নেই সরকারি সাহায্য, মালাকার শিল্পীরা পেট চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, যোগ দিচ্ছেন অন্য কাজে
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। সারা বছর বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগে থাকলেও দুর্গাপুজোয় আনন্দ-উচ্ছ্বাস একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছয়। মণ্ডপে মণ্ডপে দশভূজার মনমোহিনী রূপ দেখে অভিভূত হন সকলেই। শুধুমাত্র প্রতিমা বা মণ্ডপ নির্মাণ বা আলোকসজ্জা নয়, শারদীয়ায় মৃৎশিল্পীদের সাথে সাথে মাতৃপ্রতিমার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে কম অবদান রাখেন না মালাকার শিল্পীরাও।

দেবীর সাজ-সজ্জায় অন্যতম আকর্ষণ দেবী অলংকারও। কিন্তু বর্তমানে যে মালাকার শিল্পীরা রয়েছেন তাদের অধিকাংশই পেট চালানোর দায়ে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। কারণ সারা বছর একাজ করলে তাদের পেট চলে না। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা হয়ে যায় মালাকার শিল্পীদের।
সংসারে অভাব অনটন থাকলেও দুর্গা প্রতিমার সৌন্দর্যের ছটা ফুটিয়ে তুলতে অবশ্য খামতি নেই তাদের। ব্যস্ততার দিনরাত কাজ চলেছেন তারা। জমকালো বুলন সেটের সাজে দেবীর উজ্জ্বলতা যেন বৃদ্ধি পায় বহুগুণ। এইসব সাজ তৈরিতে এখন বেজায় ব্যস্ত দুই দিনাজপুর, দুই চব্বিশ পরগনা, বর্ধমান, মেদিনীপুরের মতো জেলার মালাকার শিল্পীরা।

শিল্পীদের অধিকাংশের অভিযোগ, সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত তারা। বাংলার অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে যুক্তরা সরকারি সাহায্য পেলেও তাঁরা পাচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকলে বাংলার এই শিল্প বিলুপ্ত হবে। তবুও তারা দেবী দুর্গার প্রতি ভালোবাসা আর বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আকর্ষণ থেকেই এই কাজ করেন বলে জানিয়েছেন। পুজোর আগে প্রতিবারের মতোই তাই এবারও দম ফেলার ফুরসত নেই শিল্পীদের। বর্তমান অগ্নিমূল্যের বাজারে পাল্লা দিয়ে প্রাপ্য লাভটুকুও হাতে এসে পৌছয় না বলে জানিয়েছেন ৭৬ বছরের বর্ষীয়ান প্রবীণ শিল্পী সুনীল মালাকার। তাঁর পিতৃপুরুষের আমল থেকে চলে আসা এই শিল্পের কাজ তিনি আজও করছেন।
[আরও পড়ুন:ভাবনায় রাজপুত রানি পদ্মিনী, ৫০তম বর্ষে মহম্মদ আলি পার্কের থিম এবার 'পদ্মাবত']
তবে অন্যান্যরা এই কাজ ছেড়ে শহরমুখী হয়েছে। তবে বেশ কিছু শিল্পীরা এখনও এই কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, যুগ যুগ ধরে পারিবারিকভাবে দেবীর অলংকার তৈরি করি, এখনও পর্যন্ত পাইনি শিল্পীর মর্যাদা, জোটেনি সরকারি সাহায্যও। তা সত্ত্বেও পুজোর আগে শিল্পী মননের আবেগকে সঙ্গী করে দেবীর অলংকার তৈরির কাজ করে চলেছি।

শুধু প্রবীণরাই নয়, এই শিল্পের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে শিল্পীদের নতুন প্রজন্মও। তাঁদের হাতের তৈরি শোলার অলঙ্কারগুলি শুধুমাত্র জেলায় নয় জেলা সহ যায় কলকাতায়, ভিন রাজ্য ও দেশের বাইরেও।
[আরও পড়ুন:কুড়চি ফুলের মালা পরিয়ে সন্ধিপুজোই রীতি পালবাড়িতে, প্রকৃতি পুজোর অনুষঙ্গে দুর্গা-বন্দনা]
দুর্গা কৈলাশ থেকে কতটা সেজেগুজে আসেন তা নিয়ে শান্ত্রে দ্বিমত থাকতেই পারে। মর্তে দেবীকে অলংকারে সাজানোর দায়িত্বে কাঁধে তুলে নিয়েছেন মালাকার শিল্পীরাই। জলাজমিতে নেহাতই অবহেলায় জন্মানো শোলা গাছের কান্ড শুকিয়ে নানান ডিজাইনে কেটে তৈরী হয় দেবীর অলংকার। আর সেই অলংকার ভূষিতা দেবীকে দেখতে যখন মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা, তখনও এই শিল্পীদের কাজ হয়ে ওঠে সার্থক। তবে রোজনাচমার সেই অন্ধকার পুজোর হাজারো আলোর রোশনাইও কাড়তে পারে না।