বিশ্বভারতীতে তলে তলে বিক্ষোভ সলতে পাকিয়েছে অনেকদিন ধরে, সঙ্গে আগুনে ঘি ঢেলেছে রাজনীতি
উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্র ও কর্মীদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ জমা হচ্ছিল অনেকদিন ধরেই এবার ক্যাম্পাসে আধাসামরিক বাহিনী নিয়োগের প্রসঙ্গে তাতেই যেন ঘৃতাহুতি দিলেন স্বয়ং উপাচার্যই। ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছাত্র বিক্ষোভ ও অশিক্ষক কর্মচারীদের আন্দোলনের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ করছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতিরও অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে ক্যাম্পাসে আধাসামরিক বাহিনী নিয়োগের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু তার পরই দানা বেঁধেছে নতুন বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে উপাচার্যের নিজের নিরাপত্তা বাডা়তেই এই পদক্ষেপ বলে মত বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের একাংশের। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষতা নিয়েও।
সূত্রের খবর, ছাত্রছাত্রীরা উপাচার্যের কাছে তাদের সমস্যার কথা জানাতে গেলে প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই তাকে অনীহা প্রকাশ করতে দেখা যায়। কিছুদিন ধরেই ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের কটূক্তি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার বাড়বাড়ন্তের কথা জানানো হলেও তাতে বিশেষ কর্ণপাত করতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে।
অন্যদিকে সূত্রের মারফত জানা যাচ্ছে, গত কয়েক মাসে লাগাতার ক্যাম্পাস থেকে বেশ কিছু দুর্মূল্য চন্দন কাঠ চুরিরও ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
পাশাপাশি চলতি বছরের প্রবেশিকা পরীক্ষার আবেদনের ফি কমানোর আন্দোলনে যুক্ত পড়ুয়াদের বাড়িতে চিঠি দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই এই বর্ধিত আবেদন ফি পরের বছরও লাঘু করা হবে কি না সেই বিষয়ে ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল উপাচার্যের। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকের প্রসঙ্গও এখন বিশ বাঁও জলে।
এদিকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ব্রাহ্ম সমাদের রীতি মেনে বুধবার ছুটি দেওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। কিন্তু বর্তমানে সেটিও বাতিলের ইচ্ছা প্রকাশ করে বিতর্কে জড়ান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। পরবর্তীতে এই প্রসঙ্গে রামমোহন প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম সদস্য কেশবচন্দ্র সেনকে নিয়েও অবমাননাকর মন্তব্য করতে দেখা যায় তাকে।
এই প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ছাত্র তথা জয়দীপ সাহা ওয়ান ইন্ডিয়াকে জানান, '২০০৯ সালের পর কোনও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি ক্যাম্পাসে। নির্বাচিত কোনও ছাত্র প্রতিনিধি না থাকায় ছাত্র ছাত্রীদের সমস্যা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোই দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ভাবে আমরা উপাচার্যের কাছে আমাদের দাবি-দাওয়া জানাতে গেলে উনি আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।’
এদিকে তিন মাস আগে হলকর্ষণ উৎসবে ক্যাম্পাসে এবিভিপির শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতি নিয়েও বিতর্ক দানা বাঁধে। পরবর্তীতে চলতি মাসেই এবিভিপির শাখা সংগঠন 'রাষ্ট্রীয় কলা মঞ্চের’ সঙ্গে সাংবাদিকতা বিভাগের যৌথ অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়েও বিপাকে পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। সূত্রের খবর, বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের প্রতিবাদের জেরেই মূলত পরবর্তীতে তা বাতিল করতে বাধ্য হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে ইতিমধ্যেই ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন উপাচার্য। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বলেও সংবাদমাধ্যমে জানান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধান অনুযায়ী নিজস্ব ক্ষমতা বলে বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
শিক্ষা ও ছাত্র মহলের একাংশের অনুমান কেন্দ্র-রাজ্য রাজনীতির দড়িটানাটানিতে ঘোলা জলে মাছ ধরতেই এখন ক্যাম্পাসে আধাসামরিক বাহিনী নিয়োগ করতে চাইছেন উপাচার্য। যদিও ক্যাম্পাসে একাধিক সমস্যা থাকলেও সশস্ত্র পুলিশের উপস্থিতি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলে স্পষ্টতই জানিয়েছে একাধিক বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা।
বিশ্বভারতীতে আধা সামরিক বাহীনির নিরাপত্তা চেয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন উপাচার্যের