মোদী সরকারের করোনা-ব্যর্থতা তুলে ধরতে ‘অস্ত্র’ হানল তৃণমূল, মাস্টারস্ট্রোক দিলেন ডেরেক
করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রের গাফিলতির কারণ বোঝাতে এক প্রতিবেদনকে হাতিয়ার করলেন রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।
করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রের গাফিলতির কারণ বোঝাতে এক প্রতিবেদনকে হাতিয়ার করলেন রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন। তিনি এক গবেষণামূলক প্রতিবেদন নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে আপলোড করে কেন্দ্রের ব্যর্থতা তুলে ধরেন। তাঁর অভিযোগ, ভারতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করছে কেন্দ্র। অনেক বিলম্বিত ব্যবস্থা নিয়েছে মোদী সরকার।
বিলম্ব করেছে মোদী সরকার
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- করোনা মহামারী রোধ করতে এবং করোনার মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা যে সমস্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন, তা নিতে বিলম্ব করেছে মোদী সরকার। এই ব্যাপারে ফের সতর্ক করে দিয়েছেন অল ইন্ডিয়া মেডিকেল সায়েন্সেসের বিভাগীয় প্রধান নবিত উইগ।
যতক্ষণ পদক্ষেপ নেবেন ততক্ষণ সবকিছু ঠিক
তিনি জানান, আপনি যতক্ষণ পদক্ষেপ নেবেন ততক্ষণ সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু দেশে শুধু পদক্ষেপ নেওয়ার আলোচনা চলে আসছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদি আমরা মুম্বই, পুনে, দিল্লি বা বেঙ্গালুরুর জনগণকে তাদের শহরগুলিতে কী ঘটছে তা জনসাধারণকে বলতে না পারি, আপনি কীভাবে গোটা দেশকে বোঝাবেন।
লকডাউনের নির্দেশ দেওয়ার চার দিন পরে
২০২০ সালের ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশব্যাপী লকডাউনের নির্দেশ দেওয়ার চার দিন পরে তাঁর সরকারের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের টাস্ক ফোর্স দিল্লির অল ইন্ডিয়ান মেডিকেল সায়েন্সে একটি বৈঠক করে। বৈঠকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিকেশনাল ডিজিজ বিভাগের প্রধান রমন গঙ্গাভেদকর, মহামারী ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা বিশেষক বার্তা দেওয়ার জন্য সরকারের শীর্ষ বৈজ্ঞানিক সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
অপরিকল্পিত লকডাউন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল
এই সভার রেকর্ডগুলির পর্যালোচনা থেকে জানা যায় যে কীভাবে অপরিকল্পিত লকডাউন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল দেশের উপর। এমনকী করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সরকার কোনও প্রস্তুতিই নেয়নি। স্পষ্টতই বিভ্রান্তি ছিল। বিশেষজ্ঞরা পূর্বের পরামর্শ সত্ত্বেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁদের হতাশাও ব্যক্ত করেছিলেন।
বিজ্ঞানীদের প্রস্তাব উপেক্ষা করেছিল কেন্দ্র
এই রেকর্ড থেকে আরও জানা যায়, লকডাউন জারি করার সময় সরকার শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের প্রস্তাব উপেক্ষা করেছিল। বর্তমান জবরদস্ত লকডাউনের পরিবর্তে, এই বিজ্ঞানীরা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁদের গবেষণার মাধ্যমে সম্প্রদায় এবং নাগরিক-সমাজের নেতৃত্বে ‘স্ব-সঙ্গতি এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ' করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
সাবধানও করেছিলেন বিজ্ঞানীরা
বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণায় ভারতে করোনাভাইরাস বিস্তৃত হওয়ার বিষয়ে সাবধানও করেছিলেন। সতর্ক করার পরও তৎক্ষণাৎ গৃহীত ব্যবস্থাগুলি প্রয়োগ করা হয়নি। বিজ্ঞানীরা দেশব্যাপী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন এবং স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার আর্জি জানিয়েছিলেন। পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং পৃথকীকরণের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।
বৈজ্ঞানিক কৌশল না মেনেই লকডাউন
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে, এই বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং পরামর্শ বৃথা যায়। বৈজ্ঞানিক কৌশল না মেনেই অপ্রস্তুত সরকার চার ঘণ্টার নোটিশ দিয়ে দেশব্যাপী লকডাউন চাপিয়ে দেয়। এই লকডাউন দরিদ্র ও পরিযায়ীদের মধ্যে জীবিকা নির্বাহ এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে। তৃণমূলও এই দাবি উত্থাপন করে বিঁধল কেন্দ্রকে।