয়োজন করেন। এর আগে, বর্ধমানের পাটুলির নারায়ণপুরে রাজত্ব ছিল এই পরিবারের। সেই সময় পরিবারে বিগ্রহের সমাহার দেখে মোঘল সম্রাট আকবর দান করেছিলেন প্রচুর জমি । সেই জমি গঙ্গার গ্রাসে যেতেই দত্ত রায় পরিবারের একাংশ চলে আসে শেওড়াফুলিতে। আর শেওড়াফুলির সেই রাজবাড়ির ঠাকুর দালানে পূজিতা হন মা দুর্গা।
বলি-প্রথা, কাঁচা ভোগ !
ঐতিহ্য মেনে কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে , অর্থাৎ মহালয়ার এক সপ্তাহ আগে শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো। এবাড়িতে মা-য়ের পুজোয় পশুবলি হয় না। বরং হয় চালকুমড়োর বলি। তবে, বংশের দুই ভিন্ন শিবির এই পুজো পরিচালনা করে। সেক্ষেত্রে বাড়ির আরেকটি অংশের সদস্যদের পুজোয় ছাগ-বলি প্রচলিত। এবাড়ির সর্বমঙ্গলা মাকে অর্পণ করা হয় কাঁচা ভোগ। কোনও মতেই 'পাক' করা রান্না মাকে অর্পণ করা হয় না।
[ দশমীতে বন্দুক ধ্বনি, দু-নৌকায় বিসর্জন, বনেদি বাড়ির পুজোয় লুকিয়ে এমনই কিছু ট্র্যাডিশন]