শিশু শ্রমিকের কাহিনি ফুটে উঠবে দমদম পার্ক তরুণ সংঘের পুজোয়
শিশুশ্রম নিয়ে এবার দমদম পার্ক তরুণ সংঘের ভাবনায় উঠে এসেছে, 'গণশার চোখেই পুজো দেখা।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। পুজোর দিনগুলিতে আনন্দ ফুর্তি আর হুল্লোড়ে কাটায় গোটা বাংলা। শুধুই বাংলা নয় গোটা দেশই। দুর্গাপুজো শ্রেষ্ঠ উৎসব হলেও এই পুজো থেকে বঞ্চিত অনেকে। পেটের জ্বালায় লক্ষ লক্ষ শৈশব থাকে পথে ঘাটে। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও শিশুশ্রম সমান প্রাসঙ্গিক। কেউ বেলুন নিয়ে রাস্তায় বসে। কেউ ঘুগনি বেচে।
চা-খাবারের দোকানে কাজ করে। সবই পেটের তাগিদে। যে কারণে ভারতে 'সর্বশিক্ষা মিশন' চালু হলেও এখনও 'শিশুশ্রম' রয়ে গেছে। এর এই শিশুশ্রম নিয়ে এবার দমদম পার্ক তরুণ সংঘের ভাবনায় উঠে এসেছে, 'গণশার চোখেই পুজো দেখা।' 'গনশা'-কে এখানে কাল্পনিক শিশুশ্রমিক হিসেবে দেখানো হয়েছে।
শিল্পী রিন্টু দাসের কথায়, 'প্রতি বছরই পুজো আসে পুজো যায়, কিন্তু এমন উৎসবের দিনগুলিতেও পুজোর আনন্দ থেকে ব্রাত্য থাকে 'গণশা'র মত শিশু শ্রমিকরা। কারণ তাদের পেট চলে কাজ করে। তাদের পুজোর কটা দিন কাটে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে। আমরা 'আশ্বিনের শারদ প্রাতে' মায়ের আরাধনায় ব্রতী হই, কিন্তু গণশা থাকে ব্রাত্য।
শহরের আনাচে কানাচে এমন কত দুঃখের কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে। ভাগ্যের চরম মারে লক্ষ লক্ষ শৈশব আজও এইভাবেই শেষ হয়ে যায়। তাই ৩৩ তম বর্ষে নিবেদন- 'গণশা'। শিল্পী আরও জানান, 'মণ্ডপে ঢোকা ইস্তক প্রতিমা দর্শন পর্যন্ত দর্শনার্থীদের কাছে ধরা দেবে 'গণশা' অর্থাৎ সেই শিশুশ্রমিকের জীবনের নানা চিত্র।
গোটা মণ্ডপে কেটলি, ছাকনি, হাতা, বয়াম, টি-ব্যাগ ছাড়াও চায়ের দোকানে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম দিয়েই সাজিয়ে তোলা হচ্ছে নানা শিল্পকর্ম। মণ্ডপজুড়ে শোভা পাবে গণশার শ্রমজীবনের নানা যন্ত্রণা যা থেকে সে বেরিয়ে আসতে চায় সুস্থ স্বাভাবিক শৈশবে। দেবী দুর্গাই মুক্ত করবেন গণশাদের।'
পুজো উদ্যোক্তা রবীন গঙ্গোপাধ্যায় জানান, পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। তাই সারা বছর ওরা পড়ে থাকে চায়ের দোকানে। বাদ যায় না পুজোর দিনও। এমন কত দুঃখের কাহিনি লুকিয়ে সমাজের আনাচে-কানাচে। আজও শহরের অলি-গলিতে শয়ে শয়ে শিশুশ্রমিক নিজেদের স্বপ্নকে পদদলিত করে শুধু কাজ করে চলেছে।
হাতে পাঠ্যবইয়ের বদলে ছাঁকনি-কেটলি। পিঠে বইয়ের ব্যাগের বদলে কাগজের বস্তা, বা মাথায় ইট। রুটি-রুজির টানে শৈশবকে অনেক আগেই বিদায় জানিয়েছে তারা। রঙিন স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে আজ তারা দিনরাত খেটে চলেছে পেটের টানে। তারাও দুর্গা মায়ের সন্তান। তাই শিশুশ্রমিকের কাল্পনিক নামকরণ করা হয়েছে গণশা।
[আরও পড়ুন:বন্দুকে ফায়ারিংয়ের পরই শুরু হয় সন্ধিপুজো, ঐতিহ্য-আভিজাত্যের দুর্গা-বন্দনা নন্দীবাড়িতে]
মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই সুরজিত পালের সৃজনে গড়ে উঠছে প্রতিমা। মণ্ডপজুড়ে থাকছে সৈকত দেবের করা আবহ। গতবছর প্রাচীন 'মাতা-নি-পাছেরি' শিল্পকর্মের ঝলক মণ্ডপসজ্জায় ফুটিয়ে তুলেছিল দমদম পার্ক তরুণ সংঘ। নেপথ্য কারিগর ছিলেন শিল্পী গোপাল পোদ্দার।
[আরও পড়ুন:আস্ত একটা পৃথিবী নেমে এসেছে! রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘের চমকে কি কুপোকাত কলকাতার পুজো]