দিলীপ ঘোষ কি কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন! একুশের পরাজয়ে বদলের হাওয়া বিজেপিতে
দিলীপ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন দলে! একুশের পরাজয়ে পরিবর্তনের হাওয়া বিজেপিতে
দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন বিজেপির যে উত্থান হয়েছে বঙ্গে, সে কথা অনস্বীকার্য। তবে একুশের ভোট তাদের স্বপ্নপূরণ হয়নি। যে অদম্য বাসনা নিয়ে তাঁরা এবার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বঙ্গ-বিজয়ে, তা বাংলার মানুষ নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাই তিনি বিজেপিকে উত্থানের পথ দেখালেও কাঙ্খিত সাফল্য না মেলায়, তাঁকেই কাঠগড়ায় তুলছেন বিজেপির নেতা-নেত্রীরা।
বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই দেওয়া হচ্ছে না, মমতা সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দিলীপের
ভোট মিটতেই অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে বিজেপির অন্দরে
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন। তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, তা অশ্লীল-অমানবিক বলেও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করছিলেন।। কিন্তু তখন বিজেপির একজনও তা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেননি। কিন্তু ভোট মিটতেই অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে বিজেপির অন্দরে।
বঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ ঘোষ কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন!
বিজেপির একাংশ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে পাল্টা প্রশ্ন করতে ছাড়ছেন না। দলের অন্দরে কোনও বিষয়ে দিলীপবাবু মুখ খুললে অন্যরা পাল্টা প্রশ্ন করে বসছেন। ভোটের আগে যেমন তাঁরা মুখ বুজে সমস্ত কথা সহ্য করেছেন, ভোট ফুরোলে তা তাঁরা করতে নারাজ। বঙ্গ বিজেপিতে যে দিলীপ ঘোষ কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছেন তা প্রকট হয়ে পড়ছে।
২০১৯ পর্যন্ত বিজেপি অভূতপূর্ব সাফল্য দিলীপের নেতৃত্বে
২০১৫ সালে তিনি বঙ্গ বিজেপির দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তারপর থেকে ধাপে ধাপে উন্নতি করেছে বিজেপি। বিশেষ করে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে বিজেপির উন্নতির গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী বঙ্গে। ২০১৮-য় তিনি বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হিসেবে তাঁর আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তারপর ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে আসে।
একুশের ভোটে শোচনীয় ব্যর্থতার পর উল্টোসুর বিজেপিতে
২০১৯-এর সাফল্য দেখে বিজেপি একুশের স্বপ্ন বুনতে শুরু করে। দিলীপের নেতৃত্বে বিজেপির উত্থানের বহর দেখে, তাঁর রাজ্য সভাপতির মেয়াদ পূর্ণ সময়ের জন্য বাড়ানো হয়। অর্থাৎ ২০২১ পর্যন্ত তিনি বঙ্গ বিজেপির সভাপতি মনোনীত হন। কিন্তু একুশের ভোটে শোচনীয় ব্যর্থতা ফের তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বিজেপির পরাজয়ের পর দিলীপের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন
বিজেপির অন্দরে যে সমস্ত নেতারা এতদিন তাঁর বিরুদ্ধে চোখ তুলে কথা বলতে পারতেন না, তাঁরাই এখন প্রশ্ন করছেন। একুশের নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের পর প্রথম প্রশ্নটা তুলেছিলেন প্রাক্তন সভাপতি বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথাগত রায়। নাম না করেই তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নেতৃত্বের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
দিলীপ ঘোষকে কোণঠাসা করে চলেছেন বিজেপি নেতারা
দিলীপ ঘোষ কিন্তু তারপরও নীরব থেকেছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে আপাতত মুখে কুলপ এঁটেছেন তিনি। কিন্তু তথাগত রায় শুরু করে দেওয়ার পর দলের ছোট ও মাঝারিমাপের নেতারা সরব হতে পিছপা হচ্ছেন না। তাঁরাই দিলীপ ঘোষকে কোণঠাসা করে চলেছেন বিজেপিতে। এই অবস্থায় বিজেপি কি নির্ধারিত সময়ের আগে রাজ্যের সভাপতি পরিবর্তন করবে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
আদি বিজেপির নেতা ও দলবদলু নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ে
তার উপর বিজেপিতে এখন দলবদলু নেতা আর আদি বিজেপি নেতাদের মধ্যে একটা ঠান্ডাযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিজেপির আদি নেতারা এখন প্রকাশ্যেই বলছেন, দলবদলু নেতাদের জন্যই দলের এই বিপর্যয় হয়েছে। এই পরিস্থিতি এড়িয়ে গেলে চলবে না। ফলে এখন এমন একজন নেতাকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হিসেবে তুলে ধরতে হবে, যিনি আদি বিজেপির নেতা ও দলবদলু নেতাদের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করতে পারবেন।
দিলীপ ঘোষের জায়গায় বসানো হতে পারে নয়া সভাপতি
এহেন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দিলীপ ঘোষের সভাপতি হিসেবে মেয়াদ শেষ হবে ২০২১-এর ডিসেম্বরে। তার আগে যদি পরিবর্তন আনতেই হয় নেতৃত্ব, তবে স্বপন দাশগুপ্তের মতো নেতাকে বসানো হতে পারে সভাপতি পদে। পুজোর আগেই দিলীপ ঘোষের জায়গায় বসানো হতে পারে স্বপন দাশগুপ্তের মতো কোনও নেতাকে। তবে তা এখনও ভাবনার পর্যায়ে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।