এনআরসি, এনপিআর নিয়ে বিতর্ক, বাংলায় জনগণনার কাজে লেগেছে বড় ধাক্কা
রাজ্যে এনপিআর, এনআরসি নিয়ে উত্তেজনা চরমে। যার জেরে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে জনগণনার কাজ।
রাজ্যে এনপিআর, এনআরসি নিয়ে উত্তেজনা চরমে। যার জেরে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে জনগণনার কাজ। ২০২১-এর জনগণনায় বাড়ি গণনার কাজের প্রস্তুতি সব থেকে বেশি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আর বিভিন্ন জেলায় এর প্রস্তুতি নির্দিষ্ট সময়ের অনেকটাই পিছনে। এমনটাই জানিয়েছেন আধিকারিকরা।
তথ্যসংগ্রহকারীদের সনাক্তকরণের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯-এর ডিসেম্বরে। কিন্তু রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার মধ্য ডিসেম্বরে এনপিআর-এর বিরোধিতা করে। সেই সময় জনগণনায় বাড়ির তালিকা তৈরির কাজ চলছিল। সেই সময় আলাদা করে জনগণনার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। জেলা থেকে জানুয়ারি শেষে আগেই তথ্য তলব করা হয়েছিল।
সরকারি আধিকারিকদের প্রতিক্রিয়া
যদিও এই কাজ থমকে যায়। কেননা জানুয়ারিতে একাধিক জায়গায় উন্মত্তজনতা সরকারি কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। কাজ করা বন্ধ করে দেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরও। রঘুনাথগঞ্জ দুই-এর বিডিও বিশ্বজিৎ মজুমদার জানিয়েছেন, সেনসাস নিয়ে সব কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। কোনও তথ্যসংগ্রহকারীকে সনাক্ত করা হয়নি। ২ জানুয়ারি এই আধিকারিক নিজের অধীনে থাকা সরকারি আধিকারিকদের চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, ১৬ জানুয়ারি মধ্যে জনগণনার কাজের জন্য কর্মী ও অফিসারদের তালিকা দিতে।
বীরভূমের ময়ুরেশ্বরের বিডিও গোরাচাঁদ বর্মন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, উত্তেজনা না কমা পর্যন্ত প্রশাসনকে অপেক্ষা করতে হবে। এরপর এনপিআর এবং জনগণনাকে আলাদা করতে প্রচার শুরু করতে হবে। তারপরেই জনগণনার কাজ শুরু করা যাবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হুগলির এক পুরসভার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সেখানে তথ্যসংগ্রহকারীদের সনাক্তকরণ বাকি রয়েছে। কীভাবে এনপিআর, এনআরসি থেকে জনগণনাকে আলাদা করা হবে, কিংবা তা নিয়ে বোঝানো হবে, তার কোনও পরিষ্কার নির্দেশিকা নেই।
কেন্দ্র সব রাজ্যকেই তাাদের এনপিআর আপডেট করতে বলেছিল। যার মধ্যে ছিল জনগণনায় বাড়ির সংখ্যাও। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে মঙ্গলবার লোকসভায় জানানো হয়েছে, এনআরসির প্রয়োগ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বাড়ির তালিকা তৈরির জন্য ৪৫ দিন সময়
প্রসঙ্গত জনগণনায় বাড়ির তালিকা তৈরির কাজ শেষ করার কথা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যের সময়ে। এই কাজে ৪৫ দিন সময় ধরা আছে। তথ্যসংগ্রহকারীদের নিয়োগ করার কথা প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে। এএছাড়াও বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মীদেরও এই কাজে যোগ দেওয়ার কথা।
শিক্ষকরা আতঙ্কগ্রস্ত, বলছেন সিপিএম নেতা
সিপিএম-এর প্রাক্তন লোকসভার সদস্য তথা এবিটিএ নেতা বদরুদ্দোজা খান জানিয়েছেন, রাজ্যের শিক্ষকদের একটা বড় অংশই আতঙ্কগ্রস্ত। যা দূর করতে ব্যাপক প্রচারের দরকার। মানুষকে জনগণনা নিয়ে বোঝানোর কথাও তিনি বলেছেন। এনআরসির সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই, তাও সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার বলে জানিয়েছেন তিনি।
দায়ী তৃণমূল, সিপিএম, বলছে বিজেপি
যদিও এব্যাপারে তৃণমূল এবং বামদেরকেই দায়ী করেছেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু। তিনি বলেছেন, এরা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। তৃণমূল নেতারা খোলাখুলি তথ্যসংগ্রহকারীদের পেটানোর কথা বলছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এনআরসির জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে চাইছে।