পদ্মশ্রী 'সুন্দরবনের সুজন'! সুন্দরবনের মানুষের কৃতজ্ঞতা ও ঋণ স্বীকার
পদ্মশ্রী 'সুন্দরবনের সুজন'! সুন্দরবনের মানুষের কৃতজ্ঞতা ও ঋণ স্বীকার
সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ - প্রতিকূলতা পেরিয়ে শনি ও রবি সপ্তাহে দুদিনে বিনামূল্যে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে পদ্মশ্রী পুরস্কার জিতে নিলেন বাংলার চিকিৎসক অরুণোদয় মণ্ডল। পুরস্কার আনতে যাওয়ার আগে তিনি নিজের মুখে স্বীকার করলেন সুন্দরবনের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা ও ঋণের কথা। পুরস্কার উৎসর্গ করলেন স্ত্রীকে।
তিনি জানান, প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় শনিবার পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য খবর আসে। আজ আন্তর্জাতিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে যেখানে বাঙালি দিনের পর দিন পিছিয়ে পড়ছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এমন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়ে আমি খুবই খুশি, গর্বিত।
এই পুরস্কার তিনি উৎসর্গ করতে চান তার স্ত্রীকে। স্ত্রীর উৎসাহেই এটা করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি, সুন্দরবনের মানুষের কাছে চির কৃতজ্ঞ চিরঋণী কথা স্বীকার করেন অরুণোদয় বাবু।
বিরাটিতে বাড়ি অরুণোদয়বাবুর। শনিবার সক্কাল সক্কাল হাসনাবাদ লোকালে উঠে পড়েন। সঙ্গে ওষুধের ব্যাগ। তার পর হাসনাবাদ স্টেশনে নেমে সেখান থেকে ভ্যান রিকশয় পৌঁছন নদীর ঘাট পর্যন্ত। নৌকোয় নদী পার হয়ে বাসে দেড় ঘণ্টার পথ লেবুখালি। আবার নৌকোয় রায়মঙ্গল নদী পার হয়ে দুলদুলির ঘাট। সেখান থেকে অটোতে সাহেবখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়পাড়ায় তাঁর 'সুজন চিকিত্সা কেন্দ্র'। অরুণোদয়বাবু এতোদিনে সুন্দরবনের সুজন বলেই পরিচিত হয়ে গিয়েছেন।
প্রতি সপ্তাহের শেষে কলকাতা থেকে ছ'ঘণ্টার পথ পেরিয়ে অরুণোদয়বাবু চলে যান সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায়। তাঁর অপেক্ষায় থাকেন শয়ে শয়ে রোগী। তাঁদের বেশিরভাগই গরিব, দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন। শনিবার সেখানেই রাত কাটিয়ে রবিবার সকাল থেকে ফের রোগী দেখা শুরু করেন তিনি।
এদিন পুরস্কার আনতে যাওয়ার আগে তিনি বলেন, 'আজ যেখানে মানুষের কাছে সময়ের খুবই অভাব। বাড়ির ভাত খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর সময় কারও নেই। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আজ সমস্ত দুর্যোগ প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে আমি সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যেতাম শুনি এবং রবি দুদিনে 300 রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে এসেছি।
পদ্ম পুরস্কারের প্রচলন থেকে এ যাবৎ বহু চিকিৎসক পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বাংলার ও বাঙালি অনেক চিকিৎসকও রয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁদের অসীম অবদান। কিন্তু অরুণোদয় মণ্ডল যেন অনন্য! এবং তা এই কারণেই যে নিঃস্বার্থ ভাবে সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।