২০১৬-র প্লেনামের পর কার্যকর হয়নি সিদ্ধান্ত, নেমেছে মান, রিপোর্টে স্বীকার সিপিএমের
পশ্চিমবঙ্গে সিপিআইএম (cpim)-এর যে সংগঠন (organisation) তৈরি করেছিলেন প্রমোদ দাশগুপ্তের মতো নেতারা সংগঠনের অবস্থা যে এখন ফোঁপড়া ছাড়া কিছুই নয়, তা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে সংগঠন সম্পর্কিত পর্যালোচনায়।
পশ্চিমবঙ্গে সিপিআইএম (cpim)-এর যে সংগঠন (organisation) তৈরি করেছিলেন প্রমোদ দাশগুপ্তের মতো নেতারা সংগঠনের অবস্থা যে এখন ফোঁপড়া ছাড়া কিছুই নয়, তা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে সংগঠন সম্পর্কিত পর্যালোচনায়। বলা হয়েছে, মহিলা, তরুণদের অর্ন্তভুক্তির সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হয়নি। নির্দেশ থেকে গিয়েছে নির্দেশেই।
বৃদ্ধি পায়নি মহিলা, ছাত্র শাখা-সংগঠন
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মহিলা ও তরুণদের অন্তর্ভুক্তি সেভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া, গুরুতর দুর্বলতা বিরাজ করছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মহিলা পার্টি শাখার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। একই কথা প্রযোজ্য ছাত্র শাখা গঠনের ব্যাপারেও। ছাত্রদের সহায়ক গ্রুপ গঠন করা, পার্টির সদস্যপদে উন্নীত করার প্রক্রিয়াও যথেষ্ট দুর্বল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের রাজ্য সাংগঠনিক প্লেনামে বলা হয়েছিল প্রতিশাখায় কমপক্ষে ১ জন মহিলা এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ বিশেষত ৩১ বছরের কমবয়সী, আপাততন ২ জনকে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করার চিত্র আশাব্যঞ্জক নয়। কলকাতার প্লেনামে মহিলা সদস্যের সংখ্যা ২৫ শতাংশ করার টার্গেট রাখা হলেও, ২০২১-এ পুনর্নবিকরণের পরে তা দেখা যাচ্ছে ১০.৭৫ শতাংশের মতো। এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। ৩১ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা ৮.৭০ শতাংশ। প্লেনামের টার্গেট ছিল ২০ শতাংশ।
মান কমেছে পার্টি সদস্যদের
শুধু তাই নয়, পার্টি সদস্যদের মান কমার কথাও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্ট বলা হয়েছে, একথা অস্বীকার করা যাবে না যে রাজ্যে পার্টি সদস্যদের একটা বড় অংশের চেতনার মান নিম্ন। পাশাপাশি একটা উল্লেখযোগ্য অংশের পার্টি সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ পর্যন্ত করেননি। বলা হয়েছে, বাসস্থানের এলাকা, কর্মস্থলে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা, রাজনৈতিক বক্তব্য মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলা থেকে যাচ্ছে। পার্টি সদস্যদের ন্যূনতম পাঁচটি কাজ, আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ, পত্রিকার প্রচার, শাখার সভার সংখ্যা, শাখার সভায় অংশগ্রহণের যে চিত্র, তাতেই দুর্বলা প্রকাশ পেয়েছে। ২০১৬-র প্লেনামের পরও আদতে দলের কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে স্বীকার করে নিয়েছে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব।
বিভিন্ন অংশের মানুষের ভিত্তি বাড়াতে হবে
২০১২ সালে পুনর্নবীকরণ রিপোর্ট অনুসারে শ্রমিক, খেতমজুর, ক্ষুদ্র কৃষক ৬০.৬৩ শতাংশ ( যা ২০২০-তে ছিল ৬০.৪৪ শতাংশ)। তফশিলি জাতি ২১.৯৩ শতাংশ এবং উপজাতি প্রায় ৪.৮৯ শতাংশ। সংখ্যার নিরিখে যথাক্রমে ৩৫.২৭০ এবং ৭৮৬০। বিশেষ পরিকল্পনা অনুসারে এই অংশের মানুষের মধ্যে দলের ভিত্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যে হিন্দি, উর্দু, নেপালি, সাঁওতালি-সহ বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে থেকে পার্টি সদস্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
নিয়মিত চেকআপ প্রক্রিয়ায় ঘাটতি
অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণির বিল্পবী পার্টির মৌলিক ফারাক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা না থাকলে কমিউনিস্ট কর্মীতে রূপান্তরিত হওয়া যায় না বলে মন্তব্য করা হয়েছে সাংগঠনিক রিপোর্টে। বলা হয়েছে, পার্টিতে নিয়মিত চেকআপ প্রক্রিয়ায় গুরুতর ঘাটতি প্রমাণিত হয়েছে। গত দুবছর ধরে রাজ্য কমিটি মাসিক ও ত্রৈমাসিক চেকআপের পদক্ষেপ নিলেও অল্প কয়েকটি জেলা কমিটি সেই রিপোর্ট দিতে পেরেছে। চেকআপ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে দলের অভ্যন্তরেই ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিপিএম-এর পার্টি চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন উদারবাদী সংস্কারে আগ্রাসী আক্রমণ ভারতীয় সমাজের ওপরে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। যার জেরে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বদল হয়েছে। বলা হয়েছে, সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে যেভাবে স্লোগান, কৌশল হওয়া উচিত ছিল তা করা হয়নি। সে কারণে গ্রামী জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ কমেছে। তাঁরা দূরে সরে গিয়েছেন। ফলাফল থেকেই প্রমাণিত গ্রামের গরিব-প্রান্তিক মানুষেরা আর সিপিআইএম-এর পিছনে নেই। পাশাপাশি ২০০৬ সালের ভোটে দেওয়া যে স্লোগান পরবর্তী সময়ে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের জেরে ধাক্কা খেয়েছিল তাকে ফের তুলে আনাটাও উচিত হয়নি। এছাড়াও বর্তমান সময়ের গভীর কৃষিসংকট, কৃষি আইন বাতিল, ন্যূনতম সহায়কমূল্য প্রাপ্তির ন্যায্য অধিকার, কৃষকদের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন চলছে, সেই সময় পুরনো স্লোগানে কৃষকরা সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন। ফলে তাঁরা সরে গিয়েছেন।