বিপ্লবীদের হাতে শুরু কর্ণেলগোলার এই পুজো বহন করে চলেছে অনন্য ইতিহাস
বিপ্লবী ভাবধারায় দীক্ষিত মেদিনীপুরের কর্ণেলগোলা আদি সর্বজনীন দুর্গোত্সব।
বিপ্লবী ভাবধারায় দীক্ষিত মেদিনীপুরের কর্ণেলগোলা আদি সর্বজনীন দুর্গোত্সব। এটি অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার প্রাচীনতম দুর্গাপুজো। এই বছর এই পুজোর ৮৫তম বর্ষ। বিগত বছরগুলোতে অন্যান্য সর্বজনীন দুর্গাপূজাতে আধুনিকতার ছোয়া লাগলেও এই পুজোর ক্ষেত্রে তা হয়নি। আজও এই পুজোর দেবীর সাজ, গহনা, শাড়ি তৈরি করা হয় মাটি দিয়ে।
"প্রতি বছর এই পুজো কারোর স্মৃতিতে উত্সর্গ করা হয়। এই বছর বিদ্যাসাগরের জন্মের দুশো বছর এবং জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের শতবর্ষ স্মরণে এবং সঙ্গে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে আত্মসমর্পণ না করা মেদিনীপুর জেলার অমর শহীদদের স্মৃতিতে উত্সর্গ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে" বলে জানিয়েছেন এই পুজো কমিটির সদস্য তীর্থঙ্কর ভকত।
১৯৩১, ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে অগ্নিযুগের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে পর পর তিনজন ব্রিটিশ জেলাশাসক, পেডি, ডগলাস ও বার্জকে হত্যাকরেন বিপ্লবীরা। স্বাধীনতা আন্দোলনে সেই সময়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল মেদিনীপুর। এই শহর ছিল বিপ্লবীদের সূতিকাগার। এই তিনজন জেলা শাসক নিধন হবার পর, বিপ্লবীদের দমন করার জন্য সারা মেদিনীপুর শহরকে কারাগারে রূপান্তরিত করেছিল ব্রিটিশ সরকার।
শহরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে তাদের জন্য খরচ বাবদ সেই সময়ে প্রায় ৬৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়। এইসব অন্যায় অত্যাচারকে প্রতিহত করে জেলার বিপ্লবীদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে বীরেন্দ্রনাথ সাশমল, দেবেন্দ্র লাল খান সহ অন্যান্যদের প্রচেষ্টায় এই দুর্গোত্সবের সূচনা হয়।
পুজোকে সামনে রেখে বিপ্লবীদের এক করা ছিল এই পুজোর উদ্দেশ্য। ব্রিটিশদের বিরোধিতা করে ঠিক হয় যে বিদেশি জিনিস বর্জন করা হবে। সেইমতো মাটি দিয়ে মূর্তি, দেবীর সাজ, গহনা এই সব করা হয়। তা আজও অব্যাহত রয়েছে।
এই পুজো কমিটির সভাপতি প্রসেনজিত্ সাহা বলেন, সেইজন্য এই সর্বজনীন দুর্গোত্সব সমিতির ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবের এবং অন্যান্য সর্বজনীন পুজোর তুলনায় কিছুটা আলাদা।
[ দুর্গাপুজো ২০১৯ : মায়েদের জীবনসংগ্রামকেই থিম করল কোচবিহারের কিশোর সংঘ]
স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই পুজোতে মেনে চলা হয় শুরুর সময়ের অনেক নিয়ম ও প্রথা। এখন দেশবরেণ্য মনীষীদের নামে পুজো উতসর্গ করা ছাড়াও পুজোর দিনগুলোতে নাটক ও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই বছর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বিদ্যাসাগর স্মরণ।
[ গঙ্গারামপুরে কুপিয়ে খুন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা, অভিযোগের তির বিজেপির দিকে]