কর্মনাশা করোনা লকডাউন, ফের ক্ষুধার রাজ্যে ফিরছে জঙ্গলমহল
কর্মনাশা করোনা লকডাউন, ফের ক্ষুধার রাজ্যে ফিরছে জঙ্গলমহল
করোনা ভাইরাস কী এঁদের অনেকেই জানেননা। মাস্ক, হ্যানিটাইজার , বারবার হাত ধোয়া এসব নিয়ে এঁরা ভাবেন না। কারণ এঁদের কাছে অন্তত একবেলা পেটের ভাত জোগার করাটাই একমাত্র উদ্দেশ্য। রাজনৈতিক উত্থান পতন থেকে করোনা সংক্রমণ সবক্ষেত্রেই গভীর ক্ষত তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গের এই জঙ্গলমহলে। উন্নয়ন আজও তাঁদের কাছে স্বপ্ন মাত্র। করোনার থাবা না বসালেও ক্ষিদের জ্বালা ফের জাগিয়ে গিয়েছে জঙ্গলমহলে।
কর্মনাশা লকডাউন
বিড়ি বাঁধা, জঙ্গল পাহারা, জঙ্গলের কাঠ কেটে এনে বাজারে বিক্রি করা। এরম ছোট ছোট কাজেই জীবন চলে তাঁদের। দিন আনি দিন খাই পরিবারে ১০০ টাকার নোট দেখাটাও বড় ভাগ্যের বিষয়। করোনার আবহে গোটা বিশ্ব যখন তোলপাড়। মাস্ক, স্যানিটাইজার, থার্মাল স্ত্রিনিং নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। সামাজিক সুরক্ষা বিধি নিয়ে চায়ের কাপে তুফান উঠছে ঠিক সেই সময় ভাতের থালার দিকে তাকিয়ে থাকেন জঙ্গল মহলের ফুলেশ্বরী, দেবেনরা।
কাজ গিয়েছে লকডাউনে
রোজ ১৬ থেকে ১৭ কিলোমিটার হেঁটে জঙ্গলের কাঠ কেটে এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করত জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা দেবেন। ফুলেশ্বরী জঙ্গলমহল থেকে পাতা আর কাঠ সংগ্রহে যেত। সেটা বিক্রি করে দিনে ৬০ থেেক ৭০ টাকার বেশি জুটত না। তাতেই দিনের মতো পেট ভরা খাবার খেতে পেত তাঁরা কিন্তু করোনা লকডাউনের জেরে বন্ধ হয়েছে বাজার। বেচাকেনা বন্ধ হওয়ায় দেবেন, ফুলেশ্বরীদের কাজও গিয়েছে।
অনাহারে দিন কাটছে জঙ্গলমহলের
দিনে চারবেলা তো দূরের কথা দুবেলা খাবার জোটাতেই হিমসিম খাচ্ছে জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা। সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দিতে নিজেরা একবেলা থেকে কাটাচ্ছেন। কোনও দিন সেটাও জুটছে না। শুধু ফুলেশ্বরী বা দেবেন নয় জঙ্গলমহলের অধিকাংশ গ্রামেই এখন অনাহারে দিন কাটছে মানুষের।
রেশন পাচ্ছেন না গ্রামবাসীরা
একদিকে যখন মুখ্যমন্ত্রী ঢালাও রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তখন জঙ্গলমহলের গ্রামে গ্রামে মানুষের কাছে রেশন শব্দটা স্মৃতি হয়ে যেতে বসেছে। কারণ এপ্রিল মাসে শেষবার রেশন পেয়েছিলেন তাঁরা। তারপর আর রেশন জোটেনি তাঁদের। ১০০ দিনের কাজ সেটাও জুটছে না। করোনা সংক্রমণের কারণে অধিকাংশ সরকারি প্রকল্পের কাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে।