দুর্গাপুজো ২০১৯: দশঘরার বিশ্বাস বাড়ির পুজো বনেদিয়ানা-ঐতিহ্যে আজও অমলিন
শহুরে ট্রাফিক নেই। মণ্ডপের সামনে ভিড়ে ঠাসা লাইন নেই। বরং রয়েছে টলটলে ভরাট দিঘি। রয়েছে শরতের কাশে দোলা দেওয়া সতেজ বাতাস। আর রয়েছে জমিদার বাড়ির বনেদিয়ানার ঔজ্জ্বল্য।
শহুরে ট্রাফিক নেই। মণ্ডপের সামনে ভিড়ে ঠাসা লাইন নেই। বরং রয়েছে টলটলে ভরাট দিঘি। রয়েছে শরতের কাশে দোলা দেওয়া সতেজ বাতাস। আর রয়েছে জমিদার বাড়ির বনেদিয়ানার ঔজ্জ্বল্য। এভাবেই বছরের পর বছর ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে দশঘরার বিশ্বাস পরিবার দুর্গাকে বরণ করে নেয়। ঘরের মেয়ে উমার ঘরে ফেরার মরশুমে দশঘরার বিশ্বাসদের বাড়ি তিলে তিলে সেজে ওঠে। মায়ের আগমন মহালয়া থেকেই ঘিরে শুরু হয়ে যায় শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। একনজরে দেখে নেওয়া যাক দশঘরার বিশ্বাস বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য-ইতিহাস।
দশঘরার বিশ্বাস বাড়ির পুজোর ইতিহাস
বহু বছর আগে দশঘরার বিশ্বাসদের মূল পদবী ছিল দেব বিশ্বাস। সেই সময় তাঁরা ছিলেন হরিদ্বারের বাসিন্দা। এরপর ওড়িশার পথে বাংলায় আসেন তাঁরা। জগমোহন বিশ্বাসের হাত ধরে দশঘরায় বিশ্বাস পরিবারের আগমন। দশটি গ্রামকে একসঙ্গে নিয়ে এলাকার নাম হয় দশঘরা। আর সেই গ্রামের জমিদার হিসাবে উঠে আসে বিশ্বাসদের নাম।
দুর্গাপুজোর প্রারম্ভ দশঘরার বিশ্বাস পরিবারে
জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই বাড়ির টেরাকোটার পঞ্চরত্ন মন্দির। সেখানে অষ্টধাতুর রাধারানিকে নিত্য পুজো করা হয়। কথিত রয়েছে, একবার নিধিরাম দেব বিশ্বাস নামে এই বাড়ির এক সন্তান হঠাৎই মারা যান অল্পবয়সে। শোকাচ্ছন্ন নিধিরামের মা মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে যান। হরিদ্বার থেকে সেই সময় রাধারানির মূর্তি আসে। সেই মূর্তিকেই স্বস্নেহে আঁকড়ে ধরেন তিনি। মূর্তি ঘিরে গোপীনাথ জিউয়ের পুজো শুরু হয়। ততদিনে বাড়িতে চণ্ডীপুজোর প্রচলন ছিল বলে পুরোহিত চণ্ডী আর জিউয়ের পুজো একসঙ্গে করতে রাজি হননি। তখন চণ্ডীপুজো বন্ধ করে শুরু হয় দুর্গাপুজো। গড়ে ওঠে নতুন দুর্গাদালান। আর সেই দুর্গাদালানে আজও সাড়ম্বরে পূজিতা হন উমা।
মহালয়ার পর দিন বোধন
ষষ্ঠীর দিন নয়, দশঘরার বিশ্বাস বাড়ির পুজোয় মায়ের বোধন হয় মহালয়ার দিন। এর আগে , উল্টোরথের দিন শুরু হয়ে যায় এই একচালার ঠাকুরের কাঠামো পুজো। এদিকে, মহালয়া পার হতেই প্রথমা থেকে দশঘরার জমিদার বাড়ি জুড়ে ধ্বনিত হয় চণ্ডীপাঠ। আগেকার সময়ে পঞ্চমী আসতেই দেবীকে সাজানো হত ৪০ ভরি গয়নায়। ছিল রুপোর অস্ত্রসস্ত্র। এই বাড়ির প্রতিমায়, মায়ের দশ নয়,চার হাত থাকে। তাতে থাকে, বল্লম, সাপ, ঢাল, তরোয়াল।
বাড়ির ঐতিহ্য
পুরোন ঐতিহ্য মেনে প্রতিবারই ষষ্ঠীতে এই জমিদার বাড়িতে হয় বিল্ববরণ। সপ্তমীতে কলাবউ স্নানের পর দেবীর চক্ষুদান হয়। পুজর সময় বাড়ির তিন 'গৃহলক্ষ্মী' স্ত্রীকে দুর্গাদালানে আনা হয়। দুর্গার সঙ্গে পূজিতা হন এঁরাও। ঠাকুরদালান ততক্ষণে আলতা পরা রাঙা পায়ে , নূপুরের শব্দে ভরপুর! কারণ অন্দরমহলের গৃহিণীদের ব্যস্ততা সেই সময় বেড়ে যায় পুজো ঘিরে। তোড়জোড় শুরু হয় বনেদিয়ানার আভিজাত্যে ঠাসা দশঘরার বিশ্বাস বাড়ির পুজোকে সাজিয়ে তোলার। ঠাকুর দালানে ধীরে ধীরে সাজানো হয় ১০৮টি করে মোট ৩২৪ টি প্রদীপ। আর চারিদিকে ঢাক, কাঁসররের সঙ্গে ধ্বনিত হয় উলুধ্বনি। সাড়ম্বরে দশঘরায় পূজিতা হন দেবী দুর্গা।
ছবি সৌজন্য: সায়ন্তন সেন
[পশ্চিমবঙ্গের এই ৫টি রাজবাড়িতে রয়েছে রাত্রিবাসের রাজকীয় বন্দোবস্ত]