চিকিৎসককে মাটিতে ফেলে নির্মম মার! ভিডিওতে দেখুন হেমতাবাদ হাসপাতালের ঘটনা
হাসপাতালে ভাঙচুর করেই ক্ষান্ত নন রোগীর পরিবার, চিকিৎসককে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয় হাসপাতালের মধ্যেই। যার জেরে চিকিৎসক গুরুতর চোট পান।
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালে তাণ্ডব চালাল রোগীর পরিবারের লোকজন। হাসপাতালে ভাঙচুর করেই তাঁরা ক্ষান্ত নন, চিকিৎসককে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয় হাসপাতালের মধ্যেই। যার জেরে চিকিৎসক গুরুতর চোট পান। এইভাবে চিকিৎসককে প্রহারের ঘটনায় নিন্দায় মুখর হয় সব মহল। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে।
হেমতাবাদেরই এক রোগী তাবেদা খাতুনকে ভর্তি করা হয়েছিল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাঁর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে চিকিৎসব বিপুল ঘোষ তাঁকে রেফার করে দিয়েছিলেন রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। কিন্তু তাঁর পরামর্শ না মেনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ওই রোগীকে রেখে দেওয়া হয়।
এর অদ্যাবধি পরেই মৃত্যু হয় তাবেদা খাতুনের। এরপর তাঁর পরিবারের লোকজন চড়াও হন হাসপাতালে। হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু করেন। তছনছ করে দেন চিকিৎসা সামগ্রী, বেড-সহ অন্যান্য আসবাবপত্র। চিকিৎক বিপুল ঘোষের চেম্বারে ঢুকে তাঁকে টেবিলের উপর ফেলে মারা হয়। প্রহৃত হন স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসককে নির্মমভাবে মারার পাশাপাশি সরকারি সম্পত্তিও ধ্বংস করেন তাঁরা।
এরপর বিশাল পুলিশ বাহিনী অসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। চিকিৎসককে নির্মম প্রহারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেন চিকিৎসক সংগঠনের নেতা রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এই ঘটনা চলতেই থাকছে। বারবার আবেদন-নিবেদন করেও কোনও সুরাহা মিলছে না। চিকিৎসকরা কেন কোনও নিরাপত্তা পাবেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। রেজাউল করিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানোর পরও বিশেষ কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী চটজলদি ব্যবস্থা নিতে পুলিশ-প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আগের কয়েকটি ঘটনায়।
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে সিএমওএইচ প্রকাশ মৃধা বলেন, আমি নিজে হেমতাবাদ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলাম। খতিয়ে দেখেছি বিষয়টি। কোনও চিকিৎসা গাফিলতি ছিল না। ওই রোগীকে অনেক আগেই রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোকজন রোগীকে রায়গঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। অথচ রোগীর মৃত্যুর পর চিকিৎসককেই নিগ্রহ করা হল। তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি।
রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎকের কোনও দোষ ছিল না। অথচ তাঁকে মারধর করা হল। সবাই যদি ডাক্তারিটা বুঝে যায়, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। এবার তো চিকিৎসা করতেই ভয় পাবেন চিকিৎকরা। তিনি বলেন, একজন রোগী মারা গিয়েছেন। আমাদের রোগীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা রয়েছে। তাবলে এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।
স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেন, শুধু ডাক্তারবাবুকেই মারধর করেননি বা চেম্বারে ভাঙচুরই করেননি, স্বাস্থ্যকর্মীদের মারধর করা হয়েছে। রোগীর পরিবারের লোকজন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। অন্যান্য রোগীর কথাও একবার ভাবেননি। চিকিৎসক সংগঠনের নেতা রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে আরও জানিয়েছেন, বারবার এমন ঘটনা ঘটেছে, প্রশাসন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে রয়েছে। এমনকী এসব ক্ষেত্রে যাঁরা গুন্ডামি করল, তাঁদেরকে গ্রেফতার করেও ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।