কলকাতাতেও লাভ জিহাদ! সোশ্যাল মিডিয়ায় দম্পতিকে খুনের হুমকি
কলকাতাতেও লাভ জিহাদের অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় দম্পতির ছবি ভাইরাল হতেই খুনের হুমকির অভিযোগ। সম্প্রতি অভিযোগও দায়ের হয়েছে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলে। শুরু হয়েছে তদন্ত।
কলকাতাতেও লাভ জিহাদের অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় দম্পতির ছবি ভাইরাল হতেই খুনের হুমকির অভিযোগ। সম্প্রতি অভিযোগও দায়ের হয়েছে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলে। শুরু হয়েছে তদন্ত।
লাভ জিহাদের অভিযোগে সারা দেশে ফেসবুকের প্রায় ১০০ প্রোফাইল তালিকাভুক্ত করা হয়। সেই তালিকায় রয়েছেন কলকাতার এক দম্পতিও। এই তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই খুনের হুমকি আসা শুরু হয়েছে ওই দম্পতির কাছে।
তালিকাটি ফেসবুক ও টুইটারে ভাইরাল হয় জানুয়ারিতে। সেখানে লেখা হয়েছিল, এটা হল একটি ফেসবুক প্রোফাইলের তালিকা। যেখানে হিন্দু মহিলারা লাভ জিহাদের শিকার হয়েছেন। তাদের স্বামীদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানানো হয়। আহ্বান জানিয়েছিল হিন্দু বার্তা নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। যদিও পরে এই পোস্টটি মুছে দেওয়া হয়।
মিলন মেলা গ্রুপে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় নামে অপর একজন নিজেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য হিসেবে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, লাভ জিহাদের নামে হিন্দু মহিলাদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। তাঁর আহ্বান, হিন্দুরা জাগ্রত হন। না হলে হোমল্যান্ড ভারতকে হারাতে হবে।
লাভ জিহাদের তথাকথিত তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর খুনের হুমকির পাশাপাশি ওই দম্পত্তিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় হেনস্থা শুরু হয়। তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। জানিয়েছেন এক সিনিয়র পুলিশ অফিসার।
কলকাতা পুলিশে করা অভিযোগে দম্পতি বলেছেন, একদল লোক তাঁদেরকে টার্গেট করেছে। তাঁদের খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা তাঁদের পক্ষে ক্ষতিকর বলেও মন্তব্য করেছেন ওই দম্পতি। ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন তাঁরা। যা ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
৪ জানুয়ারি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি তালিকা দেখতে পান তার গার্লফ্রেন্ড। বিভিন্ন গ্রুপ এবং ব্যক্তি বিশেষের তরফে তালিকাটি শেয়ার করা হয়েছিল। আতঙ্কিত হয়ে বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়। এর মধ্যে কোনও কোনও গ্রুপ নিজেদের পরিচয় হিসেবে সেভিং দ্য ওমেন হিসেবেও উল্লেখ করেছে। ৭ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন ওই দম্পতি।
ওই দম্পতির অভিযোগ, সংগঠিতভাবে তাঁদেরকে টার্গেট করা হচ্ছে। অপরিচিত ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি ম্যাসেজ দেওয়া হচ্ছে। এমন কী পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে মিশতেও বারণ করা হচ্ছে। কয়েকজনকে ব্লক করা গেলেও, বাকি প্রোফাইল থেকে হুমকি চলছেই বলে অভিযোগ।
উত্তর ২৪ পরগনার এক মহিলার বাবার অভিযোগ, তাঁর মেয়ের নামও এই তালিকায় রাখা হয়েছে। যদিও সেটার কোনও ভিত্তি নেই। তাঁর মেয়ে একটি নামকরা তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। যদি হুমকি চলতে থাকে, তাহলে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর নামও রয়েছে এই তালিকায়। তাঁর অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়া তিনি বিশেষ একটা ব্যবহার করেন না। তাঁর পুরনো বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে জড়িয়ে তাঁর নাম লাভ জিহাদের তালিকায় রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী। পুরনো বয় ফ্রেন্ডের সঙ্গে তিন বছরের সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছে ওই ছাত্রী। তবে এখন সেই সম্পর্ক নেই। তবে কেন এই তালিকা ভুক্তি তা নিয়ে প্রশ্ন করেছে ওই ছাত্রী।
বর্ধমানের মহম্মদ শাহিদ এবং তার গার্ল ফ্রেন্ডের নাম এই তালিকায় রয়েছে। এখনও কোনও হুমকি কিংবা হেনস্থার স্বীকার না হলেও, বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও আতঙ্কিত বলে জানিয়েছেন মহম্মদ শাহিদ। তাঁর প্রশ্ন, বহু জাতি বহু ধর্মের এই দেশে একটি মুসলিম ছেলের কি হিন্দু মেয়ে বন্ধু থাকতে পারে না।
নিজেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য বলে দাবি করা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, যখন কোন হিন্দু পুরুষ মুসলিম মহিলাকে বিয়ে করতে যায়, তখন তাকে মেরে ফেলা হয়। কোনও মিডিয়াই বিষয়টি নিয়ে কোনও কথাই বলে না। তালিকাটি তিনি তৈরি করেনি, শুধুমাত্র তিনি তা ফরওয়ার্ড করেছেন।
ভিএইচপির তরফে মুখপত্র সৌরিশ মুখার্জি বলেছেন, তারা ভালবাসার বিরুদ্ধে নন। কিন্তু বিষয়টি একটি বড় চক্রান্ত। যা হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধেই চক্রান্ত। কিন্তু তাঁরা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছেন না বলেই জানিয়েছেন।