এলাকায় ঢুকলেই গিলে খাবে ভূত! অশরীরী আত্মার আতঙ্কে জনমানবহীন মালদহের গ্রাম
শ্মশানের নিস্তব্ধতা গোটা গ্রামে। যেন অশরীরী আত্মা ভর করে রয়েছে। আতঙ্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। বাড়িতে বাড়িতে তালা ঝুলছে, কেউ নেই গ্রামে। কিন্তু কেন?
শ্মশানের নিস্তব্ধতা গোটা গ্রামে। যেন অশরীরী আত্মা ভর করে রয়েছে। আতঙ্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। বাড়িতে বাড়িতে তালা ঝুলছে, কেউ নেই গ্রামে। কিন্তু কেন? গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আসা বাসিন্দারাই জানালেন, মানুষকে গিলে খেয়ে নিচ্ছে ভূত। একের পর এক মানুষ মারা পড়ছে। মালদহের সুখানদিঘির বাসুদেবপুরে শুধুই আতঙ্ক।
সুখানদিঘির সেই কাহিনি
প্রায় বছর ২৫ আগের ঘটনা। সুখানদিঘি গ্রামে 'ডাইনি' সন্দেহে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল একই পরিবারের ছয়জনকে। তার কিছুদিন পর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পাশের গ্রাম বাসিদেবপুরে। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে লোকজন। এখন ওই গ্রামে কোনও বাস নেই। একের পর এক বাড়িতে তালা ঝুলছে।
এক মাসের ব্যবধানে ছয় মৃত্যু
ডাইনি সন্দেহে খুনের কিছুদিন পরই মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বাসুদেবপুর গ্রামে মৃত্যু হয় ছ-জন গ্রামবাসীর। তারপরই ছড়িয়ে পড়ে অশরীরী ভীতি। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ভূতেই খেয়ে ফেলছে ওই ছ-জনকে। আর এই কথা রটে যেতেই বাসুদেবপুর গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়।
দিনে আছে, রাতে নেই
হাতেগোনা কয়েকজন গ্রামে এখনও আসা যাওয়া করেন। তারা রাতে থাকতে পারেন না। চলে যান অন্যত্র। আবার দিনের বেলায় ফিরে আসেন গ্রামে। বিষয়টি বর্তমানে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রশাসনের নজরে এসেছে। গ্রামের মধ্যে এই আতঙ্কের পরিবেশে বিভ্রান্তি কাটাতে তৎপর পঞ্চায়েতের আধিকারিকরা। মালদহের জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য জানান তিনি খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
ঠিকানা সুখানদিঘি
মালদহ শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার যাওয়ার পর ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে নারায়ণপুর গ্রান। সেখান থেকে আরও তিন কিলোমিটার গেলেই সুখানদিঘি। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় আরও প্রায় কিলোমিটার খানেক হাঁটলে সোনাঝুরি মোড় পেরিয়ে পাঁচপুকুর গ্রামের পাশে বাসুদেবপুর গ্রাম। গ্রামে ঢোকার মুখেই দেখা কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে। তাঁদের মুখেই শোনা গেল আতঙ্কের এই কাহিনি। খবর রটেছে, পাঁচপুকুর থেকে ভূত আসছে। আর বাড়িতে ঢুকলেই অসুখ অনিবার্য। তারপরই মৃত্যুও। সেই অন্ধবিশ্বাসে গ্রাম জনমানবহীন।
কুসংস্কারে ভর করে খাঁ খাঁ গ্রাম
অন্ধ কুসংস্কারে ভর করে খাঁ খাঁ করে গোটা গ্রাম। ভূতের তাণ্ডব নাকি গ্রামে। সন্ধ্যার পরে নানা রকমের শব্দ ভেসে আসে কান পাতলে। ৩০টি পরিবারের মধ্যে গ্রামে ঢোকার মুখে মাত্র তিনটি পরিবার থাকে। বাকি সবাই গ্রামছাড়া। বাসুদেবপুর গ্রামে আদিবাসীদের মধ্যে এই 'ভূত'-ভীতি তাড়াতে ব্লক প্রশাসন উদ্যোগ নিচ্ছে।