কমবয়সী ছেলেমেয়েগুলিকে হুমকি দিয়ে যে কাজ হবে না, সেটা মমতাদেবীর বোঝা উচিত ছিল
কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের কাণ্ড এখন বড় আকার ধারণ করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখরাঙানিতে অবস্থার উন্নতি হওয়া তো দূরের কথা
কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের কাণ্ড এখন বড় আকার ধারণ করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখরাঙানিতে অবস্থার উন্নতি হওয়া তো দূরের কথা, আরও দানা বেঁধেছে নিরাপত্তা নিয়ে ডাক্তারদের প্রতিবাদ। দিল্লি, মুম্বইতেও ডাক্তাররা তাঁদের কলকাতার বিক্ষুব্ধ সহকর্মীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। পরিস্থিতি যা তাতে আগামী দিনে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে সমাজের সর্বস্তরে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। শুক্রবার দেখা গেল রোগীর পরিজনেরা হাত জোর করে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফিরতে অনুরোধ করছেন কিন্তু তাঁরা তাঁদের অবস্থানে অনড়। একজন তো সটান বলেই দিলেন যে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে হুমকি দিয়েছেন বৃহস্পতিবার, তারপরে কাজে যোগ দেওয়া মানে তাঁদের নিজের চোখে নিজে ছোট হয়ে যাওয়া।
মমতা মাথা গরম করে অবস্থা আরও জটিল করে তুলেছেন
এই পরিস্থিতির জন্যে মমতা দায় এড়াতে পারেন না। তিনি যদি একটু মাথা ঠান্ডা করে, ধৈর্য ধরে প্রতিবাদী ডাক্তারদের কথা শুনতেন, তাঁদেরকে অভয় দিতেন, তাহলে পরিস্থিতি এমন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠত না। কমবয়সী উঠতি ছেলেমেয়েদের উপেক্ষা করতে গিয়েই কি মুখ্যমন্ত্রী এক চরম ভুল করলেন? কারণ, বিক্ষুব্ধ ছেলেমেয়েগুলি যেভাবে গর্জে উঠছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে এবং আন্দোলন ক্রমেই ছড়াচ্ছে রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরেও, তাতে এটুকু পরিষ্কার যে ডাক্তাররা আর ভয় পাচ্ছে না এবং এসপার কী ওসপার মানসিকতা নিয়ে পথে নেমেছেন। এদের সামলানোর জন্যে সামান্য একটু স্নেহ এবং সমবেদনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এগোতে পারতেন। কিন্তু মাথা গরম করে এবং রাজনৈতিক বুলি আউড়ে তিনি পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুললেন।
‘পঁচিশ লক্ষ লাগে ডাক্তার তৈরী করতে’, ডাক্তাররা কি পার্টির ক্যাডার?
পঁচিশ লাখ টাকা লাগে ডাক্তার তৈরী করতে জাতীয় মন্তব্য করা মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক হয়নি। ডাক্তার তৈরী করা দলের ক্যাডার তৈরী করা নয়। ভালো ঘরের, মেধাবী ছেলেপুলেরা অনেক কষ্ট করে পড়ে ডাক্তার হয়। তারা যখন মরিয়া হয়ে রাস্তায় নেমেছে, বুঝতে হবে কোথাও কিছু গলদ রয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাতেও একটি সংবাদ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যেভাবে কথা বললেন, বোঝা গেল তিনি পুরো ব্যাপারটা একপেশে ভাবে দেখতেই পছন্দ করছেন এবং কোনও কারণে ডাক্তারদের উপরে হামলার ঘটনাটিকে লঘু করছেন। একজন মুখ্য প্রশাসকের কাছে এই প্রতিক্রিয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
বেলাগাম মন্তব্যে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়েছে
পদবি দেখে চিকিৎসা করা হয়, ইত্যাদি লাগামছাড়া মন্তব্য করে মমতা পরিস্থিতি তো জটিল করে তুলেছেন বটেই, পাশাপাশি তাঁর নিজের দলের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীদের ডাক্তারি করা সন্তানরাও নেতৃত্বের সমালোচনা করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে পরিস্থিতি আর যাই হোক, মমতাময় নয়। সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যারা, সেই ডাক্তারদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে গিয়ে মমতা এখন পুরো শাসনব্যবস্থাকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। আর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য প্রদেশে ডাক্তারদের সমবেদনার ঘটনা তো রয়েছেই। বিজেপি চুপ করে মজা দেখছে কারণ তাঁদের হয়ে সমস্ত বিরোধিতার কর্তব্যটি ডাক্তাররাই সযত্নে নিজ ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন।
মমতা প্রায়ই গর্বের সঙ্গে বলেন যে বাংলা আজ যা ভাবে, বাকি দেশ তা ভাবে কাল। ইতিহাসগতভাবে বিখ্যাত এই উক্তিটি এখন পশ্চিমবঙ্গের ডাক্তাররা পাল্টা বলতেই পারেন আর সেটা মমতার পক্ষে বিশেষ স্বস্তিদায়ক হবে না।
[আরও পড়ুন: বাংলা জুড়ে চিকিৎসকদের গণ-ইস্তফা অব্যাহত! আরও ২ ডাক্তারের পদত্যাগ ]