মর্যাদার লড়াই একশোয় দু’শো শুভেন্দুর, তমলুকে রেকর্ড ব্যবধানে জয় দিব্যেন্দুর
মর্যাদার লড়াইয়ে একোশায় দু’শো পেয়ে জিতলেন শুভেন্দু অধিকারী। নিজের ছেড়ে যাওয়া আসনে ভাই দিব্যেন্দুকে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ৫ লক্ষ ভোটে জিতিয়ে আনলেন তিনি।
তমলুক, ২২ নভেম্বর : ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী প্রার্থী হলেও, তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে লড়াইটা ছিল আসলে তাঁরই। সেই মর্যাদার লড়াইয়ে একোশায় দু'শো পেয়ে জিতলেন শুভেন্দু অধিকারী। নিজের ছেড়ে যাওয়া আসনে ভাই দিব্যেন্দুকে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ৫ লক্ষ ভোটে জিতিয়ে আনলেন তিনি। জেতার পর দু'ভাই-এর মুখেই শোনা গেল মমতা-স্তুতি।
শুভেন্দু-দিব্যেন্দু বললেন, এ জয় মানুষের। এ জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর নেতৃত্বে রাজ্যে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে, তাঁর রায় প্রতিফলিত হল তমলুকে। মানুষ বিজেপির জনবিরোধী সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়নি। তাঁরা তাদের জবাব দিয়েছে ভোট-বাক্সে। সবুজ ঝড়ে উড়ে গিয়েছে, বাম-বিজেপি।
তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দিব্যেন্দুর জয়ের মার্জিন ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৫। দিব্যেন্দু অধিকারীর প্রাপ্ত ভোট ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৫৯১। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম-এর মন্দিরা পান্ডা। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২ লাখ ৮২ হাজার ৬৬। ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫০ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপির অম্বুজ মোহান্তি। নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে চমক দিয়েছে বিজেপি। এখানে সিপিএমকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। অন্য ছ'টি বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএম দ্বিতীয় স্থানে। নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি ভোট পেয়েছে ২১,১৪৭টি ভোট। বামেরা পেয়েছে ১৩৬০৮টি ভোট।
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম থেকে বিধানসভা ভোটে জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তারপরই তমলুক লোকসভার আসনিট ফাঁকা হয়ে যায়। এবার সেই আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন শুভেন্দু-অনুজ দিব্যেন্দু। শুভেন্দুর প্রথম লক্ষ্য ছিল, জয়ের মার্জিন যেন তাঁর তুলনায় বেশি হয়। হয়তো তিনি ভাবতে পারেননি প্রায় পাঁচ লাখ ছুঁই ছুঁই হয়ে যাবে জয়ের মার্জিন। কিন্তু তিনি দিব্যেন্দুরে বড় ব্যবধানে জেতাতে মাটি কামড়ে এলাকায় পড়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী ।
আর তাঁর দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল, গত বিধানসভা নির্বাচনে হারানো তিন বিধানসভা আসনে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন। সে লক্ষ্যও একশো শতাংশ সফল শুভেন্দু। কারণ হলদিয়া, তমলুক ও পূর্ব পাঁশকুড়া তিনটি কেন্দ্রেই বিপুল মার্জিন আদায় করে নিয়েছে তৃণমূল।
যে হলদিয়া বারবার বেগ দিয়েছে শুভেন্দুকে, এবার সেই হলদিয়ায় বিপুল ব্যবধান গড়ে নিয়েছেন দিব্যেন্দু তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে। আর শুভেন্দু যে কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত বিধায়ক সেই নন্দীগ্রামেই ১ লক্ষ ৪৭ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধান গড়ে নিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। উল্লেখ্য এই নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী গত বিধানসভা নির্বাচনে ৮২ হাজার ভোটে জিতেছিলেন।
তবে সিপিএমের ভোট যেমন উল্লেখ্যযোগ্যভাবে কমেছে, বিজেপি কিন্তু আগের তুলনায় ভোট বাড়িয়েছে। সেদিক দিয়ে বিজেপি-র উত্থানই বলতে হবে। তা না হলে নন্দীগ্রামে কেন সিপিএমকে সরিয়ে দ্বিতীয় হয়ে গেল বিজেপি?
শুভেন্দুর ব্যাখ্যায়, কখনই বিজেপির-র উত্থান বলা যাবে না। কারণ এই কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান প্রায় দেড় লাখ। বিজেপির ভোট মাত্র ২১ হাজার। সিপিএমকে মানুষ ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, সেই কারণেই বিজেপি দ্বিতীয়। এখানে উত্থানের কথা ওঠেই না। কেন্দ্রের জনবিরোধী সিদ্ধান্তকে মানুষ মেনে নেয়নি। তারই প্রতিফলন ঘটেছে নির্বাচনী ফলাফলে। মানুষ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উন্নয়ন যজ্ঞকে দু'হাত তুলে স্বাগত জানিয়েছে।
শুভেন্দু আরও বলেন, গত বিধানসভায় দিদিকে আমরা ১৬-০ দিতে পারিনি। এটা আমাদের কাছে লজ্জার ছিল। সেবার ১৩-৩ হয়েছিল রেজাল্ট। এবার তিন আসনে বিপুল মার্জিন গড়ে আমরা সেই লজ্জা দূর করলাম।