উনি কি করেননি, আমিই রায়দিঘিতে প্রার্থী হতে চাইনি, মমতাকে সাফ জবাব দেবশ্রী
এবার বিধানসভা ভোটে একাধিক নাম বাদ পড়েছে। প্রার্থী করা হয়নি বেশ কয়েকজনকে। যার মধ্যে রয়েছেন দেবশ্রী রায়। তাঁকে এবার প্রার্থী করা নাও হতে পারে, এমনটাই গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। সেই আশঙ্কা সত্যি হয়।
এবার বিধানসভা ভোটে একাধিক নাম বাদ পড়েছে। প্রার্থী করা হয়নি বেশ কয়েকজনকে। যার মধ্যে রয়েছেন দেবশ্রী রায়। তাঁকে এবার প্রার্থী করা নাও হতে পারে, এমনটাই গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। সেই আশঙ্কা সত্যি হয়।
তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায় যে রায়দিঘি থেকে এবার প্রার্থী করা হয়নি অভিনেত্রীকে। কিন্তু কেন তাঁকে প্রার্থী করা হল না তা নিয়ে জোর গুঞ্জন তৈরি হয়। অবশেষে সে প্রশ্নের জবাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন তাঁকে প্রার্থী এবার করা হল না প্রচারমঞ্চ থেকে ব্যাখ্যা দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ ছিল
দেবশ্রী রায়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ তাঁর কানে গিয়ে পৌঁছেছিল। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখেছেন। তাই দেবশ্রী রায়কে এবার টিকিট দেওয়া হয়নি। রায়দিঘির সভা থেকে দেবশ্রী রায় সম্পর্কে এমনটাই মন্তব্য করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও তিনি জানান, সত্য বাপুলির ছেলে শান্তনু বাপুলি তৃণমূলের টিকিট চেয়েও না পাওয়ায় বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন মন্তব্যের পরেই পালটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অভিনেত্রী।
আমিই রায়দিঘিতে প্রার্থী হতে চায়নি
আপাতত রাজনীতি থেকে মুখ ঘুরিয়েছেন দেবশ্রী রায়। অভিনয় জগতে ফের নিজের জায়গা তৈরি করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে প্রার্থী না করার প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন দেবশ্রী। তিনি এক বাংলা দৈনিককে জানিয়েছেন, ''ওঁর কথা উনি বলেছেন। কিন্তু 'প্রার্থী করিনি' বলা ঠিক নয়। বরং আমিই রায়দিঘিতে প্রার্থী হতে চাইনি।'' একই সঙ্গে দেবশ্রী বলেন, ''দিদিকে আদর্শ ভেবেই ওঁর হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলাম। বুঝতে পারিনি, ওঁর থেকে এত বড় পুরস্কার পাব। দিদিকে ধন্যবাদ।''কার্যত দেবশ্রী রায়ের কথায় স্পষ্ট তৃণমূলের প্রতি তাঁর ক্ষোভ।
পরপর দুবারের বিধায়ক ছিলেন দেবশ্রী রায়
রাজ্যে পরিবর্তনের বছর ২০১১ এবং তারপর ২০১৬ তেও রায়দিঘি থেকে জয়ী হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বলে পরিচিত দেবশ্রী রায়। দুবারই তিনি হারিয়েছিলেন এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে বলে পরিচিত কান্তি গাঙ্গুলিকে। যদিও এবার তাঁকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এর আগেই দেবশ্রী জানিয়েছিলেন, ''টোটো কেলেঙ্কারির নামে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। সে সব কথা নেত্রীকে জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনও কাজ না হওয়াতেই রায়দিঘি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'' এর পরে ১৫ মার্চ দেবশ্রী দল ছাড়ার চিঠি পাঠান তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে। বর্তমানে অলোক জলদাতাকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এদিন তাঁরই সমর্থনে প্রচার করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেবশ্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
জনপ্রতিনিধি হয়েও এলাকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি দেবশ্রী রায়। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে রায়দিঘিতে। পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে বিদায়ী তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে। সর্বশেষটি হল টোটো নিয়ে। যদিও দেবশ্রী রায় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগকে আমল দিতে চাননি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও দেবশ্রীর প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে জেলা তৃণমূলেও অসন্তোষ চরমে উঠেছিল বলেই সূত্রের খবর।
আক্ষেপ দেবশ্রীর কথায়!
ওই সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ছিল দেবশ্রীর আবেগ। তিনি জানিয়েছেন, অনেক কষ্টে ওই আসনে জয় এনেছিলাম। মানুষ আমায় দেখেই ভোট দিয়েছিলেন। জানি না এ বার কী হবে। আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। একই সঙ্গে ক্ষোভ নিয়েও আনন্দবাজারকে দেবশ্রী জানিয়েছেন, রায়দিঘিতে আমায় নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কোনও ক্ষোভ নেই। ক্ষোভ যেটা আছে, সেটা বরং তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে। অনেকের দুর্নীতি-তোলাবাজির প্রতিবাদ করায় এবং বুলবুল, আমফানের ত্রাণচুরি নিয়ে সরব হওয়ায় কর্মীদের একটা অংশ চায়নি, আমি ফের বিধায়ক হই। আমায় দিনের পর দিন গালিগালাজ করা হয়েছে। ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। রায়দিঘিতে গেলে প্রাণনাশ হতে পারে, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল।''
বিজেপির প্রার্থীকে নিয়ে মুখব খুলেছেন মমতা
এদিন সভায় মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে চলে আসে সত্য বাপুলির ছেলে শান্তনু বাপুলির প্রসঙ্গও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন শান্তনু বাপুলি তৃণমূলের টিকিট দাবি করেছিলেন। কিন্তু তিনি কলকাতায় থাকেন। তাই তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। এরপর বিজেপিতে গিয়ে উনি টিকিট পেয়েছেন। যা নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, কতগুলো ধার করা লোককে নিয়ে চলছে বিজেপি।