দিলীপকে ‘মুকুলের পদে’ বসিয়ে কী বার্তা, তিন মাস আগেই সভাপতি বদল বিজেপিতে
দিলীপ ঘোষকে বঙ্গ বিজেপির প্রধান পদ থেকে সরতে হল মেয়াদ ফুরনোর তিনমাস আগেই। সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় সহসভাপতি পদে বসানো হয়েছে।
দিলীপ ঘোষকে বঙ্গ বিজেপির প্রধান পদ থেকে সরতে হল মেয়াদ ফুরনোর তিনমাস আগেই। সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় সহসভাপতি পদে বসানো হয়েছে। আর দিলীপ ঘোষের জায়গায় রাজ্য বিজেপির সভাপতি করা হয়েছে ড. সুকান্ত মজুমদারকে। বঙ্গ বিজেপির প্রধান হিসেবে তাঁর নিয়োগে দিলীপ ঘোষ জমানার অবসান হয়েছে। দিলীপ ঘোষ বসেছেন কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি পদে। উল্লেখ্য, বিজেপি ছাড়ার আগে এই পদে ছিলেন মুকুল রায়।
দিলীপ ঘোষের অপসারণ ও সুকান্ত মজুমদারের আগমন
ভবানীপুর বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপির নেতৃত্বে এই পরিবর্তন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তারপর প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তথা সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তারপরই বিজেপি নেতৃত্ব বদলের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। এই পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষের অপসারণ ও সুকান্ত মজুমদারের মতো নতুন মুখকে সামনে আনার পিছনে নতুন উদ্যমে লড়াইয়ের সুচিন্তিত পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
দিলীপ ঘোষের রাজ্য সভাপতি পদে অভিযান থেমে গেল
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যতের পর থেকেই বিজেপিতে নেতৃত্ব বদলের সুর উঠে গিয়েছিল। অনেকবারই নেতৃত্ব বদলের তোড়জোড় হয়েছিল বিজেপিতে। কিন্তু সে যাত্রায় টিকে গিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। রাজনৈতিক মহলে মনে করেছিল, পুরোপুরি দুটি মেয়াদই সম্পূর্ণ করবেন তিনি। কিন্তু তিনমাস আগেই দিলীপ ঘোষের রাজ্য সভাপতি পদে অভিযান থেমে গেল।
এটা খুব ইতিবাচক পদক্ষেপ, বলছেন দিলীপ
হিসেবে মতো, ২০২১-এর ২২ ডিসেম্বের পর্যন্ত বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে দিলীপ ঘোষের মেয়াদ ছিল। কিন্তু তার আগেই দিলীপ ঘোষ অপসারিত হলেন। তাঁর জায়গায় এলেন সুকান্ত মজুমদার। দিলীপ ঘোষ এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁর কথায়, বিধানসভা নির্বাচনের পরে তিনিই চেয়েছিলেন সরে যেতে। এখন সেই পরিবর্তন হল। দক্ষিণবঙ্গ থেকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আর উত্তরবঙ্গ থেকে দলের রাজ্য সভাপতি- এটা খুব ইতিবাচক পদক্ষেপ।
দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বেই বিজেপি বেশি সফল
দিলীপ ঘোষ এদিন দাবি করেন, তাঁর সময়েই বিজেপি সবথেকে বেশি সাফল্য পেয়েছে। নবনির্বাচিত রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেন, আমরা পূর্বসুরি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বেই বিজেপি বেশি সফল হয়েছে। ২০১৫ সালে বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন লালমাটির দেশের দিলীপ ঘোষ। সেই থেকে তিন বছর করে প্রায় দুটি মেয়াদ তিনি সম্পূর্ণ করতে চলেছিলেন।
বিজেপির উত্থানের সময় রাজ্য সভাপতি দিলীপ
২০১৫ সালে দিলীপ ঘোষ যখন রাজ্য সভাপতি হয়ে এসেছিলেন, তখন বিজেপির উত্থান হয়েছে দেশে। আগের বছরই অর্থাৎ ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। তখন বাংলায় বিজেপিকে দূরবীন দিয়ে দেখতে হত। বিজেপির একমাত্র সাংসদ ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। আর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া।
২০২১-এর নির্বাচনে লড়াইয়ের রসদ পান দিলীপরা
সেই থেকে শুরু করে দিলীপ ঘোষের জমানায় ২০১৯-এ প্রভূত সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। বিজেপি ২ থেকে বেড়ে ২০১৯-এর লোকসভায় ১৮ জন সাংসদ পেয়েছে। তার আগে ২০১৮ সালে বাংলরা পঞ্চায়েত নির্বাচনেও প্রান্তিক জেলাগুলিতে ভালো ফল করেছে বিজেপি। এই জোড়া সাফল্যকে পাথেয় করে ২০২১-এর নির্বাচনে লড়াইয়ের রসদ পেয়েছিলেন দিলীপ ঘোষরা।
তিন মাস আগেই সভাপতি হিসেবে জার্নি শেষ দিলীপের
২০১৮ থেকে ২০১৯ একবছর তাঁকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হিসেবে এক্সটেনশন দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯-এ সাফল্যের পর তাঁকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সভাপতি করা হয়। সেই অনুযায়ী ২০২১-এর ডিসেম্বরে তাঁর মেয়াদ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। কিন্তু ২০ সেপ্টেম্বর তাঁর মহয়ে গেল।
৩ থেকে ৭৭-এ পৌঁছনোকে কখনই ব্যর্থতা বলা যাবে না
২০২১-এ বিজেপি বাংলায় পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল। বিশেষ করে ২০১৯-এর সাফল্য তাদের সেই স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিল। তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই তারা এগোচ্ছিল। তৃণমূলকে ভেঙে শক্তি অর্জনও করেছিল তারা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তা পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে তৃণমূল আরও বেশি শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় আসে। বিজেপি শাসন ক্ষমতা থেকে দূরে থাকলেও প্রধান বিরোধী দল হয়। এটাও বিজেপির সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে। কারণ তিনজন বিধায়ক থেকে ৭৭-এ পৌঁছনোকে কখনই ব্যর্থতা বলে গণ্য করা যাবে না।
মেয়াদ ফুরনোর আগেই দিলীপকে সরিয়ে নতুন মুখ সুকান্ত
তবে বিজেপির লক্ষ্যপূরণ না হওয়া কিন্তু খটকা হয়েই ছিল নেতৃত্বের কাছে। মুখে তাঁরা ৭৭ জন বিধায়ক প্রাপ্তিকে সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করলেও তৃণমূলকে হারাতে না পারার জ্বালা থেকে নতুন উদ্যমে শুরু করার পরিকল্পনা কষে বিজেপি। তাই মেয়াদ ফুরনোর আগেই দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে নতুন মুখ সুকান্ত মজদুমদারকে বসানো হয় রাজ্য সভাপতির পদে।