শুরু দেবীপক্ষ, কুমোরটুলিতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা তুঙ্গে মৃৎশিল্পীদের
পুজো আসছে সেই আঁচ সর্বপ্রথম যেখানে এসে পড়ে, সেটা কুমোরটুলি। পটুয়া পাড়া।
পুজো আসছে সেই আঁচ সর্বপ্রথম যেখানে এসে পড়ে, সেটা কুমোরটুলি। পটুয়া পাড়া। গোটা শহর যখন প্রস্তুত মায়ের আগমনে ৷ তখন কুমোরটুলিতে চলছে প্রতিমার গায়ে রঙের শেষ আঁচড় লাগানোর কাজ৷ গায়ের গয়নাও তৈরি মাকে সাজানোর জন্য ৷ একে একে প্যান্ডেলে যাওয়ার জন্য প্রায় তৈরি কুমোরটুলির মাতৃ প্রতিমা। কয়েকদিনেই খালি হতে চলেছে পটুয়া পাড়ার অনেকটা জায়গা। শেষ মুহূর্তে দাড়িয়ে তাই ব্যস্ততা তুঙ্গে প্রতিমা শিল্পীদের। নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই বললেই চলে।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
মহালয়ার রীতি মেনে শাঁখ কাসর ঘণ্টা উলু-ধ্বনির মধ্য দিয়ে হয়ে গেল মহিষাসুরমর্দিনীর চক্ষুদান পর্ব। এবার শুধু মণ্ডপে যাওয়ার অপেক্ষা। আর শেষ মুহূর্তে আরেকবার প্রতিমার রঙের ফিনিসিংটা দেখে নেওয়া, যাতে পুজো উদ্যোক্তারা কোনও রকমভাবে কথার ফাঁদে না ফেলতে পারে। কলকাতার পাশ্ববর্তী জেলাগুলিতে মহালয়া থেকেই প্রতিমা যাওয়ার পালা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এবার ধীরে ধীরে কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা পৌছবে কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গায়। বিদেশে বা ভিন রাজ্যে যাওয়া প্রতিমাগুলি ইতিমধ্যেই রওনা দিয়েছে নিজ নিজ গন্তব্যে। অনেক পাড়াতেই এখনই কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই রোদবৃষ্টির মাঝে ব্যস্ত কলকাতার মৃৎশিল্পীরা।
ধাপে ধাপে তৈরি হয় প্রতিমা
প্রথমে, বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় একটি কাঠামো৷ প্রতিমার আকার কেমন হবে, তা নির্ভর করে এই কাঠামোর ওপরই৷ কাঠামোয় খড়ের আবরণ দিয়ে মনের মতো আকৃতি দেন শিল্পীরা৷ দ্বিতীয় ধাপে কাদামাটির ছোপ দেওয়া হয়। অর্থাৎ ধাপে বাঁশ-খড়ের কাঠামোয় কাদামাটি লেপে দেন নির্মাতা৷ শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় রূপ নেন দেবী৷
নজর থাকে দুর্গা থেকে মহিষাসুর সবদিকে
পরের ধাপে কাদার প্রলেপ শুকিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় রং করা৷ তবে মূল রং বসানোর আগে সাদা বা হালকা রঙে রাঙিয়ে নেয়া হয় প্রতিমা৷ চকচকে ভাবটা যাতে ফুটে ওঠে, সেজন্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে রঙ করা হয় কয়েক দফা৷ এরপর একেবারে বধ হতে প্রস্তুত মহিষাসুর। দেবী দুর্গার পাশাপাশি তাঁর পায়ের তলায় মহিষাসুরের মূর্তিটাও হওয়া চাই জুৎসই৷ তাই দুর্গাকে যতটা শক্তিশালী, পরাক্রম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, মহিষাসুরকেও ততটাই ভয়ঙ্কর হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়৷
অন্য শিল্পীদের কদরও কম নয়
এখানে শুধু মৃৎশিল্পীদের কথা বললে ভুল হবে৷ প্রতিমাকে রাঙিয়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখেন জরি, শোলা বা ডাকের কারিগররাও৷ প্রতিমা তো তৈরি হচ্ছেই, এই শিল্পীরা ব্যস্ত কীভাবে প্রতিমা এবং মন্ডপের সাজসজ্জা হবে, তার পরিকল্পনায়৷ তাই শেষ মুহূর্তে ক্লান্তির কাছে আত্মসমর্পণের সুযোগ নেই শিল্পীদের৷